ছেলের বউ দীর্ঘদিন ধরে বাবার বাড়ি বেড়াতে গেছেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে রান্না ও খাওয়া দাওয়ায় কষ্ট হচ্ছিল বৃদ্ধা মা ও বাবার। তাই ছেলের কাছে ফোন করে বউকে দ্রুত ফিরে আসতে বলেন তিনি। বাড়িতে ফিরতে বলায় সেই বউ ও বউয়ের পরিবারের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাসলিমা বেগম (৭০) নামের এক বৃদ্ধা মা।
শুধু তা-ই নয়, হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে আবারও ওই বৃদ্ধা মা ও তার মেয়েকে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে আহত অবস্থায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ জুলাই, সোমবার রাতে সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পশ্চিম মাদ্রা এলাকার সহর আলী পালোয়ানের স্ত্রী তাসলিমা বেগম।
দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে জসীম পালোয়ান পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে শাহীন পালোয়ান প্রবাসে চলে যাওয়ার পর ছেলের বউ ডালিয়া বেগম ও নাতনির সঙ্গেই থাকতেন তাসলিমা বেগম ও তার স্বামী সহর আলী। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন ছেলের বউ। এর পরও ছেলে ও নাতনির কথা চিন্তা করে মুখ বুজে সব সহ্য করতেন মা-বাবা।
ঈদের কিছুদিন আগে বাবার বাড়ি চলে যান ডালিয়া বেগম। এদিকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঠিকঠাক রান্নার কাজ করতে পারছিলেন না তাসলিমা বেগম। পরে উপায় না দেখে ছেলে শাহীনকে ফোন করে বউকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে বলেন মা। শাহীন তার বউকে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে দ্রুত বাবার বাড়ি থেকে ফিরতে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। তিনি বাড়ি ফিরে মারধর শুরু করেন শাশুড়িকে।
পরে তার পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে তারাও এসে বৃদ্ধা মা-বাবাকে মারধর ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়।এদিকে বৃদ্ধা মা অসুস্থ হয়ে পড়লে মেয়ে রুমা বেগমকে ফোন করলে তিনি গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এসে হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তাদের অটোরিকশা থামিয়ে আবারও বেধড়ক পেটান ছেলের শশুর অহেদ মুন্সী, শ্যালক হৃদয় মুন্সী, ভায়রা রাজু হাওলাদার, নয়ন মুন্সীসহ আরো কয়েকজন।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী তাসলিমা বেগমের ছোট মেয়ে রুমা বেগম।
৪ জুলাই, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলার মহিলা ওয়ার্ডের একটি শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মা তাসলিমা বেগম। এমন খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন তার আরেক মেয়ে নাজমা বেগম ও ছেলে জসীম পালোয়ান। আশপাশের লোকজন সবাই তার এই করুণ অবস্থা দেখে আক্ষেপ করছেন। তাসলিমা বেগমের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বারবার বুক চাপড়িয়ে শোনাচ্ছিলেন তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা।
এক পর্যায়ে তিনি কান্না থামিয়ে বলেন, ‘ধারদেনা কইরা ছেলেডারে বিদ্যাশ পাঠাইছিলাম। ছেলে যাওয়ার পর থিকাই বউডা দুই চোখ্যে আমাগো বুড়াবুড়িরে দেখতে পারে না। কয়েক মাস আগেও আমার গায়ে হাত তুলছিল। গত পরশু অসুস্থ না অইলে পোলারে কইতাম না বউরে বাড়ি আইতে বল। আমি কেন পোলারে দিয়া বউরে বাড়ি আইতে কইলাম? বাপের বাড়ির লোকজন নিয়া আইসা আমাগো দুই বুড়াবুড়িরে মারল। হাসপাতালে নিয়া আসার পথে আবারও আমারে আর আমার মাইয়ারে চলা কাঠ দিয়া পিডাইছে।’
তাসলিমা বেগমের ছোট মেয়ে রুমা বেগম বলেন, ‘মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে আমি গতকাল সন্ধ্যাবেলা গোপালগঞ্জ থেকে এসে মাকে হাসপাতালে নিয়ে আসছিলাম। আসার পথে ছোট ভাইয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের অটোরিকশা থামাইয়া আমাকে আর মাকে মারধর শুরু করে। মা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা চলে যায়। আমি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
তাসলিমা বেগমের বড় ছেলে জসীম পালোয়ান বলেন, ‘মা আর বাবাকে আমি ঢাকা নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মা-বাবা বাড়ি রেখে যাবে না। আমার ভাই প্রবাসে থাকায় তার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার মা-বাবাকে এভাবে অত্যাচার করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কঠিন বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছেলের বউ ডালিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি আমার ওপর উল্টো নির্যাতন করতেন। তাই আমি মাঝেমধ্যেই বাবার বাড়ি চলে আসি। আবার ফোন দিলে শ্বশুরবাড়ি চলে যাই। ওনারা যা অভিযোগ করেছেন তা সব মিথ্যা। আমি বা আমার বাবার বাড়ির লোকজন কেউ তাদের মারধর করিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’
বিবার্তা/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]