গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহতদের বাড়িতে কান্নার রোল
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১১:১৬
গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহতদের বাড়িতে কান্নার রোল
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

'তোমরা কি আমার বাবারে আইনে দিতে পারবা? কী দোষ করছিল আমার বাবা। আমার বাবাকে কেউ কোনো দিন খারাপ কইতে পারে নাই। ও তো কোনো দল করত না। ওর কেন এমন হবে’—বলে বিলাপ করতে করতে জ্ঞান হারান নিহত সোহেল মোল্লার মা লাইলী বেগম।


চোখেমুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর পর তিনি আবারও বলতে থাকেন, ‘ওরে বাবারে, আমার কবুতর নেই রে। ওরে তোমরা কেন মাইরা ফেলাইলা। তোমাগোও তো মা আছে, মা কইয়া ডাকো না, আমারে মা কওয়ার (বলার) আর কেউ নাই। আমাগো বাড়ি গোপালগঞ্জ হইতে পারে, আমরা তো কোনো দিন রাজনীতি করি না বাবা। আমার একটা কবুতর, তার কেন এই হইল।’


বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের মিয়াপাড়া এলাকায় নিহত সোহেল মোল্লার ভাড়াবাসায় গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। ১৬ জুলাই, বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘাতে নিহত চারজনের একজন সোহেল মোল্লা।


তিনি টুঙ্গিপাড়া পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাবাড়ির মো. ইদ্রিস আলী মোল্লার একমাত্র সন্তান এবং গোপালগঞ্জের চৌরঙ্গিতে কেরামত প্লাজায় মোবাইলের দোকান ছিল তাঁর। মিয়াপাড়া এলাকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় সোহেল মোল্লা মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন।


মিয়াপাড়ার ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার কক্ষে বসে রয়েছেন সোহেলের ষাটোর্ধ্ব বাবা ইদ্রিস আলী (ঠান্ডা) মোল্লা। বয়সের ভারে কথা বলতেই কষ্ট হয় তাঁর। ছেলের শোকে বারবার বলছেন, ‘আমার ছেলে কী করেছে, কী অপরাধ ছিল তার, কেন তাকে গুলি করে মারা হলো। আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’


এ সময় তাঁর পাশে থাকা সোহেলের মামা জাহিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনে সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। আমি আসতে আসতে হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়ি নিয়ে আসছে।’


তবে নিহত সোহেলের কোনো ময়নাতদন্ত বা ডেথ সার্টিফিকেট হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়নি। তাঁর লাশ হাসপাতাল থেকে এনে রাতে গোপালগঞ্জের বাসায় নিচে রাখা হয়। আজ সকাল ৭টায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পূর্ব টুঙ্গিপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।


নিহত সোহেলের স্ত্রী নিশি বলেন, ‘আমার সন্তানদের এতিম করা হলো কী অপরাধে? আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করত না। ব্যবসা আর বাসার বাইরে তার আর কোনো কিছুই ছিল না। প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমার শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে বলে যেত। আর কোনো দিনই সে তার মায়ের কাছে বলে বের হতে পারবে না’, এই বলে কাঁদতে থাকেন নিশি।


পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বাসা থেকে বের হয়ে সোহেল দোকানে আসেন। দুপুরে সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি নিজের মোবাইল ফোনে সে সময়কার পরিস্থিতি ধারণ করতে গিয়ে নিহত হন। সোহেলের চার বছর ও আট মাস বয়সী দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে।


বিকেলে টুঙ্গিপাড়া পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সোহেল মোল্লার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর কবরস্থানটি পলিথিন দিয়ে ঢাকা রয়েছে। আর স্বজনেরা বসে হাহাকার করছেন।


এ সময় কথা হয় সোহেল মোল্লার চাচা খলিলুর রহমান মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সোহেল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম একটি ছেলে ছিল। রাজনীতি তো দূরের কথা, কোনো প্রকার ঝামেলায় জড়াত না। এলাকার একটি মানুষও সোহেলকে খারাপ বলতে পারবে না। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খবর পাই, আমাদের সোহেল আর আমাদের মাঝে নেই। আজ সকালে নিজ বাড়িতে সোহেলের লাশ দাফন করার পর তার বাবা-মা গোপালগঞ্জের সেই ভাড়াবাসায় চলে যায়।’


বিবার্তা/শান্ত/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com