হামার সরকার বারবার কওছে জমি ফেলে না থুইতে। সেইজন্যে নিজের যেকনা জমি আছে, ভালো করে আবাদ করছি। কিন্তু এরা যেঙ্কা করি বালা (বালু) বেচাওছে (বিক্রি) আর আবাদ হবার নয়।
আমার গাছের বাগানের পাশেই অনেক বড় গর্ত করে বালু ও মাটি নিয়ে যাচ্ছে শেখের হাটের মইনুল নামের এক বালু ব্যবসায়ী। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দামোদরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী প্রামাণিক পাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী প্রামাণিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ট্রাক্টর দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। ফলে এলাকার আবাদি জমি, বসতবাড়ি, প্রাইমারি স্কুল, ঈদগা মাঠ হুমকির মুখে পড়েছে। অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের লোকজন মাঝে মধ্যে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়ে যায়। তারা চলে গেলে আবার বালু উত্তোলন করা শুরু হয়। পুলিশ এসে নিষেধ করেও থামাতে পারছে না শিমুলতলী এলাকায় বালু উত্তোলন।
বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ও দামোদরপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনেশ্বরী নদী। নদীর থেকে প্রতিদিন দুই ইউনিয়নের প্রভাবশালীরা শত শত গাড়ি মাটি ও বালু উত্তোলন করে। পুলিশ বাধা দিলেও মানছে না তারা।
সরজমিন দেখা যায়, দামোদরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী প্রমাণিক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আবাদি জমি থেকে প্রায় দশ ফুট গর্ত করে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে শিমুলতলী প্রামানিক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ওই এলাকার আবাদি জমি ও বসত বাড়ি।
শিমুলতলী প্রামাণিক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান বিবার্তাকে জানান, বিদ্যালয়ের পাশে যেভাবে গর্ত করে মাটি ও বালু উত্তোলন করা হয়েছে, এবার বন্যা হলে স্কুলটি হুমকির মুখে পড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বিবার্তাকে বলেন, আমার দশ কাঠা জমির পাশে প্রায় ১০ ফুট গর্ত করে মাটি ও বালু উত্তোলন করেছে মইনুল নামে এক বালু ব্যবসায়ী। অনেক বাধা দিয়েও কাজ হয়নি। এবার বন্যা হলে আমার জমি ভেঙে গর্তের মধ্যে পড়বে। আমার জমির পরেই প্রাইমারি স্কুল।
ওই এলাকার জাহানারা বেগম বিবার্তাকে বলেন, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন জমি ফাঁকা রাখা যাবে না। জমিতে ফসল ফলান। সেখানে তারা আবাদি জমি থেকে বালু ও মাটি তুলছে। আমার গাছের বাগানের পাশেই অনেক বড় গর্ত করে বালু ও মাটি নিয়ে যাচ্ছে শেখের হাটের মইনুল নামে এক বালু ব্যবসায়ী। তাকে অনেক বাধা দেওয়ার পরও সে জোরপূর্বক বালু ও মাটি উত্তোলন করছে। বিষয়টি প্রশাসনের কাছে জানালেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
তাছাড়া পাশেই রয়েছে আব্দুল বারেকের ২৫ কাঠা আবাদি জমি, আব্দুর রাজ্জাকের ৫ কাঠা গাছের বাগান ও ১৫ কাঠা আবাদি জমি। এদিকে হুমকির মুখে রয়েছে শরিফুল ইসলাম, বাবলু শেখ, আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীরের বসতভিটা এবং একটি ঈদগা মাঠ।
তবে এ বিষয়ে জমির মালিকরা বলেন, আমাদের ওই জমিগুলো নদীর ধারে হওয়ায় চাষ বাদ করতে পারি না। জমিটিতে অনেক বালু, কোন ফসল ভালো হয় না। দীর্ঘদিন পরে থাকায় আমরা ওই জমির বালু ও মাটি তিন লাখ টাকায় বিক্রি করে দেই বালু ব্যবসায়ী মইনুলের কাছে।
এ বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী মইনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি মালিকানা জমির মাটি ও বালু উত্তোলন করছি। ওই এলাকার মো. এস্কান্দার আলি, মো. আনোয়ার হোসেনসহ চার ভাইয়ের জমি থেকে বালু উত্তোলন করছি। ওই মাটি ও বালুর দাম দিয়েছি তিন লাখ টাকা। আমি মাটি ও বালু তোলার সময় কেউ বাধা দেয়নি। স্থানীয়রা নিষেধ করলে মাটি ও বালু তুলতাম না বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে দামোদরপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জলুবর দিঘীরপাড় ঘাট এলাকার মো. হেলাল শেখ অভিযোগ করে বিবার্তাকে বলেন, গত বন্যায় আমাদের ৫০ শতক জমি ভেঙে নদীতে চলে যায়। বর্তমান নদীটির পানি আমাদের জমির উপর যাচ্ছে। অপরদিকে মধুপুর ইউনিয়নের নাওপাড়া এলাকায় চড় হলে সেখানকার কিছু প্রভাবশালীরা প্রতিদিন শত শত গাড়ি লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছে। কিছুদিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে শ্যালো-মেশিন, মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম জব্দ করেন। তারপর কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে।
গত ২৭ মে, শনিবার দুপুরে দামোদরপুর ইউনিয়নের চিলাপাকে যমুনেশ্বরী নদীর কালারঘাটে শ্যালো-মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছে ওই এলাকার কিছু প্রভাবশালী। বালু উত্তোলনে সময় শ্রমিক তারিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে মসজিদের জন্য। কারা এই বালু উঠাচ্ছে? তিনি বলেন, মৃত মজিদ মেম্বারের ছেলে লেবু মিয়া, ডালিম মিয়া, মৃত সাফায়েত হোসেনের ছেলে আবুল কালাম বালু তুলছে।
কালারঘাটের খেয়াঘাটের মাঝি আব্দুল মান্নান বিবার্তাকে বলেন, কিছুদিন আগেই এখান থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়েছিল। এখন আবার মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বিবার্তাকে বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কারাদণ্ড ও জরিমানা ছাড়াও নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিবার্তা/সেলিম/রোমেল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]