
বিভিন্ন দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসময় তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটে। শিক্ষার্থীরা ভেতরে ঢুকে পড়ার কিছু সময় পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করে তাদের বের করে দেন। এ সময় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন।
শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়েছিল। এরই মধ্যে হাইকোর্ট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ের পশ্চিম পাশের সংযোগ সড়কটি বন্ধ আছে।
জানা যায়, শিক্ষার্থীরা রা অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের এক নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা গাড়ি ভাঙচুর চালালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটে।
এসময় সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেরও চেষ্টা করে।
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত-আহত শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য প্রকাশের দাবিতে এবং মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা দেরিতে স্থগিত ঘোষণা করার কারণে এই সরকারের এই উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রথমে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের তিন নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। পরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রের বাকি ফটকগুলোও বন্ধ করে দেন তারা।
এক পযার্য়ে একটি গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়তে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তাদের সঙ্গে ভেতরে পুলিশও ঢুকে পড়ে। পরে সচিবালয়ের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে তাদের উপরে চড়াও হয় পুলিশ এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে। কিছু সময় পর সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে সচিবালয়ের সামনে আসে তারা।
ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরো কিছু শিক্ষার্থী এই ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।
দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় এদিনের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে গভীর রাতে। এতে অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর পৌঁছাতে পারেনি। অনেকে এদিন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পৌঁছেও যান সময়মত।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থীর তানভীর বলেন, “গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত তিনটা বাজে যখন স্থগিত করেছে ততক্ষণের সব শিক্ষার্থীরা জানতেও পারেনি। সকালবেলা অনেকের পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে। এগুলো স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং একঘেয়েমি। আমরা এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই। তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না।”
মঙ্গলবার এইচএসসিতে রসায়ন (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্র, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র (মানবিক শাখা), ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র বা গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন দ্বিতীয় পত্র এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে এর আগে গত ১০ জুলাই কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
আর সংঘাতের পর কারফিউ জারির কারণে ১৭ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলার ঢাকা, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের আওতাধীন সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।
আর বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা আসে সোমবার গভীর রাতে। তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেইসবুক পেইজে এক অ্যাডমিন পোস্টে বলা হয়, “শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মাহফুজ আলমের সাক্ষাত হয়েছে। আজকের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা।”
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]