ইউটিউব চ্যানেল 'সিপ্লাস'র নামে অপুর অবৈধ ব্যবসা
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ১৮:১০
ইউটিউব চ্যানেল 'সিপ্লাস'র নামে অপুর অবৈধ ব্যবসা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল ‘সিপ্লাস টিভি’র প্রধান সম্পাদক পরিচয় দেওয়া আলমগীর অপুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।


জানা গেছে, ইউটিউব চ্যানেলকে টেলিভিশন চ্যানেল দাবি করে চলছে ‘নিউজ ব্যবসা’। পারিবারিক কলহ, সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক থেকে শুরু করে ব্যক্তির সাধারণ দ্বন্দ্বও ঘটা করে আপলোড করা হয় সেখানে। পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিটি কনটেন্টের জন্য সুবিধাভোগী বা স্বার্থান্বেষী মহলের কাছ থেকে নেয়া হয় টাকা। আবার চাহিদামতো টাকা না পেলে উল্টো নেতিবাচক তথ্যও আপলোড করা হয়।


দেড় দশক আগেও আলমগীর অপু নিজেকে জাহির করতেন ছাত্রনেতা হিসেবে। চট্টগ্রাম নগরীর সিটি কলেজ কেন্দ্রিক কিছু অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত। তবে পদপদবি ছিল কি না, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। ছাত্রনেতার খোলস ভেঙে এরপর তিনি নাম লেখান সাংবাদিকতায়। স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে ও এই চ্যানেলের বদৌলতে অপুর গড়ে উঠেছে গোপন সখ্যতা। আওয়ামী লীগের অনেক সৎ ও সিনিয়র নেতার চরিত্র হননের একটি মিশন নিয়েও নির্বাচন কেন্দ্রিক সামনে অগ্রসর হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছেন।


অভিযোগ উঠেছে, এই চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশের নামে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন অপু। এমনকি নগরের ওয়াসার মোড়ে যেখানে তিনি বসেন, সেটিও দখল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপুর হলুদ সাংবাদিকতায় বিব্রতকর ও ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের মূলধারার সাংবাদিকরা।


দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ে তথাকথিত সাংবাদিক নিয়োগ দিয়েছেন অপু। তাদের মাধ্যমেই চলছে টাকার লেনদেন। সেই টাকায় হয়েছেন গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ নানা সম্পদের মালিক। তার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ নগর থেকে শুরু করে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।


সম্প্রতি অনলাইনভিত্তিক নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হলে চট্টগ্রাম থেকে বেশ কয়েকটি পোর্টাল নিবন্ধন চায়। এর মধ্যে সিপ্লাস টিভিও ছিল; কিন্তু জমি দখল, মাদক বাণিজ্য, ক্যাসিনো কাণ্ডে সম্পৃক্ততাসহ নানা কারণে সেটি নিবন্ধন পায়নি বলে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।


সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আলমগীর অপুর বিরুদ্ধে কর্মীদের বেতন না দেওয়া, অফিসে জুয়ার আসর বসানো, ফ্ল্যাট দখল করে অফিস বানানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।


গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যক্তি আলমগীর অপুর অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস সিপ্লাসে নিউজের মাধ্যমে হয়রানি করে চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনো ব্যবসা। চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও লালখান বাজারের কমিশনার প্রার্থী বেলালের সাথে যৌথভাবে আলমগীর অপুর নগরীর ওয়াসার মোড়ের Rangs শোরুমের ১১ তলায় ক্যাসিনো টেবিল ছিল ৩টি, যেখানে র‍্যাব অভিযান চালায়। যমুনা টিভির রিপোর্টার আরিফুর সবুজ ছিল ঐ অভিযানে। এছাড়াও দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের (১০ কোটি টাকা) অপরাধে এফবিআই তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ও তদন্তে নামে। দুই বাংলাদেশী ও বাংলাদেশী দূতাবাসের সহযোগিতায় মুচলেকা দিয়ে ( আজীবন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা এই মর্মে) দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে ও দুবাই হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর আমেরিকায় বাংলাদেশ এম্বেসির নথিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।


সাত বছর আগে শুরু হওয়া ‘সিপ্লাস’ নামে ইউটিউব চ্যানেলটি এখন আস্ত টাকার গাছে রূপ নিয়েছে। টাকার বিনিময়ে মুদি দোকানের ফিতা কাটা থেকে শুরু করে যে কোনো অনুষ্ঠানের খবর প্রচার করা হয় এতে। জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে এভাবে টাকা দিয়ে ৯ খাতে নিউজ করানো হয় কথিত এ চ্যানেলে। সঙ্গে চাঁদাবাজির অভিযোগ তো আছেই।


সংবাদ প্রকাশের নামে অবৈধ অর্থ উপার্জনের জাল তিনি ছড়িয়ে দেন দেশের আনাচে-কানাচে। দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ে তথাকথিত সাংবাদিক নিয়োগ দেন অপু। তাদের মাধ্যমেই চলছে টাকার লেনদেন।


সিপ্লাসে যেকোনো ধরনের খবর প্রচার করতে চাইলে নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতে হয়। যেকোনো ধরনের খেলাধুলার নিউজ, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের সংবাদ প্রচারে (উপজেলার না হলে) দিতে হয় ৫০০ টাকা করে। সব ধরনের ধর্মীয় সংবাদ, রাজনৈতিক পরিচিতি আছে কিংবা সরকারি পদ আছে— এমন কারও ব্যক্তিগত কর্মসূচির সংবাদের ক্ষেত্রে দিতে হয় এক হাজার টাকা করে। রাজনৈতিক পরিচিতি নেই— এমন কারও ব্যক্তিগত কর্মসূচি, মেলার সংবাদের ক্ষেত্রে দুই হাজার টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংবাদ প্রচারে চার হাজার টাকা করে দিতে হয়। এ ছাড়া সংবাদের নামে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে কথিত এ চ্যানেলের বিরুদ্ধে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিপ্লাস টিভির সাবেক এক প্রতিনিধি জানান, সংবাদ প্রকাশের জন্য আলমগীর অপুকে টাকা দিতে হতো। টাকা না দিলে সেই সংবাদ প্রচার হয় না। অনেক সময় নিজের পকেট থেকেও তাকে টাকা দিতে হয়েছে।


নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিলেও অপুর গোটা পরিবার আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার ভাই মুজিবুল হক মঞ্জু দুবাই বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব পদে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অপুর বোন জিন্নাত রাজ্জাক চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেত্রী। দুদিন আগে তিনি স্থানীয় বিএনপির এক সমাবেশে যোগ দিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে সরকারবিরোধী নানা বক্তব্য দেন। অপুর সাম্প্রতিক লন্ডন সফর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।


এসব ব্যাপারে আলমগীর অপুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা আইপি টিভি হিসেবে নিবন্ধন না থাকা এবং অর্থের বিনিময়ে সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি একে ‘বিজ্ঞাপন প্রচার’ বলে দাবি করেন।


বিবার্তা/লিমন/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com