চাল থেকে তৈরি করা ঝুড়ি বিক্রি করে চলে সংসার
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৩, ১৮:৫৮
চাল থেকে তৈরি করা ঝুড়ি বিক্রি করে চলে সংসার
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আব্দুল আলিমের বয়স ১৩ বছর। অভাবের সংসারে শিশু বয়সেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। পিতা রাশিদুল ভ্যানচালক হলেও অসুস্থতার কারণে তার রোজগারে সংসারে অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী। পার্শ্ববতী মহিষমারী গ্রামে ঝুড়ি তৈরির যন্ত্র দেখে ধারদেনা করে ছেলেকে একটি যন্ত্র কিনে দিয়েছেন।


সেই ভ্রাম্যমাণ যন্ত্রে চাল দিলে বের হয় সুস্বাদু মুখরোচক ঝুড়ি। ঝুড়ি তৈরির যন্ত্রের চাকায় ঘুরছে রাশিদুলের সংসারে চাকা। আলিম গুরুদাসপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলদহর গ্রামের বাসিন্দা।


গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লায় গিয়ে দেখা গেছে, মহল্লার বউ-ঝিয়েরা চাল থেকে ঝুড়ি তৈরির জন্য ভ্রাম্যমাণ যন্ত্রের সামনে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই সরাসরি ভাত রান্নার সেদ্ধ চাল যন্ত্রের মধ্যে ঢেলে দিলেই বের হয়ে আসে মুখরোচক ঝুড়ি।


ঝুড়িতে বাড়তি স্বাদযুক্ত করতে চালের সাথে চিনিযুক্ত করলে বের হয় মিষ্টি ঝুড়ি। আর মরিচের গুড়া, পরিমাণ মতো লবণ আর সরিষার তেল মিশিয়ে নিলে বের হচ্ছে ঝাল ঝুড়ি। ঝাল কিংবা মিষ্টি যাই হোক না কেন প্রতিকেজি ঝুড়ি তৈরিতে গুনতে হয় মজুরি ৪০ টাকা।


আলিম জানায়, তারা দুই ভাই। ট্রাক ড্রাইভারের সহকারী বড়ভাই আলিফ (২৪) বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। একা সামাল দেয়া কষ্টসাধ্য বিধায় আরেক শিশুকে (মামাতো ভাই) সাথে নিয়ে এসেছে। অসুস্থ পিতার সংসারে বাড়তি আয় জোগান দিতে এপথ বেছে নিয়েছে সে। বছরখানেক আগে ৯০ হাজার টাকায় কুষ্টিয়া থেকে যন্ত্রটি কেনা হয়।


আরো জানায়, প্রথমে হাত মাইকের সাহায্যে গৃহিণীদের ঝুড়ি তৈরিতে আকৃষ্ট করা হয়। একত্রে বেশ ক’জন সমবেত হলে যন্ত্র চালু করা হয়। শেষ হলে নতুন স্থানে গিয়ে আবার সমবেত করে একের পর এক চলে ঝুড়ি তৈরির কাজ। ১ কেজি চালের ঝুড়ি তৈরিতে সময় লাগে ৫ থেকে ৭ মিনিট। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে আয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। যন্ত্রের জ্বালানি (ডিজেল) ও অন্যান্য খরচ ৫০০ বাদে দৈনিক আয় ১ হাজার টাকা।


আনন্দ নগর মহল্লার গৃহিণী মারজান খাতুন জানান, সবসময় বাচ্চাদের জন্য নাস্তা তৈরি করা সম্ভব হয় না। নাস্তার ঝামেলা এড়াতেই এ ঝুড়ি তৈরি করে নেয়া। বাচ্চাসহ বাড়ির সববয়সী মানুষের পছন্দ এ ঝুড়ি। একসময় গ্রামীণ মেলা থেকে ঝুড়ি কিনে আনা হতো। সময়ের সাথে পাল্টেছে অনেক কিছুই। ওরা বাসার সামনে এসে তৈরি করে দিচ্ছে। দেখে-শুনে কোনোরকম রাসায়নিক ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছি না।


গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল অনার্স কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী মলিন জানান, একসময় গায়ের মায়েরা চাল থেকে কায়েকধাপে হাতে তৈরি ঝুড়ি তৈরি করতেন। সেটা ছিল সময় ও কষ্টসাধ্য। প্রযুক্তি অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। যন্ত্রের সাহায্যে ঝুড়ি তৈরিতে সময় ও ঝামেলা দুটোই কমেছে। আবার অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।


বিবার্তা/জনি/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com