মেধা, মননশীলতার আলোয় আলোকিত ইআবি
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৫৫
মেধা, মননশীলতার আলোয় আলোকিত ইআবি
মো. হাফিজুল ইসলাম হাফিজ
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশে মূল ধারার ইসলামি শিক্ষা প্রচার ও প্রসার এবং আলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থা বিস্তারের লক্ষ্যে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা যুগের শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ। এদেশের আলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করণের লক্ষ্যে আলেম সমাজ ও ইসলাম প্রীতি মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অনন্য উপহার এই বিশ্ববিদ্যালয়।


প্রতিষ্ঠার পর প্রায় এক দশক অতিবাহিত হলেও নানান সীমাবদ্ধতা ও সংকটে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি তার লক্ষ্য মাত্রার কাঙ্ক্ষিত অর্জনে অনেকটাই ব্যর্থ। তবে সকল সমস্যা, সংকট ও সীমাবদ্ধতাতে জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মান অর্জনে আলোকবর্তিকা রূপে আলো ছড়াচ্ছে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ স্যার।


গত আট বছরে যেটা সম্ভব হয়নি মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরের যোগদানের ১ বছরেই সেগুলো সম্ভব হয়েছে কেবল তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, দায়িত্বশীলতা ও একাগ্রতার জন্য।দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক দক্ষতা, মেধা ও মননশীলতার সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নতি করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।


মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরের গত এক বছরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্জন নিম্নে সবিস্তারে আলোকপাত করা হলো:


*বিশ্ববিদ্যালয়টি গত আট বছরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে সকল সংবিধি, বিধি, প্রবিধান এবং নীতিমালার প্রয়োজন তার কোনোটাই প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়নি। মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর যোগদানের পরপরই সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বিধিবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বিধি বিধান সম্পর্কিত বিষয়ে অভিজ্ঞদের দিয়ে একাধিক কমিটি করে দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় বিধি বিধান প্রণয়ন ও অনুমোদন করেই সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন। যোগদানের প্রথম ৮ মাসের মধ্যে শিক্ষক কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত সংবিধি-২০২৩ প্রণয়ন ও অনুমোদন, পরিবহন নীতিমালা, অধিভুক্ত মাদ্রাসার গভর্নিং বডি ও এডহক কমিটি সংক্রান্ত প্রবিধান, অধিভুক্ত মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদান, অধিভুক্তি ও অধিভুক্তি নবায়ন সংক্রান্ত প্রবিধান, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল প্রবিধান এবং এমফিল-পিএইচডি নীতিমালা প্রণয়ন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।


*ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ অধিভুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষা গ্রহণ। বিশ্বমহামারি করোনার প্রভাবে মাদ্রাসাগুলোর ফাজিল ও কামিল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মারাত্মক সেশনজটের কবলে পড়ে। মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কে সেশনজট মুক্ত করার ঘোষণা দেন। সেই লক্ষ্য অর্জনে দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ৩ টি কামিল পরীক্ষা- ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ এর ফলাফল ২২ জুন, ২০২৩ এ প্রকাশ করা হয়। মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ স্যারের যোগদানের এক বছরে মোট ৫ টি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে যথাক্রমে: ফাজিল ২ টি, অনার্স ১ টি, কামিল ২ বছর মেয়াদি ১ টি এবং কামিল ১ বছর মেয়াদি ১টি। পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে বিশাল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশ করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হোন। ইতোমধ্যে গ্রহণকৃত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ৪ টির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের মূল সনদ বিতরণের লক্ষ্যে মূল সনদ মুদ্রণের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে।


*দীর্ঘদিন শূন্য থাকা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং রেজিস্ট্রারসহ অতি প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদে যোগ্য ও দক্ষ লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে অচলাবস্থার পরিবর্তন। একই সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ গ্রহণ।


*ধার করা সিলেবাস বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন ও অনুমোদন বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। মাদ্রাসাগুলোতে নিজস্ব খরচে আরবি ভাষা কোর্স চালু করার আদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরতদের আরবি ভাষায় দক্ষ করার জন্য আরবি ভাষা কোর্স চালুর উদ্যোগ গ্রহণ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত মাদ্রাসায় ‘‘এ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ও ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব’’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ।


