চাঁদা না দেয়ায় বন্ধ সরকারি হাসপাতালে নির্মাণ কাজ
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৫, ১২:২১
চাঁদা না দেয়ায় বন্ধ সরকারি হাসপাতালে নির্মাণ কাজ
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

স্থানীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা পরিশোধ না করায় বন্ধ হয়ে আছে ২৫০ শয্যার রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালে নির্মাণ কাজ। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনী ও গণপূর্ত বিভাগ বরাবর লিখত অভিযোগ দিয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।


সম্প্রতি রাজবাড়ীর অফিসার ক্লাবে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের সভাপতিত্বে উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এমন অভিযান তুলেছেন গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।


জেলা প্রশাসক হাসপাতাল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজ এসে হাসপাতালের লিফটের ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা না দিলে বিভিন্ন সময়ে তারা হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এতে হাসপাতালের লিফটের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে। একাধিকবার আমাদের নিয়োজিত ঠিকাদার চাঁদা পরিশোধ করেছেন। এক গ্রুপ চাঁদা নিয়ে যায়, আরেক গ্রুপ আসে। ঠিকাদার কতজনকে চাঁদা দেবে। এর আগে হাসপাতালের এসির তার, আউটডোরের জিনিসপত্র খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা।


তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজ শ্রেণির লোক রয়েছে তারা বিভিন্ন সময়ে এসে হাসপাতালের নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়। তারা এসে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ঠিকাদারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।


রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ্য করা হয় চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি লিফটের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় দুপুরে ৮ থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী লোকজন প্রকল্প সাইটে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করেন। সেই সাথে মূল্যবান মালামাল নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। একই সাথে চাঁদা দেওয়া না হলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে চলে যায়। আগামী ২ মাস কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেন। যার অনুলিপি জেলা প্রশাসক, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ইনচার্জ, রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে ।


এর একদিন পর ২১ জানুয়ারি গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ মন্ডল, কাজের সাইটে মজুদকৃত মালামাল ও লোকবলকে ডাকাত ও সস্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরাপত্তার জন্য সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আরেকটি চিঠি দিয়েছিলো।চিঠিটির অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আরও কয়েকটি দপ্তরে দেয়া হয়ে ছিল।


এ বিষয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের নির্মাণকাজের ঠিকাদারের কাছে চাঁদাবাজির বিষয়টি উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উঠেছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।


রাজবাড়ীর নাগরিক কমিটির সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝন্টু বলেন, রাষ্ট্রের সবচেয়ে মানবিক জায়গা হলো হাসপাতাল। সেখানে কাজের জন্য চাঁদা চাওয়া রাষ্ট্রের জন্যই হুমকি। রাষ্ট্রের একমাত্র দায়িত্ব হলো নাগরিকের নিরাপত্তা প্রদান করা। সরকারের সাথে যারা জড়িত তাদের উচিত ছিল বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিও করেন তিনি।


উল্লেখ্য, রাজবাড়ী জেলা সদরে রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৮ সালে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮ তলা পর্যন্ত হাসপাতালের লিফট স্থাপনের কাজ চাঁদা দাবির কারণে ব্যাহত হচ্ছে।


বিবার্তা/মিঠুন/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com