
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে নিহত রজনী ইসলাম (৩৬) এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
২২ জুলাই, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদীপুর গ্রামের কবরস্থানে জানাযা শেষে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
রজনী ইসলাম একই এলাকার জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। ব্যবসার কারনে জহুরুল ইসলাম তার পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরায় থাকেন। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে এস এম রুবাই ইসলাম (১৭) এবছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। অপর ছেলে এস এম রোহান ইসলাম (১২) উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী এবং ছোট মেয়ে এস এম ঝুমঝুম ইসলাম (১০) একই প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে। মেয়ে ঝুমঝুমকে আনতেই স্কুলে গিয়েছিলেন রজনী ইসলাম। ঝুমঝুম ইসলাম স্কুল ছুটি হওয়ার পরপরই ক্যান্টিনে চলে যাওয়ায় দূর্ঘটনা থেকে সে প্রাণে বেঁচে যায়। মা রজনী ইসলাম স্কুল ক্যাম্পাসে গিয়ে মেয়েকে না পেয়ে ফেরার সময় বিধ্বস্ত বিমানের লোহার টুকরোর অঘাতে রজনী ইসলাম মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হোন। তাকে উদ্ধার করে সামরিক হাসপাতাল সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে অসুস্থ থাকার কারনে ঘটনার দিন ছেলে এস এম রোহান ইসলামের স্কুলে যাওয়া হয়নি।
এর আগে নিহত রজনী ইসলামের মরদেহ ঢাকার সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে আজ মঙ্গলবার ভোরে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামে বাবার বাড়িতে নেওয়া হয় রজনী ইসলামের মরদেহ। সেখানে কিচ্ছুক্ষণ রাখার পর সকাল ৭টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার সাদীপুর গ্রামে শ^শুর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এসময় লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সের সাথে পরিবারের সদস্যরা সকলেই ছিলেন। গ্রামের বাড়িতে রজনীর মরদেহ পৌছালে গ্রামের লোকজন একনজর দেখার জন্য সেখানে ভিড় করেন। এসময় নিহতের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়লে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে।
রজনীর মরদেহ প্রথম শনাক্তকারী জহুরুল ইসলামের ভাগ্নে বুলবুল ইসলাম জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে জহুরুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে যুক্ত। দূর্ঘটনার দিন দুপুর ১টার দিকে ক্লাশ শেষ করে ঝুমঝুম ক্যান্টিনে ছিল। স্কুলে মায়ের সাথে তার দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। বিমান দূর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঝুমঝুমের খোঁজে পরিবারের সদস্যরা স্কুলে ছুটে যান।
নিহত রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম জানান, তিনি ব্যবসার কাজে চট্ট্রগ্রাম ছিলেন। বিমান দূর্ঘটনার খবর জানার পর দ্রæত প্লেনে ঢাকায় ফিরে আসি। পরিবারের সদস্যরা ঝুমঝুমকে স্কুল থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। কিন্তু তার মায়ের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করার একপর্যায়ে ভাগ্নে বুলবুল ফোন করে জানায় রজনীর মরদেহ সামরিক হাসপাতালে রয়েছে। দ্রæত সেখানে ছুটে যায়। একটু দূর থেকে শাড়ী দেখে চিনতে পারি স্ত্রী রজনীর মরদেহ।
তিনি আরও বলেন, যতটুকু দেখেছি তাতে রজনীর মাথার পেছনে আঘাত রয়েছে। শরীরের কোথাও পোড়া বা আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে বিমান দূর্ঘটনার সময় বিমানের কোন অংশ তার মাথায় আঘাত করে। এটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। মেনে নেওয়া কষ্টকর। আবার মেনে না নিয়েও উপায় নেই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জহুরুল ইসলামের বড় ভাই আহসানুল ইসলাম আহাদ বলেন, রজনী ৩ছেলে মেয়ের পড়াশোনার বিষয়ে খুবই আন্তরিক ছিল। ঝুমঝুমকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েই দূর্ঘটনায় পড়েন। তার মাথার পেছনে ক্ষতদেখা গেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিতত দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ সারা দেশে রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লাশ দাফন হয়েছে।
বিবার্তা/শরীফুল/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]