খননে মিলে বিলুপ্ত পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪২
খননে মিলে বিলুপ্ত পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের পাহাড়ি টিলা খননে বেরিয়ে এল ১২২৩ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব। এ যেন ছোট আঘাতে বড় প্রাপ্তি। পণ্ডিত বিহারটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরাকীর্তি বলা যায়। বহু বছর আগে যা যুদ্ধবিগ্রহে দেয়াঙ পাহাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও স্থানীয়দের ধারণা প্রাচীন নিদর্শন খুঁড়তে গিয়ে তাঁরা যেন কোন ভাবে ভিটেবাড়ি না হারায়! এমন আতঙ্কেও গ্রামবাসীর মনে উঁকি দিচ্ছে।


জানা যায়, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এর খনন কাজ চলছে। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে আনা অভিজ্ঞ শ্রমিক মো. হাফিজ, ঠান্ডু সরকার, হান্নান সরকার, আজিজুল হক, মোতালেব সরকার, আবু বক্কর ছিদ্দিক, চুন্নু,আবদুল গফুর, পারভেজ সরকার ও পয়লাল সরকার সম্ভাব্য স্থানে খনন কাজ চালাচ্ছেন।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভিজ্ঞ শ্রমিকরা মাটি খুঁড়ছিলেন। এতেই বেরিয়ে আসে বিশালাকৃতির ইটের দেয়াল। ফুটে উঠছে মেঝের অবয়ব। স্পষ্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের কাঠামো। জনবসতির মাঝখানে জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়টি খননেই ভেসে ওঠে চাপা পড়া স্থাপত্যের এক নিদর্শন। যেখানে ছিল বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ছিল প্রাচীন পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও স্থানীয় শ্রমিক ফয়সাল জানান, বর্তমানে যে জায়গায় খনন কাজ হচ্ছে, ওই জমির মালিক দাবিদার মৌলানা গাজী ইসহাকের পরিবার।


প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়াজ মাখদুম বলেন, ‘খনন কাজ এখনো চলমান রয়েছে। খনন কাজে আমরা যদি কোনো কিছু পাই। সেটা গবেষণা করার পর যদি সেটা প্রতীয়মান হয়, কোনো স্থাপনা ছিল। তখন আমরা স্পষ্ট ভাবে বলতে পারব। সঠিক ইতিহাস বের করতে আগামী দুই মাস খনন কাজ চলবে।


বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস ও পুরাকৃর্তি ঐতিহ্যের কথা চিন্তা করে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। খনন ও অনুসন্ধান শেষে আসল ইতিহাস বেরিয়ে আসবে এমন আশা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের। ইতিহাস ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে গ্রামের মানুষের যেন কোন ক্ষতি নাহয়। কেননা, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বলছেন, শঙ্খ নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড় পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে পণ্ডিত বিহার এবং পুরাকৃর্তির সৃষ্টি ছিল।’


অধিদপ্তরের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট বলেন, ‘তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই পুরাকীর্তি অনুসন্ধান এতটা সহজ কাজ ছিল না। পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে পথচলার পরিক্রমায় বর্ণিত স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ‘জ্ঞানতাপস’ ড. জিনবোধি ভিক্ষু প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পত্র প্রেরণের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সর্বপ্রথম সরকারিভাবে খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো।’


কুমিল্লার প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের পটারি রেকর্ডার মোহাম্মদ রিপন মিয়া বলেন, ‘আমরা ওপরের কাজ করছি। ভেতরে কি আছে এখনো দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রাচীন কিছু নিদর্শন থাকতে পারে। দুজন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে ডেকে আনা ১০ জন অভিজ্ঞ শ্রমিক অতি সতর্কতার সঙ্গে করছেন খনন কাজ। গত এক বছর ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের জরিপের পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়।’


ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, ‘নানান জটিলতার পর কাজটি আলোর মুখ দেখে। এক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। প্রাচীন এই ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ধারণা সামগ্রিক ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পটিয়ার কৃতি সন্তান প্রয়াত নাট্যকার আহমেদ কবির নানা গবেষণা করে প্রাপ্ত বাস্তব তথ্যের আলোকে রচনা করেন নাটক “পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়”, আর সেটি মঞ্চস্থ করে নাট্যসংগঠন “নাট্যাধার”। এই নাটকটি শুধু মাত্র চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি নয়, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ড.দিপু মনি, এম পি মহোদয়ের শহর চাঁদপুরেও মঞ্চায়ন করে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় জনমত গড়ে তুলে। আমার কাছে গর্বের বিষয় আমি নিজেও সেই নাটকে অনেকগুলো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগের পাশাপাশি কয়েকবার প্রস্তাবিত পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত স্থানসহ খনন শুরু হওয়া জায়গা পরিদর্শন করেছি। এ পুরাকীর্তি পুনরুদ্ধার করা হলে, আনোয়ারা উপজেলাসহ গৌরবময় চট্টগ্রামের সুনাম, সুখ্যাতি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আরেকটি মাইলফলক ঘটনার জন্ম দেবে।’


