বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালে রিশান ফরাজীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনই পুলিশ জানিয়েছিল, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিশানকে আদালতে তোলা হবে। রিমান্ডও চাওয়া হবে।

শুক্রবার সকালে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত রিশান ফরাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি, তদন্ত মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিশান ফরাজীকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত রিশান ফরাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ১২ জন অভিযুক্ত রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া এ মামলার তিনজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অভিযান চালিয়ে মামলার তিন নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া সব আসামি এবং মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কারণে সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানত। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিল। এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে যা যা প্রয়োজন, তা সম্পাদনে খুনিদের সব ধরনের মিটিংয়ে অংশ নেয় মিন্নি। মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আগে ও পরে খুনিদের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনও হয়েছে।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দু-একটি গণমাধ্যম রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

রিফাত হত্যাকাণ্ড মাদকের কারণে হয়নি দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডটি কোনো মাদকের কারণে ঘটেনি। ঘটেছে ব্যক্তিগত জিঘাংসার কারণে। মাদক বা অন্য কোনো ইস্যুর কথা উঠলে মামলাটির ফোকাস ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে পারে। এ মামলায় বাদী যাদের হত্যাকারী দাবি করেছে, আমরা তাদের প্রায় সবাইকেই ধরেছি এবং কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না। এ পর্যন্ত আমরা এজাহারনামীয় আটজনকে গ্রেফতার করেছি। সর্বমোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতএব এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।

এ মামলায় নয়ন বন্ডদের যারা ছত্রছায়া দিয়েছে, তাদের কী হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, যাদেরই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে মিন্নি যে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত, সেটি বুধবার আদালতকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় মূল নায়ক নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে মিন্নি পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

বুধবার বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হয় মিন্নিকে। পুলিশ মিন্নির সাত দিনের রিমান্ড দাবি করে। তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির জড়িত থাকার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ তারা পেয়েছেন। এছাড়া এজাহারভুক্ত একজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মিন্নি এ হত্যা পরিকল্পনায় ছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

বিবার্তা/রবি