
‘বাংলাদেশে কম বয়সী শিশুদের সামগ্রিক পুষ্টি পরিস্থিতি এখনও আশঙ্কাজনক। শিশু ও নারীদের মধ্যে ভিটামিন, আয়রন, জিঙ্ক ও আয়োডিনের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ জিঙ্ক এবং ৪২ শতাংশ আয়োডিন ঘাটতিতে আক্রান্ত। অপুষ্টি ও ভিটামিন-খনিজ ঘাটতি বর্তমানে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই লবণ ছাড়াও অন্যান্য খাবারে এসব পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধকরণ (ফর্টিফিকেশন) জরুরি হয়ে পড়েছে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে খাদ্য সমৃদ্ধকরণের (ফুড ফর্টিফিকেশন) গুরুত্ব’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভোগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বাকৃবির কৃষি অনুষদের ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ কর্মশালা যৌথভাবে আয়োজন করে বাকৃবির প্রফেসর মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার (পিএমএইচসিএল) এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জিএআইএন)।
মূল প্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ আরও বলেন, ‘ফুড ফর্টিফিকেশন হলো খাদ্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। এতে খাদ্যের সঙ্গে এক বা একাধিক ভিটামিন বা খনিজ উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশিয়ে খাদ্যের পুষ্টিমান বাড়ানো হয়। বর্তমানে চালের ফর্টিফিকেশনে ছয়টি পুষ্টি উপাদান সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে— ভিটামিন এ, বি-১, বি-১২, ফলিক এসিড, আয়োডিন, আয়রন ও জিঙ্ক। এছাড়া ভোজ্যতেলে ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে নারী ও শিশুর ভিটামিন-ডি ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই বাধ্যতামূলক খাদ্য সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালু করেছে। যেমন— চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় লবণে আয়োডিন সমৃদ্ধকরণ চালু রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে গমের আটা, তেল, চাল ও চিনি সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও কেবল লবণ আয়োডিনেশন কার্যকর রয়েছে। গমের আটা বা অন্যান্য খাদ্যে সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।’
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন পিএমএইচসিএল-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. শরিফুল হক ভূঁইয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের দেড় শতাধিক শিক্ষক ও গবেষক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ কর্মশালায় ‘বাংলাদেশে বৃহৎ আকারের ফুড ফর্টিফিকেশন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিএআইএন-এর লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন অ্যান্ড ভ্যালু চেইনের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ। তিনি বলেন, ‘খাদ্য সমৃদ্ধকরণের জন্য আমাদের দেশে কোনো কেন্দ্রীয় হাব নেই। আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ায় এ নিয়ে কাজ করছি। গবেষণার জন্য দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যার একটি হলো বাকৃবি। আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফর্টিফিকেশন নয়, বরং বায়োফর্টিফিকেশন নিয়ে কাজ করছি। বায়োফর্টিফিকেশন সমৃদ্ধ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ডাল জাতীয় ফসলে জিঙ্ক ও আয়রন সমৃদ্ধ করার কাজ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে তেলে ভিটামিন-এ এবং লবণে আয়োডিন যোগ করা হচ্ছে। তবে সাধারণ ভোক্তা আসলে কতটুকু ভিটামিন-এ ও আয়োডিন পাচ্ছেন, সেটিও গবেষণার বিষয়।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘খাদ্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধকরণের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে জাতিকে সচেতন করা জরুরি, যাতে সবাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। সচেতনতার অভাবে আজ অনেক মানুষ ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ উদ্যোগকে সফল করতে আমার পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য পুষ্টিগুণ বিষয়ে সচেতনতা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প আলাদা আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পরিবর্তে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা হলে ফলাফল আরও দ্রুত ও কার্যকর হবে। উদাহরণস্বরূপ, ৩০টি আলাদা প্রকল্পের পরিবর্তে একই বিষয়ের ওপর ৩টি সমন্বিত প্রকল্প হাতে নিলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য সহজেই আসবে। উদ্যোগকে কার্যকর ও টেকসই করতে সরকারি পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।’
বিবার্তা/আমান/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]