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পালি ভাষা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘খনন কাজ শেষে যদি কিছু পাওয়া যায়। তাহলে এখানে একটা জাদুঘর হবে। জাদুঘরে এখান থেকে পাওয়া জিনিস গুলো সংরক্ষণ করা হবে। গ্রামে যে সমস্ত সাধারণ মানুষ অবস্থান করছেন, আমি মনে করি তাঁরা সৌভাগ্যবান। কেননা এখানে প্রায় ১২০০ বছর আগে একটা পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমি অনেক গবেষণা করে এই অঞ্চলের পুরাকৃর্তি সম্পর্কে পূর্ণ উদ্ধার কাজে সরকারের মাধ্যমে হাত দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুসারে আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়টি নবরূপে প্রতিষ্ঠিত হলে আন্তর্জাতির বৌদ্ধ বিশ্বের সাথে অতীতের ন্যায় বাংলাদেশের সৌভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সভ্যতা, শিল্প, ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’


তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা বটতলী তথা বড়উঠানে যদি একটা বিশ্ববিদ্যালয় হয়। তাহলে এখানকার জনগণ স্থায়ীভাবে কোথায় বসবাস করবে? মূলত এটা হচ্ছে একটা ভুল ধারণা ও গুজব। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার মত পরিবেশ এবং জায়গা এখানে নেই। এটা হবে একেবারে বটতলী মোহছেন আউলিয়ার মাজারের পাশে। গুচ্ছগ্রামের পাহাড়ে। ওখানে বিশাল খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে সরকার ৫০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছেন। যেখানে আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হবে। আমি মনে করি পুরাকৃর্তি যদি পুনরুদ্ধার হয়। তাহলে এখানে একটা জাদুঘর করা যায়। পাশাপাশি খনন কাজ করতে ও জাদুঘর করতে স্থানীয়দের গাছপালা যা ক্ষতি হচ্ছে, তাঁদের তালিকা করা হচ্ছে। পরে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জনগণের জায়গা জমি দখল করা হচ্ছে না। এটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কেউ বিভ্রান্তি হবেন না।’


ইতিহাসে পণ্ডিতবিহার


পণ্ডিত বিহার ছিল উপমহাদেশের একটি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। খ্রিস্টীয় আনুমানিক অষ্টম শতাব্দীতে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামে এ-বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিলো ধারণা করা হয়। মূলত এ-বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা পূর্ববঙ্গে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে শিক্ষা ও মতবাদ প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হতো। ত্রয়োদশ শতাব্দীর এক সংঘাতে বিহারের নালন্দা বিহার ধ্বংস হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে পূর্ব দেশীয় বৌদ্ধ পণ্ডিত মণ্ডলীদের অনেকেই পণ্ডিতবিহারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাল সাম্রাজ্যের বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধধর্ম প্রচারক অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান পণ্ডিতবিহারে কিছুকাল অবস্থান ও অধ্যয়ন করেছিলেন।


পণ্ডিতবিহারে অধ্যাপকগণ তাদের অধ্যাপনা, অধ্যয়ন ও যোগ সাধনার পাশাপাশি অবসর-অবকাশে যে সকল গান-দোঁহা রচনা করেছিলেন তাই পরবর্তীকালে চর্যাপদ নামে বাংলা ভাষা ও কাব্যের আদি নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত লাভ করে। পণ্ডিতবিহারের পূর্বে এবং পরবর্তীকালে আনুমানিক আঠারো শতকের মধ্যকাল পর্যন্ত অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায় না।


যেখানে বিহারের অবস্থান


পণ্ডিতবিহারের অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত রয়েছে। প্রাপ্ত কিছু স্মারক নিদর্শন অনুযায়ী তিব্বত ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ শরচ্চন্দ্র দাস প্রমুখ পণ্ডিত ও গবেষকবৃন্দের অনুমান, অষ্টম শতাব্দীতে চট্টগ্রাম মহানগরের বর্তমান জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন পাহাড়ে এ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল। অনেকের মতে ধারণা করা হয় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার চক্রশালায় অথবা আনোয়ারা উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ের দক্ষিণাংশে ঝিওরী ও হাজিগাঁও গ্রামে আবার অনেকের মতে সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল। তবে অধিকাংশ মতের ভিত্তিতে দেয়াঙ পাহাড়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল বলে অনেক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়।[৪] ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে আনোয়ারার দেয়াঙ পাহাড়স্থ ঝিওরী ও হাজিগাঁও গ্রামের সীমান্ত থেকে ৬৬টি পিতলের বুদ্ধমূর্তি আবিষ্কৃত হয়, যা এই স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সম্পর্কে প্রমাণ নিশ্চিত করে।


