ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর তাণ্ডবে কক্সবাজারে ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০২
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর তাণ্ডবে কক্সবাজারে ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে পুরো কক্সবাজার লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছ। বাতাসের তিব্রতায় কক্সবাজার শহরসহ উপকূলীয় উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া এবং টেকনাফসহ প্রায় সব উপজেলায় ৩৮ বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। যেখানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০৫টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ির সংখ্যা ৩২ হাজার ৭৪৯টি। জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন।


২৫ অক্টোবর, বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান এ সব তথ্য জানান।


জেলা প্রশাসকের দেয়া তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কক্সবাজার জেলার ৭১টি ইউনিয়ন ও কক্সবাজার, মহেশখালী পৌরসভা। হামুনের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের ৩৫৪টি খুঁটি ভেঙে গেছে। বিকল হয়েছে ২৩টি ট্রান্সফরমার। ৪৯৬ স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। ৮০০টি স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।


জেলা প্রশাসক আরও জানান, ইতোমধ্যে পৌরসভার ক্ষতিগ্রস্ত দেড়শত পরিবারকে ১ বান করে ঢেউটিন ও নগদ ১ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।


উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর দেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় হামুন।


ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ৩৮ হাজার ঘর বিধ্বস্ত


ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ৩৮ হাজার ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। যার মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজারের বেশি ঘর। জেলার ৯টি উপজেলার ৭০ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় অন্তত ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব চেয়ে বেশি তাণ্ডব হয়েছে বিদ্যুৎ লাইনের উপর। ছিন্ন-ভিন্ন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার কারণে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভার আশংকি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হলে বন্ধ রয়েছে বেশিভাগ এলাকা। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান এসব তথ্য জানিয়েছেন।


তিনি জানিয়েছেন, সর্বশেষ তালিকায় কক্সবাজারের ৫ হাজার ১০৫টি কাঁচাঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ভেঙেছে ৩২ হাজার ৭৪৯টি ঘর। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন ৩৩ কে.ভি লাইনের ১৭৪টি, ১১ কে.ভি লাইনের ১৮০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ২৩টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ৪৯৬টি স্পটে তার ছিড়ে গেছে। ১৮৩৮টি মিটার নষ্ট হয়েছে। ৮০০টি স্পটে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পিডিবি ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কক্সবাজার পৌরসভা/কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ফলে উক্ত উপজেলাসমূহের সাথে মোবাইল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।


কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতাধীন পেকুয়া উপজেলার ৭টি ঘরের টিন সম্পূর্ণ উড়ে গেছে এবং চকরিয়া উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত ১টি ব্রিজ সম্পূর্ণ বেঁকে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।


হাজার হাজার গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে টানা ১৫ ঘন্টা পর বুধবার বিকাল ৩টা থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। কিন্তু ফোন কল ইনকামিং, আউটগোয়িং এর ক্ষেত্রে জটিলতা পুরো কেটে উঠেনি। একই অবস্থা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও।


কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তারা দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন বলে আশ্বস্ত করেছে। টানা ২৪ ঘন্টা পর কক্সবাজার পৌরসভার আংশিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে বিদ্যুৎ চালু হলে অন্যান্য সমুহ এখনও বন্ধ আছে।


কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে উপড়ে গেছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খুঁটি। তার ছিঁড়ে রাস্তা-ঘাট ও বসতিতে পড়ে রয়েছে। এখন বৈদ্যুতিক সংযোগ দিলে প্রাণহানি ঘটতে পারে, তাই আপাতত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।


আব্দুল কাদের গণি বলেন, এখন ৩টি সাব স্টেশন চালু করা হয়েছে। এরপর প্রধান সড়কগুলোতে কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। পুরো কক্সবাজারে বিদ্যুৎ চালু হতে অন্তত দুদিন সময় লাগবে।


কক্সবাজার পৌরসভায় ১৫০ পরিবার পেলেন টিন ও নগদ অর্থ


ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজার পৌরসভায় অধিক ক্ষতিগ্রস্থ বিবেচনায় ১৫০ পরিবারকে এক বান্ডিল টিন ও নগদ এক হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।


বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত মাঠে এসব টিন ও টাকা বিতরণ করা হয়।


বিতরণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে অন্তত ১৫ হাজার বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। যার মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত ঘর সাড়ে ৫ হাজার। অন্যান্যগুলো আংশিক। অধিক ক্ষতিগ্রস্থ বিবেচনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ১৫০ পরিবারকে ঘর তৈরি করতে টিন ও টাকা দেয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্যদের দেয়া হবে।


টিন বিতরণকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ, সদর উপজেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র সালাউদ্দিন সেতু, ইয়াছমিন আক্তার, কাউন্সিলর যথাক্রমে মিজানুর রহমান, আমিনুল ইসলাম মুকুল, এহেসান উল্লাহ, সাহাব উদ্দিন সিকদার, রাজ বিহারী দাশ, শাহেনা আক্তার পাখি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com