বদরগঞ্জে ৪০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩, ১৭:২৫
বদরগঞ্জে ৪০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
রংপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় ৪০ দিনের কর্মসূচিতে মজুরি দেয়ার কথা বলে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুতুবপুর ইউনিয়নের একাধিক শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়- দীর্ঘদিন মজুরি না পাওয়ায় পিআইও অফিসে টাকা দিতে হবে বলে টাকা নেন কাজের সর্দার ও মেম্বাররা।


অভিযোগ রয়েছে, অনেকেই ক্ষমতার দাপটে মাটি কাটেন না। কেউ চেয়ারম্যানের লোক, কেউ মেম্বারের লোক আবার কেউ উপজেলা চেয়ারম্যানের লোক বলেও কাজ করছেন না।


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, ৪০ দিনের কর্মসৃজনে ১৫৭১ জন শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদে কাজ করছেন ১৪৬ জন। শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, এবছর প্রথম দফার মজুরির টাকা তুললেও দ্বিতীয় দফার ২১ দিন হয়ে গেলেও কোন টাকা পাননি তারা।


সরেজমিনে দেখা যায়, ১নং ওয়ার্ডে ১৫ জনের নাম থাকলেও কাজ করছেন ৮ জন। ৪নং ওয়ার্ডে ১৮ জনের মধ্যে কাজ করছেন ১৫ জন। এই ওয়ার্ডে মহিলা ইউপি সদস্যের এবং ইউপি সদস্য হুদার স্ত্রীর নাম থাকলেও তারা কেউই মাটি কাটেন না। রোকসানা ও সাহানাজ নামে শ্রমিকের বাড়ি ৩নং ওয়ার্ডে হলেও তাদের নাম ৪নং ওয়ার্ডে। কিন্তু তারা কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করেন।


এ বিষয়ে ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্যের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী না গেলেও লোক পাঠিয়ে দেই।


৫নং ওয়ার্ডে ১৯ জনের নাম থাকলেও কাজে উপস্থিত ছিলেন ১৫ জন। উপস্থিত শ্রমিকরা বলেন, শফিকুল চেয়ারম্যানের লোক হওয়ায় তারা মাঝেমাঝে মাটি কাটতে আসেন। ২নং ওয়ার্ডে ১৮ জনের তালিকা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ জন। ৬নং ওয়ার্ডে নামের তালিকায় ১৩ জন থাকলেও উপস্থিত ছিলেন ১০ জন। ইউপি সদস্য আকমল হোসেনের স্ত্রীর নাম থাকলেও কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করেন তিনি। এদিকে একরামুল নামে এক শ্রমিক উপজেলা চেয়ারম্যানের লোক বলে কাজে আসেন না এবং ইউপি সচিবের বোনের স্বামীর নাম থাকলেও তার বিরুদ্ধেও উপস্থিত না থেকে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আছে।


৭নং ওয়ার্ডে শ্রমিক ১৪ জন। এই ওয়ার্ডের সর্দার মনজুরুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, আমাদের এখানে ফুলবাবু ও সাম্মী আক্তার দুইটা নাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া। ওমরা মাঝে মাঝে আইসে আবার আইসে না। আর মেম্বারের বউয়ের নাম মিলকি বানুর দেওয়া আছে আসি ঘুরি যায়।


৯নং ওয়ার্ডে ১১ জনের তালিকা থাকলেও উপস্থিত থাকে ৭ থেকে ৮ জন। ওখানে সাবেক ইউপি সদস্যের স্ত্রীর নাম রয়েছে কিন্তু কাজে আসেন না। সর্দার সবুজ বিবার্তাকে বলেন, উপজেলা থেকে শামসুজ্জামান নামে একজনের নাম দেওয়া, তিনি আসেন না।


৮নং ওয়ার্ড সরদার নির্মল বিবার্তাকে জানান, এই ওয়ার্ডে ১৪ জন শ্রমিক নিয়মিত আসে কিন্তু ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী সাফিউল ইসলাম আসেন না।


৫নং ওয়ার্ডের শ্রমিক উম্মে হানি বিবার্তাকে বলেন, টাকা না দিলে চাকরি থাকবে না এঙ্কা করি হুমকি দেন হুদা মেম্বার। হারা ভাতের চাইল বেঁচে টাকা দিছি।


৬নং ওয়ার্ডের কয়েকজন শ্রমিক বলেন ৫০০ টাকা করে না দিলে টাকা আইসোছে না। এই জন্যে এখানকার আকমল মেম্বার ৫০০ করে টাকা নিচে।


শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আকমল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি কারো কাছে টাকা নেই নাই, আমি এগুলো জানি না।


শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫০০ করে টাকা নেয়ার ব্যাপারে ইউপি সচিব মো. আশিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, এই বিষয়ে আমি জানি না। আমি টাকা নিতে যাব কেন?


এই বিষয়ে জানতে চাইলে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টা আমি জানি না। আর মেম্বার, মহিলা মেম্বারের নামগুলো কাটতে চাই কিন্তু এক বছর নাকি সময় লাগে এগুলো সমাধান করতে।


ইউপি সদস্যদের স্ত্রীর নাম তালিকায় থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র বিবার্তাকে বলেন, নাম থাকতেই পারে অসুবিধা কি?


এইসব বিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বিবার্তাকে বলেন, আইন বিরোধী কেউ কিছু করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/সেলিম /রোমেল/এনএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com