চির ধরেছে চরপাথরঘাটা যুবলীগে!
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ১৯:১৮
চির ধরেছে চরপাথরঘাটা যুবলীগে!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষণার ৫ মাস যেতে না যেতেই সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব, আলাদা কর্মসূচি পালনের প্রবণতা ও দলীয় কোন্দলে দুই নেতার মধ্যে ফাটল ধরেছে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগে জানা গেছে। দুই নেতা পৃথক কর্মসূচি পালন করায় চরপাথরঘাটা যুবলীগ আবারও আলোচনার শিরোনাম হচ্ছে।


নতুন কমিটি গঠনের পাঁচ মাসে সংগঠন গোছানো তো দূরের কথা এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি তারা। এরমধ্যে জাতীয় শোক দিবস ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আলোচনা সভার দৃশ্যত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দেখে অনেকেই সমালোচনা করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দুই বলয় তৈরি হয়েছে।


জানা যায়, গত ২০ মার্চ চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ও জুলধা ইউনিয়ন যুবলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগ। তবে সে সময় বিস্ময়করভাবে কমিটি দুটি ঘোষণার তারিখ দেখানো হয়েছিল ২০২২ সালের ১লা ডিসেম্বর। এটা নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি দলের ভেতরে-বহিরে। ১৬ সদস্যের ওই আংশিক কমিটিতে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগে আনোয়ার সাদাত মোবারককে সভাপতি ও জাবেদ উদ্দিন চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার মাঝে বিরোধের বিষয়টি স্পষ্ট হতে শুরু করে। সাধারণ সম্পাদক জাবেদ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সভাপতি আনোয়ার সাদাত মোবারক এর দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে, সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার কারণে কমিটির অন্যান্য পদধারী নেতাদের মাঝেও ‘সম্পর্ক’ ফাটল ধরিয়েছে বলে সূত্র জানায়।


স্ব স্ব নেতার প্রভাবশালী বলয়ের হস্তক্ষেপ থাকায় দিন দিন বিভেদ আরও বাড়ছে। পরিস্থিতি এতোটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে যে, দলীয় কর্মসূচিগুলোও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথকভাবে তাদের নেতৃত্বে পালন করেছেন। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক একে অন্যের ছায়াও দেখেন না। আর তাদের সংগঠনের নেতারাও দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। যে কারণে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।


নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, মূলত সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরার মূল কারণ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা নিয়ে। দুই নেতা দুই বলয়ের কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদে আনতে আগ্রহী। এর বাহিরে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের কোটাও রয়েছে। যাদের কোটা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের (খসড়া) একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে তৃণমূল নেতাদের না রাখায় সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দেয়। খসড়া কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের কোন কর্মীকে রাখা হয়নি বলে বিশেষ সূত্র জানায়। যদিও সভাপতি তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।


অন্যদিকে সভাপতিকে না জানিয়ে পৃথক ভাবে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আলোচনা সভায় মিছিল সহকারে যোগদান করার বিষয়ে জানতে চাইলে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ উদ্দিন চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, ‘সভাপতি গতকাল উপজেলা যুবলীগের সাথে মিছিলে যোগদান করেছিলেন। আমার যেতে একটু দেরি হয়েছিল। এ জন্য আলাদা ভাবে আমি মিছিল নিয়ে গিয়েছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে আমার কোনো হাত নেই। ওটা জেলা যুবলীগ, উপজেলা যুবলীগ, মন্ত্রী মহোদয় ও সায়েম ভাই যা বলেন। সেটাই হবে। এখানে আমার কিছু নেই। সবচেয়ে বড় কথা আমি মাননীয় ভূমিমন্ত্রী মহোদয় এর একজন নগণ্য কর্মী। এখানে আমার কোটা বলতে কোন কিছু নেই। সামনে জাতীয় নির্বাচন। তৃণমূলকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমি সবার সাথে মিলে মিশে রাজনীতি করতে চাই। গ্রুপিং রাজনীতি আমার পছন্দ না। অন্যদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিষয়ে কার কার সিভি জমা নিয়েছেন, তাও আমি এখনো জানি না।’


