‘ভোট ডাকাতির’ বক্তব্য দেয়া সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে নোটিশ
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ১৯:৩৬
‘ভোট ডাকাতির’ বক্তব্য দেয়া সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে নোটিশ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজারে আট ভোটকেন্দ্রে ভোট ডাকাতির কথা প্রকাশ্য জনসভায় স্বীকার করা স্থানীয় একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।


স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এ নির্দেশনা প্রদান করে।


চিঠি প্রাপ্তির ২০ দিনের মধ্যে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জবাব দিতে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।


কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের গত ১২ জুলাইয়ের নোটিশটি ১৮ জুলাই, মঙ্গলবার পৌঁছেছে। নোটিশটি যথারীতি স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।


স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমনি প্রধান স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমি ভোট ডাকাতি করেছি বলেই আপনি উপজেলা চেয়ারম্যান’ এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ‘আট কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেছি’ মর্মে অসত্য বানোয়াট বক্তব্য প্রদান করায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে মর্মে কারণ দর্শানো হয়েছে।


এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসিম আহমেদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠিটি আমার হস্তগত হয়েছে। এটি ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক আমরা উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ইমরুল কায়েস চৌধুরীকে চিঠিটি (নোটিশ) পাঠিয়ে ২০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলবো।’


এর আগে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন জানিয়েছিলেন, গত ৬ জুন রাতে কক্সবাজার পৌরসভার অনুষ্টিত নির্বাচন উপলক্ষ্যে নৌকা প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ইমরুল কায়েস চৌধুরী এক সভায় বক্তৃতা করেছিলেন। পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তারাবনিয়াছড়া এলাকার এক নির্বাচনী সমাবেশে ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রতিপক্ষ মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের ছোট ভাই কায়সারুল হক জুয়েলকে (কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি আটটি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেছিলাম। তা না হলে আপনি জুয়েল উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারতেন না।’


ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসঙ্গঠনের নেতা ‘ভোট ডাকাতি’তে জড়িত মর্মে স্বীকার করা বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।


জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইভিএম পদ্ধতিতে। ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ‘ডাকাতি’র কথা বলায় নির্বাচন কমিশন বিব্রত। ‘ভোট ডাকাতির’ বক্তব্য সম্বলিত চেয়ারম্যানের ভিডিও বক্তব্যটি দেশে-বিদেশে ভাইরাল হয়ে পড়ায় গত ৮ জুন নির্বাচন কমিশন উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেছিল। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন প্রেরণ করে মন্ত্রণালয়ে। এরপর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাও নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।


এদিকে, কক্সবাজারের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনকে মারধর, ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ অত্যাচার-নিপীড়নের বিষয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি মামলায় এলাকার লোকজনকে মারধর করা থেকে বিরত থাকার মুচলেকা দিয়ে তিনি আদালতের জামিনপ্রাপ্ত হয়েছেন।


অপরদিকে, এলাকার ব্যবসায়ীদের নানা অজুহাতে ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়ার কারণে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট মামলাও দায়ের করা হয়েছে।


ইমরুল কায়েস চৌধুরী উখিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদেরও প্রত্যাশী ছিলেন। তিনি বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।


বিবার্তা/ফরহাদ/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com