*কোন ফাইল বা নথি কারো টেবিলে ৩ দিনের বেশি থাকলেই শোকজ দেওয়ার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে অফিসের কাজে গতি সঞ্চার এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দূর করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। বিশ্ব মহামারি করোনা পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ মাদ্রাসার অধিভুক্তি/অধিভুক্তি নবায়নের মেয়াদ শেষ হয়। বহু মাদ্রাসার নবায়ন মেয়াদ একই সময়ে শেষ হওয়াতে উপাচার্যের যোগদানের প্রায় ১ বছর পূর্ব হতে নবায়ন সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হয়। যার ফলে মাদ্রাসাগুলো তাদের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে। মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর যোগদানের পরপরই মাদ্রাসাগুলোর এই ভোগান্তি নিরসনের লক্ষ্যে দ্রুত অধিভুক্তি নবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মাত্র ৬ মাসের মধ্যে সকল মাদ্রাসার অধিভুক্তি নবায়ন সম্পন্ন করে মাদ্রাসাগুলোর ভোগান্তি লাঘব করতে সমর্থ হোন।


*দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগত সেবা প্রত্যাশীদের জন্য একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুসজ্জিত অতিথি কক্ষ স্থাপন করা মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরের এক অনন্য উদ্যোগ। অতিথি কক্ষ নির্মাণের ফলে সারাদেশ থেকে ভ্রমণ করে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সেবা প্রত্যাশীদের ফ্রেশ হওয়া এবং বিশ্রামের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।


*সারাদেশের ফাযিল কামিল মাদরাসার শিক্ষার মানোন্নয়োণে অধ্যক্ষদের সাথে দফায় দফায় জুম মিটিং ও সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা-সেমিনার করেছেন। সারাদেশে একসাথে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে বুখারীর সবক প্রদানের সূচনা করেছেন। তিনি আলিয়া মাদ্রাসায় আল ফিকহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ নামে নামে নতুন করে একটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করেছেন। আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে পূর্বে চালুকৃত বিষয়গুলোতে নতুন নতুন কোর্স চালুর মাধ্যমে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের যোগ্য আলিম হওয়ার পাশাপাশি বিসিএসসহ যে কোন চাকরির জন্য যেন যোগ্য হতে পারে সেই প্রচাষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।


*ফাযিল ও কামিল স্তরে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ বিশেষ করে বিভিন্ন সেক্টরের চাহিদা অনুযায়ী কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা নীতিমালার খসড়া প্রণায়ন, এমফিল-পিএইচডি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ইত্যাদি। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের আরবি প্রভাষক হওয়ার পথে বিদ্যমান জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ। তিনি আলিয়া মাদরাসায় আল ফিকহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ নামে নামে নতুন করে একটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করেছেন। আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে পূর্বে চালুকৃত বিষয়গুলোতে নতুন নতুন কোর্স চালুর মাধ্যমে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের যোগ্য আলিম হওয়ার পাশাপাশি বিসিএসসহ যে কোন চাকরির জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।


*নিয়মিত সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইন কানুন প্রণয়ন ও অনুমোদন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা, সংকট ও সীমাবদ্ধতা হতে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন কমিটি পুনর্বিন্যাস, পুনর্গঠন এবং কমিটির কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরের এক অনন্য উদ্যোগ।


*বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেস্ব ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্বপ্নের শুভসূচনা। একই সাথে স্থায়ী ক্যাম্পাসে অধিগ্রহণকৃত ভবন, গাছপালা অপসারণের জন্য পিপিআর অনুযায়ী টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন। এছাড়া আরবি ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বিদেশি ডেলিগেটরা স্থায়ী ক্যাম্পাস সশরীরে পর্যবেক্ষণ করেছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইনিস্টিউটের কাজ শুরু করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


*মসজিদে নিজের ইমামতিতে জামাতের সূচনা, পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে খতম তারাবি ব্যবস্থা এবং অস্থায়ী ইমাম নিয়োগ এক মহতী উদ্যোগ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ নং ভবনের নীচ তলায় ওযুখানা নির্মাণ করা হয়েছে।


মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই বরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক তার নিজ মেধা ও মননশীলতার মাধ্যমে দেশের আলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগীকরণে লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টার অব্যাহত রেখেছেন। যার সুফল ইতোমধ্যে সারা দেশের ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পেতে শুরু করেছে।


বিবার্তা/সউদ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com