
দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে চোর সন্দেহে বাড়িতে আটকে রেখে একই এলাকার মাদকসেবী বাবলু (৩২) কে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার মাদক ব্যবসায়ী রাব্বি ও মিম দম্পতির বিরুদ্ধে। এসময় পার্শ্ববর্তী পাঁচবিবি উপজেলার মকন্দপুর কামার পড়া এলাকার আরেক মাদকসেবী বিজয়কে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে পুলিশ।
এঘটনায় হত্যার সাথে জড়িত অভিযোগে রাব্বির শাশুড়ী লিনা পারভীন (৪০) ও একই এলাকার জিয়া উদ্দিন (২৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সন্ধ্যার পরে এলাকাবাসী মাদক ব্যবসায়ী রাব্বির ও তার স্ত্রীর ফাঁসি চেয়ে থানায় আসে। এসময় ওসি মোঃ নাজমুল হক সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে তারা থানা ত্যাগ করে।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল পাঁচটার দিকে পৌর শহরের দক্ষিণ বাসুদেবপুর (মালেপাড়া) এলাকার রাব্বির বাড়িতে এই হত্যার ঘটনা ঘটে।
মাদক ব্যবসায়ী রাব্বি পৌর শহরের দক্ষিণ বাসুদেবপির (মালেপাড়া) এলাকার আব্দুল গনির ছেলে। তার স্ত্রী মিম বেগম দীর্ঘ দিন থেকে মাদকের ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
আটক আসামি উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের মিজানুর রহমানের স্ত্রী লিনা পারভীন ও পৌর শহরের দক্ষিণ বাসুদেবপুর এলাকার হাতেম আলীর ছেলে জিয়া উদ্দিন। আর মাদকসেবী পাঁচবিবি উপজেলার মকন্দপুর কামার পাড়া এলাকার লিপেন কর্মকার এর ছেলে বিজয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাব্বির বাড়ির ভিতরে পশ্চিম দিকে গোয়াল ঘরে নিহত বাবলুর মরদেহ পরে আছে এবং আরেক মাদকসেবী পার্শ্ববর্তী পাঁচবিবি উপজেলার মকন্দপুর কামার পাড়া এলাকার লিপেন কর্মকার এর ছেলে বিজয় বসে আছে।
এসময় নিহত বাবলুর মা ও ভাবি বলেন, রাব্বির বাড়ি থেকে না কি সোনা ও টাকা চুরি হয়েছে। তাই চোর সন্দেহে গতকাল জোরপূর্বক আমাদের বাড়ি থেকে বাবলুকে রাব্বির বাড়িতে ডেকে এনে মারপিট করে। আজ আবার বাবলুর বাড়ি গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে কোন কিছু না পেয়ে আবার বাবলুকে রাব্বির বাড়িতে নিয়ে এসে বেদরক মারপিট করে।
বাবলুর মা আরও বলেন, আমার ছেলেকে আজ আবার মারপিট করতেছে এমন খবর পেয়ে থানায় পুলিশের কাছে যায়। পরে পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে আমার ছেলেকে মারপিট করেছে দেখে রাব্বিকে হাসপাতালে ভর্তির কথা বলে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে শুনতে পারি বাবলু মারা গেছে। পরে আবার পুলিশ এসে মরদেহ থানায় নিয়ে যায়। এর মধ্যে রাব্বি ও তার স্ত্রী বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আমরা এই হত্যার বিচার চাই। আমার মাদক সেবন করলেও কোন দিন চুরি করে নাই।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন যুবক বলেন, দুপুরের পরে পুলিশ রাব্বির বাড়িতে শেষে বাবলু ও বিজয়কে দেখতে পায়। পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের উদ্ধার করে নিয়ে গেলে হয়তো বা এই হত্যার ঘটনা ঘটতো না। পুলিশ মাদকসেবীদের উদ্ধার না করা এবং রাব্বি ও তার স্ত্রী কে গ্রেফতার না করায় এই হত্যা ঘটেছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। রাব্বি ও তার স্ত্রী দীর্ঘ দিন থেকে মাদকের ব্যবসা করে এবং এই হত্যার বিচার দাবি করছে এলাকাবাসী।
ঘটনা স্থলে হাকিমপুর থানার এসআই অশ্বিনী রায় বলেন, হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ নাজমুল হক মহোদয়ের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি দুইজনকে চোর সন্দেহে বাড়িতে আটকে রেখে মারপিট করেছে। তাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমি তাৎক্ষণিক রাব্বিকে বলি দুই জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে এবং বাড়িতে চুরি হয়েছে মর্মে থানায় অভিযোগ দেন। এরপর আমি চলে আসি। তার ২০-২৫ মিনিট পরে শুনতে পারি একজন মারা গেছে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওসি মহোদয়ের উপস্থিতিতে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে মরদেহ থানায় নিয়ে আসি।
এ বিষয়ে হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ নাজমুল হক বলেন, দুপুরের পরে জানতে পারি মালেপাড়া রাব্বির বাড়িতে চোর সন্দেহে আটকে রেখে দুই জন কে মারপিট করেছে। এমন সংবাদে তাৎক্ষণিক ইমার্জেন্সি অফিসার এসআই অশ্বিনী রায়সহ ফোর্স ঘটনা স্থলে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ৩০-৪০ মিনিট পরে জানতে পারি একজন মারা গেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। এসময় হত্যার সাথে জড়িত অভিযোগে লিনা পারভীন ও জিয়া উদ্দিন কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি। মাদকসেবী বিজয়কে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করায়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে এবং মামলা দায়ের করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকাবাসী সন্ধ্যার পরে মাদক ব্যবসায়ী রাব্বি ও তার স্ত্রীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে থানায় আসে। আমি নিজে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে আশ্বাস দিলে তারা চলে যান। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
বিবার্তা/রব্বানী/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]