সিংগাইরে
কালের সাক্ষী হয়ে কৃষকের আদি সেচযন্ত্র 'দোন' এখনও ব্যবহৃত
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ২২:১৯
কালের সাক্ষী হয়ে কৃষকের আদি সেচযন্ত্র 'দোন' এখনও ব্যবহৃত
সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কালের বিবর্তনে আধুনিক সেচযন্ত্রের ভিড়ে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে গ্রাম বাংলার কৃষকদের ঐতিহ্যবাহী আদি সেচযন্ত্র “দোন”। শত শত বছর ধরে মানুষ কৃষি কাজে পানি সেচের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো এই দোন পদ্ধতি। যার সাহায্যে ফসলের ক্ষেতে বিশেষ করে ধান চাষে অতি সহজে সেচ দেয়া যেতো ।


সারাদেশে প্রায় বিলুপ্ত হলেও মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের খেলেশ্বর গ্রামের কৃষক খৈমুদ্দিন তার ৩ বিঘা ধান ক্ষেতে এবং ছয়আনী গ্রামের প্রবীন কৃষক বহর আলী তার ১ বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে যাচ্ছেন "দোন" দিয়ে।


স্থানীয় কৃষকরা জানান, এভাবে পানি সেচ দিলে খরচ অনেক কম হয়। ক্রস আকারে দুটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়। এক প্রান্তে দোনের মাথা অন্য প্রান্তে মাটির ভরা (ওজন) দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে পানি উঠে আসে। এভাবে অনবরত পানি সেচ দিলে দ্রুত সেচের কাজ হয়ে যায়। আম অথবা কাঁঠালজাতীয় গাছের মাঝের অংশের কাঠ কেটে নিয়ে তার মাঝ খানে খোদাই করে ড্রেন তৈরী করে পানি সেচ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। কোন কোন স্থানে নারিকেল, তাল, সুপারি গাছ দিয়েও এ দোন তৈরী করা হতো। আবার কেউ কাঠের তক্তা দিয়েও এই দোন তৈরী করতো।


দোন দিয়ে পানি সেচ দেয়া অবস্থায় কৃষক মো. বহর আলী (৭৪) জানান, ৩০—৪০ বছর আগেও এ এলাকার সকল কৃষক বোরো ধান খেতে দোন দিয়ে পানি সেচ দিত। সবাই বন্ধ করে দিলেও তিনি ঐতিহ্য হিসেবে আজও তার ১বিঘা জমিতে দোনের সাহায্যে পানি সেচ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে একটু পরিশ্রম হলেও সেচ খরচ নেই। এতে ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক কম হয় বলেও তিনি জানান ।


স্থানীয় বয়স্করা জানান, শ্যালো, ডিপসহ বিভিন্ন ধরণের আধুনিক সেচযন্ত্র আসায় সেই প্রাচীন যুগের কৃষকদের তৈরি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দোন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আগেকার দিনে ফসলি জমিতে পানি সেচের জন্য টিন ও বাঁশের অথবা টিন ও কাঠের তৈরী দোন ব্যবহার হতো। নদী, খালবিল বা জলাশয় থেকে কৃষকরা ফসলি জমিতে পানি সেচের জন্য এই দোন ব্যবহার করতো। উঁচু— নিচু জমিতে পানি সেচ দিতে দোন ছিলো অতুলনীয়। গ্রাম বাংলার কৃষকদের আবিষ্কার ছিলো এই দোন।


সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, আধুনিক কৃষিতে এখন আর কেউ দোন দিয়ে পানিসেচ দেয় না। সিংগাইরে এর ব্যবহারের বিষয়টি আমার জানা নেই।


তিনি আরও বলেন, এক সময়ে সারাদেশে খাল-বিল, নদী-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাধার থেকে কৃষকেরা দোন দিয়ে জমিতে পানি সেচ দিত। এতে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার হওয়ায় পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ত না। ফসলের উৎপাদন খরচও হতো অনেক কম।


বার্তা/হাবিবুর/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com