গোয়ালন্দে
নুরাল পাগলের দরবারে হামলা : নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:৪৪
নুরাল পাগলের দরবারে হামলা : নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগ ব্যর্থ করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবার ও বাড়িতে হামলা চালিয়েছে তৌহিদী জনতা।


শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আনছার ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষুব্ধরা দরবারে গিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে কবর থেকে মরদেহ তুলে পদ্মার মোড়ে এনে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।


এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আহত হন পাঁচ পুলিশ সদস্য ও প্রশাসনের অন্তত দুজন কর্মকর্তা।


এ ঘটনায় নুরু পাগলের ভক্ত মো. রাশেল মোল্লা (২৮) নিহত হয়েছেন। তিনি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব তেনা পঁচা জুটমিস্তি পাড়ার আজাদ মেম্বারের ছেলে। রাশেল গুরুতর আহত অবস্থায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, নিহত রাশেল নুরাল পাগলের শিষ্য ছিলেন।


উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের মৃত্যু হয়। পরদিন তাঁকে গোয়ালন্দ দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করা হয়। এ নিয়ে ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তাদের অভিযোগ, বেদিতে দাফন ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী। এ দাবিতে কবর স্বাভাবিক করার জন্য আল্টিমেটামও দেওয়া হয়।


গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি ঘোষণা দেয়, ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কবর স্বাভাবিক না করা হলে ১২ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর “মার্চ ফর গোয়ালন্দ” কর্মসূচি পালন করা হবে। এর আগে শুক্রবার জেলার পাঁচ উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দেওয়া হয়।


পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং রাজবাড়ী জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অ্যাড. নুরুল ইসলামের উপস্থিতিতে দরবার কর্তৃপক্ষ কবর নিচু করা, রঙ পরিবর্তন ও “ইমাম মেহেদী দরবার শরীফ” লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের কথা ঘোষণা করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা এতে সন্তুষ্ট হয়নি। জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দরবারে হামলা চালায় তারা।


ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ফায়ার সার্ভিস অগ্নিনির্বাপণে কাজ শুরু করে। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গোয়ালন্দ শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।


রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা এড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে বিক্ষুব্ধ জনতার হঠাৎ হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়নি।”


এদিকে, হামলার ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।


বিবার্তা/মিঠুন/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com