ডেইলি স্টার-প্রথম আলোতে হামলার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৮
ডেইলি স্টার-প্রথম আলোতে হামলার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা, দেশের শীর্ষ গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো-ডেইলি স্টার-উদিচি-ছায়ানটে সন্ত্রাসী হামলা, অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর, সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হেনস্তাসহ সকল অপতৎপরতা বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।


শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ১২টার দিকে সামাজিক সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণতান্ত্রিক ঐক্য এই কর্মসূচির আয়োজন করে।


শনিবার দুপুরে সামাজিক সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণতান্ত্রিক ঐক্যের ব্যানারে জেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্য, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। তাঁরা শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা, দীপু-আয়েশাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, উদীচী, ছায়ানট, প্রথম আলো -দি ডেইলি স্টার ভবনে হামলা-আগুন, সাংবাদিক নুরুল কবিরের উপর আক্রমণ, প্রতিনিয়ত দেশে অরাজকতা, মবোক্রেসি রাজশাহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মারধর, উগ্রবাদীদের অব্যাহত হুমকিসহ দেশের বিরুদ্ধে সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ করেন।


সামাজিক সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণতান্ত্রিক ঐক্যের সভাপতি আবদুন নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা উদীচীর সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন, অনুশীলন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা, ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক আবু হানিফ, কবির কলম সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য অ্যাকাডেমির পরিচালক মানিক রতন শর্মা, প্রথম আলো নিজস্ব প্রতিবেদক শাহাদৎ হোসেন, ভাসানী চর্চা কেন্দ্রের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল বনিক, জেলা উদীচীর সদস্য আইনজীবী আসাদুজ্জামান টিটু, জেলা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্ধুসভার সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের প্রভাষক শাহজাহান মিয়া।


মানববন্ধনের সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলনে পরিষদের সদস্য জামিলুর রহমান, জেলা উদিচীর সহ-সভাপতি সাজাহান সোহেল ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাখা নির্বাহী ইতি কর্মকার। অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ফাহমিদা আক্তার,কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করার শিক্ষার্থী অনন্যা সাহা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার রোজা ও স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রীতি রানী দাস, ইউনাইটেড কেয়ার ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া হক নুপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষার্থী কৃষ্ণা মৈশান, ইসরাত জাহান প্রাচী ও সুমাইয়া আক্তার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সোনালী সকালের সভাপতি ফাহিম মুনতাসির।


বক্তারা বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। সেই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবন আগুন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই কি গণতন্ত্রের নমুনা। সরকার এরকম উদাসীন থাকলে মানুষ আবার রাস্তায় নামতে কিন্তু সময় নিবে না।


তাঁরা বলেন, শরিফ ওসমান বিন হাদীর মৃত্যুর পর আমরা দেখেছি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের পত্রিকার উপর হামলা হয়েছে। দুটি পত্রিকার ভবন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। চতুর্থ স্তম্ভে আগুন মানে রাষ্ট্রে আগুন। পত্রিকার উপর হামলা মানে দেশের উপর হামলা। আমরা দেখেছি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কত অসহায় ছিল। আগুন নেভাতে সাধারণ ছাত্র জনতার তার কাছে ২০ মিনিট সময় চেয়েও তাঁরা সময় পায়নি। হামলার পর বলা হয়েছে একজন নেতা ভারতে অবস্থান করছেন এবং হামলাকারীদের পালাতে সেই নেতা সহায়তা করেছেন। তাহলে সরকার কি করছে। পুলিশ প্রশাসন গোয়েন্দা সংস্থা কি করছে। রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত এই সরকার আশানুরূপ কিছুই করছে না কেন। কারোরই আজ নিরাপত্তা নেই। এমন অবস্থা হয়েছে যে ঘরে ও নিরাপত্তা নেই রাস্তায় ও নিরাপত্তা নেই কর্মসংস্থানে নিরাপত্তা নেই।


তাঁরা আরও বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কোনো প্রতিবেদনে কারো আপত্তি থাকতেই পারে। কিন্তু এর জন্য আগুনে পুড়ে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। গুলি করে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এই মব সন্ত্রাস চাই না। রাকসু-ডাকসুর শিবিরের নেতারা প্রকাশ্যে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পুড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না।


বক্তারা বলেন, সাধারণ ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে কর্তৃত্ববাদ সরকারের পতনের পর স্বপ্ন ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে ও মানুষ মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাবে। আজ সেই গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কোথায়। সারাদেশে 'মব সন্ত্রাস' হচ্ছে। সমস্ত কিছু দায় সরকারকে নিতে হবে। একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে কণ্ঠরোধ করতে চাচ্ছে। দেশ আহত অবস্থায় আছে। আমরা দেশকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। আমাদের দেশকে আমাদেরই বাঁচাতে হবে।
তাঁরা বলেন, সংস্কৃতির সংগঠন ও কর্মীরা সবসময় নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে। তারা ক্ষমতায় যাবার জন্য প্রতিবাদ করছে না। কিন্তু তাদের সংগঠন ছায়ানটে হামলা কেন। এ জন্যেই কি সাধারণ মানুষ ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে।


বক্তারা বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর তাঁরা আশা করেছিলেন, বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম পাবেন। মানুষ নির্ভয়ে মতপ্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার মধ্য দিয়ে সেই আশা নিরাশায় পর্যবসিত হয়েছে।


এই বক্তারা আরও বলেন, সহিংসতা দিয়ে সাংবাদিকদের কলম ও ক্যামেরা দমিয়ে রাখা যাবে না। শুধু জড়িতদের গ্রেপ্তার করলেই হবে না, নির্দেশদাতা ও ইন্ধনকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাসহ সারা দেশের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জোর দাবি জানান তাঁরা। নতুবা সামনে আরো খারাপ দিন অপেক্ষা করছে।
বিবার্তা/নিয়ামুল/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com