রাতের দৌলতপুরের চিলমারী যেনো লুটপাটের অভয়ারণ্য!
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ১৪:৪৪
রাতের দৌলতপুরের চিলমারী যেনো লুটপাটের অভয়ারণ্য!
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়ন এখন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। রাত নামলেই লুটপাটের রাজ্যে পরিণত হচ্ছে এক সময়ের শান্ত চিলমারী।


রাস্তার জন্য মাত্র এক শতাংশ জমি নিয়ে শিকদার, খাঁ পক্ষ বনাম মন্ডল পক্ষের মধ্যে প্রায় দুইমাস ধরে বিরোধ চলে আসছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে গত দুই মাসে ছোট-বড় সংঘর্ষে দৌলতপুর থানায় ৬ টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে শিকদার, খাঁ পক্ষ বনাম মন্ডল পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পেট্রোল ঢেলে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক লুটপাট চালায় উভয় পক্ষ। সংঘর্ষে ৬ জন অগ্নিদগ্ধ সহ প্রায় ২০ জন গুরুতর আহত হয়। আহতদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অগ্নিদগ্ধদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনষ্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হলে সেখানে তিন জনের মৃত্যু হয়।


স্থানীয়দের দাবি, এই সংঘর্ষের জন্য দায়ি চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান। কারন গত ২৫ রমজান (১৭ এপ্রিল) সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ'র বাড়িতে সমস্যা সমাধানের জন্য সালিশি বৈঠক হয়। সেখানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সাক্কির আহমেদ, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান সোনালী খাতুন আলেয়াসহ উপজেলার প্রায় সকল জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সেই সালিশি বৈঠকে ইফতারীর বিরতি দিলে মন্ডল পক্ষের নেতৃত্ব দানকারী চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মন্ডলদের নিয়ে বৈঠক শেষ না করে সংসদ সদস্য'র বাড়ি থেকে চলে যান।


এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান ও রাশিদুল ইসলাম শিকদার বলেন, মন্ডল বংশের লোকজনের সাথে আমাদের শিকদার ও খান বংশের প্রায় দুই মাস যাবৎ বিবাদ চলে আসছে। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমাদের উপর দফায় দফায় হামলা চালায় এবং চিলমারী বাজার থেকে আমাদের শিকদার ও খানদের লোকজনকে তাড়িয়ে দেয়। আমরা ঈদের বাজার পর্যন্ত করতে পারিনাই। আমরা কোন প্রকার ঝামেলা করতে চাই নাই, আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। আমাদের লোকজনের সাথে মন্ডলের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেক লোকজন গুরুতর আহত হয়। তবে আগুন লাগার কারনে মন্ডল গ্রুপের ৩ জন মারা য়ায়, এই বিষয়টি খুব দুঃখজনক। এই ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরে আমাদের লোকজনেরা বাড়িঘর ছাড়া। আমরা বাড়ি ঘরে না থাকার সুযোগে চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে মন্ডল গ্রুপের লোকজন প্রতি রাতে আমাদের ও আমাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িঘরে লুটপাট করছে। গরু ছাগল ও বাড়ি ঘরের মালামাল লুটপাট করে নিচ্ছে। রাত নামলেই মনে হচ্ছে চিলমারী লুটের রাজ্যে পরিণত হচ্ছে।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লুটপাট হয়েছে জাহাঙ্গীর শেখ, শহীদ শেখ, সিরাজ শিকদার, মুঞ্জিতল খা ,বশির, শিপন শিকদার, মসলেম শিকদার, সালাম শিকদার, হাফিজুর খা , লুৎফর খা, রুহুল আমীন, ছাহোর ব্যাপারী, নূরু মোল্লা, জমির মোল্লা, মমিন খা, হাজ্জিত খা, হানাবাদ খা, বাচ্চু খা, মোশারফ শেখ , কুদ্দুস শেখ, রহিম শিকদার সহ আরো অনেকের বাড়ি লুটপাট হয়েছে গত ছয় দিনে। সর্বশেষ শুক্রবার (৫ মে) রাতে আওয়াল খা, মুন্না দোকানদার ও আমেনা দর্জীর বাড়ি লুটপাট হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।


বাড়ি লুটপাটের স্বীকার জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মানসুরা ও শহিদ শেখের স্ত্রী সেফালি বলেন, আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ মাঝরাতে মন্ডলদের লোকজন আমাদের মারপিট করে গরু সহ বাড়ির উল্লেখযোগ্য মালামাল নিয়ে যায়। আমরা কোনো মারামারি করি নাই তার পরেও আমাদের মালামাল লুট করেছে। এ বিষয়ে আমরা থানা পুলিশের সহযোগিতা নিতে চাইলে চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বাধা প্রদান করে থানায় যেতে দেন নাই।


চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার নেতৃত্বে কোন কিছু হচ্ছে না, আমি এর সাথে সম্পৃক্ত না।


দৌলতপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, চিলমারীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়ন আছে। কোনো বিশৃঙ্খলা হতে দেওয়া হবে না। তবে সেখানে যদি কেউ লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিবার্তা/তুহিন/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com