সভাপতির সাথে তাহলে দূরত্ব কেন জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘কমিটি হবার পরে আমরা মন্ত্রী মহোদয় কে ফুল দিতে যাবো- অথচ উনি আসলেন দুই ঘণ্টা পরে। ততক্ষণে মন্ত্রী মহোদয় চলে গেছেন। ফুল দিতে পারিনি। বড় উঠানে ফারুক ভাইয়ের বাসায় ফুল দিতে যাবো। আসবে আসবে বলে এসেছেন তাও দুই ঘণ্টা পরে। ততক্ষণে ওরাও চলে গেছেন। সভাপতি কেন আমার সঙ্গে এমন করেন আমি নিজেও জানি না। তাকে ডাকলে তিনি আসেন না। ফোন করলেও ধরেন না। দেখা হলেও কাকতালীয় ভাবে হয়। কিন্তু এভাবে তো সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। সমন্বয় দরকার সবার।’


এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি আনোয়ার সাদাত মোবারক বিবার্তাকে বলেন, ‘আমি আলাদা কোনো মিছিল নিয়ে যাইনি। বর্তমানে যে ১৬ জনের কমিটি আছে, সেখান থেকে হারুন উপস্থিত হতে পারেননি। বাকিরা সবাই আমার সাথে ছিল। আমার সেক্রেটারি যদি ১২/১৩ জন মানুষ নিয়ে মিছিলে যায়, আমি তো মানা বা বাঁধা দিতে পারব না। কেউ যখন রাজনীতি করেন- অবশ্যই কোন না কোন গ্রুপ মেইনটেইন করে থাকেন। হয়তো তিনি কাউকে খুশি করতে যেতেই পারেন। আমার সাথে সেক্রেটারি যাননি। সেটা সত্য। আপনারা দেখেছেন আমার মিছিলে কতজন লোক ছিল।’


প্রতি উত্তরে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি মিছিলে কতজন লোক নিয়ে গেছি সবাই দেখেছে। আমার কমিটির অনেকেই গেছেন। উনার সাথে গেছে শুধু পাপন, সুমন ও উনি। উনার সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট কেউ যাননি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। আমি সায়েম ভাইয়ের নির্দেশে আমার ওয়ার্ডের তৃণমূল গোছাতে চেষ্টা করছি। পাশাপাশি সম্পাদক হিসেবে পুরো ইউনিয়ন নিয়েও কাজ করছি। কিন্তু আমার দলের কেউ যদি আমার ওয়ার্ডের ছেলেদের নানা প্রলোভনে নিয়ে যায়। এটাতে সহযোগিতা বলে না।’


জবাবে সভাপতি আনোয়ার সাদাত মোবারক বলেন, ‘এখানে কোটা বলতে কোনো কথা নেই। সবার পছন্দের লোকজন থাকতে পারে, পছন্দের লোকজনের নাম সবাই জমা দিতে পারে। কিন্তু সঠিক তদন্ত ও বিবেচনা করে তাদের কমিটিতে আনবে জেলা ও উপজেলা কমিটি। যে ছেলেগুলো আমাদের সময় দেয়, তাদের নিব। যারা পদ নিয়ে বাসায় বসে থাকে তাদের কমিটিতে পদ দেওয়া হবে না। যারা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে পাশে ছিল, অতীতে ছাত্রলীগ করেছেন- তাদের নাম আমি প্রস্তাব করব। আশা করি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’


এসব বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগ কোন মন্তব্য না করলেও আড়ালে আবডালে তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের এসব কর্মকাণ্ডে তারা বিরক্ত। পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে কঠিন সিদ্ধান্ত আসতে পারে এমনটাই আভাস দিলেন উপজেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতারা।


বিবার্তা/জাহেদ/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com