উচ্চশব্দের অভিযোগে ‘বাউলের দ্রোহ’ অনুষ্ঠান বন্ধ করলেন প্রক্টর
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:১৫
উচ্চশব্দের অভিযোগে ‘বাউলের দ্রোহ’ অনুষ্ঠান বন্ধ করলেন প্রক্টর
জাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বাউলশিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তার ও সারাদেশে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গতকাল রোববার রাতে বিচারগানের আসরের আয়োজন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তবে অনুষ্ঠানটি জোরপূর্বক ও ‘মব সৃষ্টি’ করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।


গতকাল (রোববার) রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে ‘বাউলের দ্রোহের’ মঞ্চে গিয়ে আয়োজকদের গান বন্ধ করতে বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম। এসময় আয়োজকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।


প্রশাসন বলছে, গানের উচ্চ শব্দে কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও ঘুমের সমস্যা হচ্ছিল—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজকদের গানের আসর বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক হাসান নাঈম। তার সঙ্গেও কথা কাটাকাটি হয় প্রক্টরের। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রক্টর মব লিডারের মতো কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন সাউন্ড কমিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয় তখন কমিয়ে দেওয়া হয়। আমি পার্শ্ববর্তী চৌরঙ্গী এলাকা থেকে সাউন্ড পাইনি। তখন শেষ গান চলছিল। এ সময় প্রক্টর এসে মঞ্চে উঠে স্টপ ইট এভাবে বলে অনুষ্ঠানটা বন্ধ করে দেন। তখন আমরা কয়েকজন গেলাম উনার সঙ্গে কথা বলতে। এসময় তিনি আমার উপর চড়াও হোন, বললেন আপনি এখানে এদের সাথে কি করছেন? আমি অবাক হলাম, উনি কেন আমার ওপর চড়াও হচ্ছেন, আমি এখানে নানা কারনে থাকতে পারি। তারা আমাকে আমন্ত্রণ জানালে, আমি আসতে পারি। উনি চিৎকার করে কথা বলছিলেন, তখন আমি শুধু এতটুকু বলেছিলাম, আমি আপনার ছাত্র নয়, আমি আপনার সহকর্মী। আমি শুধু এতটুকুই বলব, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রক্টর শেষ বেলায় এসে এ ঝামেলাটা করলেন। তিনি মব লিডারের মতো কাজ করেছেন।’


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা এ প্রথম বলে দাবি করেছেন আয়োজকেরা—যেখানে একজন প্রক্টরকে মঞ্চে উঠে গান বন্ধ করতে দেখা গেল। আয়োজকদের একজন নবীন কিশোর গোস্বামী বলেন, ‘রাত নয়টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ ও প্রক্টর স্যারের কল পাওয়ার পর আমরা সাউন্ড কমিয়ে দেই। রাত ১০টার দিকে আউটপুটের সাউন্ডও বন্ধ করে দেই। তখন শুধু মনিটরের সাউন্ডে অনুষ্ঠান চলছিল।’


আয়োজক ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাত ৯টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপে গানের উচ্চ শব্দে পড়াশোনা ও ঘুমের সমস্যা হচ্ছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোস্ট করেন। রাত ১০টার দিকে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় আয়োজকদের শব্দ কমানোর এবং রাত ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ জানানো হয়। এরপর আয়োজকেরা শব্দ কমিয়ে অনুষ্ঠান চালাতে থাকেন।


অনুষ্ঠান বন্ধে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভিন্নভাবে প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন আয়োজকরা। গভীর রাতে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে গান বাজান কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন, এমন প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘রাত দেড়টা পার হয়ে গেলেও উচ্চশব্দে গান বাজনা থামানো হয়নি। শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে প্রশাসন, প্রক্টরকে অনেকবার জানানো হলেও তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আমিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী উপাচার্য বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেই। কিছুক্ষণের মধ্যে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যায়, এবং ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীর একটা জমায়েত হয়। একটি হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে প্রতীকী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আমরা কিছু বিক্ষিপ্ত গানবাজনা বাজিয়েছি।’


আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘কোনো ব্যানারের পক্ষ থেকে নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমি, আনজুম শাহরিয়ার ও মো. সিফাতুল্লাহ এমন প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’ আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘কোনো ব্যানারের পক্ষ থেকে নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমি, আনজুম শাহরিয়ার ও মো. সিফাতুল্লাহ এমন প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’


প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেওয়া আনজুম শাহরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠন আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক। মো. সিফাতুল্লাহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি)।


এদিকে অনুষ্ঠান চলাকালে আয়োজকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে জাকসুর কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতি এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘জনৈক কতিপয় ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়মের তোয়াক্কা না করে উচ্চস্বরে গান-বাজনা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামতকে তুচ্ছ করছেন। এই গভীর রাতে এমন আচরণ শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ তৈরি করছে। সত্যিই কি তারা শিক্ষার্থীদের ক্রোধ ডেকে এনে পাশের লেকের অতিথি হতে প্রস্তুত?’


এ নিয়ে চিশতি বলেন, ‘মহান আল্লাহতায়ালাকে অবমাননা করার জন্য সারাদেশের মুসলমান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছে এবং শক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে। কিন্তু গতকাল আমরা দেখেছি, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নাম করে একটি বিতর্কিত ইস্যুকে সামনে এনে একটি গোষ্ঠী বারবার উসকানি এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে গান-বাজনা করেছে।’


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শব্দ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। কারণ, তাদের পরীক্ষা চলছে, এখন পরীক্ষার মৌসুম। অনেক শিক্ষার্থী গানের উচ্চ শব্দে মাইগ্রেনের সমস্যার কথাও জানিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজকদের শব্দ কমাতে বলেছিলাম। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য অনুরোধ করলে তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় চান এবং সে সময়ের পর আমার অনুরোধে অনুষ্ঠান শেষ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং বাজে শব্দ ব্যবহার করেছে।’


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com