যেভাবে বিলুপ্তি হয়েছিল পণ্ডিত বিহার


পণ্ডিতবিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন পটিয়ার চক্রশালা নিবাসী ব্রাহ্মণসন্তান তিলপাদ। "তিলপাদ" নামের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায় যে, তার হিন্দু জীবনের যোগসাধন সঙ্গিনী তিল পিষে জীবন ধারণ করতেন বলে তিনি তিলপাদ নাম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পর প্রজ্ঞাভদ্র নাম গ্রহণ করেন এবং পণ্ডিতবিহারের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। মগধের প্রধান আচার্য নরতোপা পণ্ডিতবিহারে প্রজ্ঞাভদ্রের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। লুই পা, শবর পা, লাড় পা, অবধূত পা, অমোঘনাথ, ধর্মশ্রী, মৈন, বুদ্ধজ্ঞান পা, অনঙ্গবজ্র প্রমুখ বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য এবং পণ্ডিতগণ পরিদর্শকরূপে অথবা অধ্যাপকরূপে পণ্ডিতবিহারে বিহারে এসেছিলেন। গবেষকদের অনুমান, বিভিন্ন বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ এই বিহারে সমবেত হয়েছিলেন বলে সম্ভবত পণ্ডিত বিহার নামকরণ হয়েছিল।


পণ্ডিতবিহারের বিলুপ্তি হবার কারণ সম্পর্কে জানা যায় না। খিস্ট্রীয় আনুমানিক অষ্টম শতাব্দীতে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব ছিল বলে ধারণা করা হয়। ১০৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রহ্মদেশের রাজা অনর হট চট্টগ্রাম ও পট্টিকারা রাজ্য জয় করার পর তৎকালীন প্রচলিত মহাযান বৌদ্ধমত উচ্ছেদ করে হীনযান বা থেরবাদ বৌদ্ধমত প্রচার করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ১২৩০ খ্রিষ্টাব্দে সমতটের বৌদ্ধ রাজা দামোদর দেব (১২৩০-১২৫৩ খ্রিষ্টাব্দ) পট্টিকারাসহ চট্টগ্রাম জয় করেন এবং ১২৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অত্র অঞ্চলে রাজত্ব করেন। ঐতিহাসিভাবে জানা যায় রাজা দামোদর দেবের রাজত্বকালীন সময়ে পণ্ডিতবিহারের অস্তিত্ব উজ্জ্বল ছিল।


পরবর্তী শতাব্দীর ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে সোনারগাঁওয়ের সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের (১৩৩৮-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ) সেনাপতি কদলখাঁ গাজী চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আরাকানিদের বিতাড়িত করেন এবং চট্টগ্রামকে সর্বপ্রথম মুসলিম শাসন আওতায় নিয়ে আসেন। ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছিল বাংলার স্বাধীন সুলতান ও আফগান শাসনভুক্ত। ধারণা করা হয় এ সময়েই পণ্ডিতবিহারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। আরাকানের ইতিহাস সূত্রে পাওয়া যায়, সে সময়েও আরাকানের রাজারা কখনো সাময়িককালের জন্য, কখনো সম্পূর্ণ মেয়াদে অধিকার করে চট্টগ্রাম অঞ্চল শাসন করেছিলেন। ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান রাজ মিনফালং আফগান সেনানী শাসক জামাল খান পন্নীকে পরাজিত করে সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যভুক্ত করেন। সে সময়কাল থেকে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম একাধারে আরাকানের রাজ্যভুক্ত ছিল। পণ্ডিতবিহারের অস্তিত্ব সে সময়কালেও ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ ধারণা করেন। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁ নিজ পুত্র বুজুর্গ উমেদ খাঁকে তার প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব প্রদান করেন এবং তাকে অভিযানে পাঠান চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি মোগল যোদ্ধারা আনোয়ারা উপজেলার চাটিগাঁ দুর্গ দখল করে মগদের বিতাড়িত করেন। এ সকল যুদ্ধবিগ্রহে চট্টগ্রামের প্রাচীন বন্দর শহর দেয়াঙ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধারণা করা কর এরই ফলস্বরূপ এবং কালের বিবর্তনে পণ্ডিতবিহারের বিলুপ্তি ঘটে।


পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি যেভাবে


ঐতিহাসিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। যার ফল স্বরূপ ২০১২ সালে বর্তমান বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিশেষ প্রতিনিধি দল সরেজমিন আনোয়ারার দেয়াঙ পাহাড় অঞ্চলে পণ্ডিতবিহারের ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করেছেন। মূলত চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকার যৌথ অর্থায়নে প্রায় দেড়শ একর পাহাড়ি ভূমিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যেটির দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হবে।


বিবার্তা/জাহেদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com