মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা, মূলহোতাসহ গ্রেফতার ২
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৫৩
মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা, মূলহোতাসহ গ্রেফতার ২
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীতে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বাবাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মূল আসামিসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।


শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ পারভেজ।


গ্রেফতার কৃতরা হলেন, আকরাম হোসেন (৫২) হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. নান্টু (২৮) তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে এবং তার সহযোগী খোকন মিয়া (২৮) একই এলাকার আব্দুস সাত্তার মিয়ার ছেলে।


র‌্যাব জানায়, বুধবার নগরীর তালায়মারি শহীদ মিনার এলাকায় প্রধান আসামি নান্টু ও তার সহযোগীরা মিলে এসএসসি পরীক্ষার্থীর বাবা আকরাম হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন নিহতের পরিবার। মামলায় প্রধান আসামি নান্টুসহ বিশাল, তাসিন, খোকন, অমি, শিশিরকে আসামি করা হয়েছে।


র‌্যাব আরও জানায়, মামলার পর থেকে র‍্যাবের একটি দল আসামিদের গ্রেফতারে মাঠে অভিযান পরিচালনা শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার রাত ৮টার নওগাঁ সদর এলাকার আড়ারাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি নান্টু এবং তার সহযোগী তিন নম্বর আসামি খোকন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে একজন ভ্যান চালকের বাসায় আশ্রয় নেয়। তার ভ্যানেই তারা সেখানে যায়। গ্রেফতার আসামিদের বোয়ালিয়া মডেল থানার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।


এর আগে শুক্রবার বিকেলে নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রুমেল হোসেন (২৫) নামের সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


গ্রেফতার রুমেল মামলার প্রধান আসামি নান্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহমেদ।


তিনি আরও জানান, রুমেল এজাহারভুক্ত না হলেও, তদন্তে তাঁর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আগেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে একটি মামলা রয়েছে।


গত বুধবার রাতে রাজশাহীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আকরাম হোসেন (৫২) ও তাঁর ছেলে ইমাম হাসান হামলার শিকার হন। মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর এ হামলা চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আকরামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। আকরাম ছিলেন পেশাদার বাসচালক ও রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য।


এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ছেলে হাসান ইমাম অনন্ত বৃহস্পতিবার দুপুরে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও আরও পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।


এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার মো. নান্টু (২৮), মো. বিশাল (২৮), খোকন মিয়া (২৮), তাসিন হোসেন (২৫), মো. অমি (২০), মো. নাহিদ (২৫) ও মো. শিশির (২০)।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে প্রধান আসামি নান্টু তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন। নান্টুর স্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় আকরাম আলীর স্ত্রী এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নান্টু তার পরিবারকে ক্ষতির হুমকি দেন এবং তার লোকজন দিয়ে আকরামের মেয়ে রাফিয়াকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন।
বুধবার বিকেলে প্রাইভেট পড়ে যাওয়ার সময় নান্টু নিজেই রাফিয়াকে গালিগালাজ করে। এ নিয়ে আকরাম প্রতিবাদ জানাতে নান্টুর পরিবারের কাছে গেলে তারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো হামলার ঘটনা ঘটায়। রাত ১০টার দিকে তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আকরাম ও তার ছেলেকে ইট দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করা হয়। এ সময় আকরামকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে থেতলে দেয়।


এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে আকরামের লাশ নিয়ে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। এ সময় বাবার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে রাফিয়া বলেন, “আমি প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন নান্টু ও তাঁর লোকজন আমাকে গালি দেয়। বাসায় গিয়ে বাবাকে বলি, তিনি প্রতিবাদ করতে যান। কিন্তু নান্টুর পরিবার কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাকে লেলিয়ে দেয়। এর ফলেই বাবাকে হত্যা করা হয়। আমি বাবাকে হারিয়েছি- এই কষ্ট আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।”


বিবার্তা/মোস্তাফিজুর/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com