মাকে হত্যার দায়ে ছেলে গ্রেফতার
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৯
মাকে হত্যার দায়ে ছেলে গ্রেফতার
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টারে খুন হওয়া মমতাজ বেগমের (৫০) ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম রকিকে (২১) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে তার মাকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।


মায়ের অনৈতিক কার্মকাণ্ডে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে। তার দাবি- সে তার মাকে হত্যা করেনি, একজন শয়তানকে হত্যা করেছে। হত্যার আগে সে একটি পেন্সিল দিয়ে একটি স্ক্যাচ অংকন করে। খণ্ডিত মৃতদেহের পাশ থেকে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে।


বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ এক প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।


এদিন দুপুর ১২ টার দিকে তাকে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রাম থেকে রকিকে আটক করা হয়। পরে তাকে মায়ের হত্যা মামলার গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।


নিহত মমতাজ বেগম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী এলাকার মৃত আব্দুল মতিনের স্ত্রী।


জানা গেছে, মমতাজের স্বামী লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগে গাড়ি চালক পদে চাকুরী করতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই তার দুই ছেলে শরিফুল ইসলাম বাপ্পী ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম রকিকে নিয়ে সড়ক বিভাগের আবাসিক কোয়ার্টারের একটি বাসায় বসবাস করছেন মমতাজ। বড়ছেলে বাপ্পী সড়ক বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে পিয়নের কাজ করেন। ছোট ছেলে রকি লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র।


পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, গত ২৪ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের আবাসিক কোয়াটারে মমতাজ বেগমের খণ্ডিত মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ রাতেই মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় ভিকটিমের মেয়ে রোজি আক্তার বাদি হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।


এসপি বলেন, পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করে। ভিকটিমের অতীত ইতিহাস এবং তার ছোট ছেলের সাথে মনোমালিন্য, ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য অনুসন্ধান এবং ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ভিকটিমের ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম রকির প্রতি সন্দেহ হয়। পরে তাকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।


এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, সাইফুল ইসলাম রকি তার বিধবা মায়ের ব্যক্তিগত চলাচল এবং অন্য লোকজনের সাথে মেলামেশা সহজে মেনে নিতে পারেনি। সে ছোট বেলা থেকেই মায়ের উশৃংখল জীবন-যাপন দেখে আসছিল। সে যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে, তখন তার মায়ের চারিত্রিক বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পারে। সে তার মাকে ওই পথ থেকে বার বার ফিরে আসার অনুরোধ করতো। উল্টো তার মা তার সাথে ঝগড়াঝাটি করতো এবং তাকে অপমান করতো। এসব বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মায়ের প্রতি চরম ঘৃণা ও ক্ষোভ জন্মে ছেলের।


ঈদ উদযাপনের জন্য ভিকটিম মমতাজ বেগম তার বড় ছেলে বাপ্পীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার কুশাখালীতে যান। কিন্তু ছোট ছেলে রকি তার মায়ের প্রতি ঘৃণা থাকায় গ্রামের বাড়িতে যায়নি। সে তার মায়ের চারিত্রিক বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকে। সে প্রথমে নিজে আত্মহত্যার চিন্তা করে, আবার মাকে হত্যার কথাও চিন্তা করে। পরে মাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য সে ঈদের পরেরদিন বাজার থেকে একশ টাকা দিয়ে একটি চাকু কিনে রাখে ।


ঈদের ছুটি শেষে (২৪ এপ্রিল) মমতাজ বেগম বাসায় এলে সন্ধ্যায় তাকে পেছন থেকে চুরিকাঘাত করে হত্যা করে। মায়ের গলায় চুরি চালানোর সময় তার বাম হাতের একটি আঙুলের নখ কেটে যায়।


মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে সে মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলার চিন্তা করে। তবে এতবড় দেহ লুকাতে পারবে না ভেবে মৃতদেহটি ছোট ছোট টুকরো করার চিন্তা করে।


পুলিশ সুপার জানান, মায়ের মৃতদেহ বস্তায় ভরার জন্য শরীর থেকে প্রথমে ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে। পরে দুইপা কেটে দেহ থেকে আলাদা করা হয়। খণ্ডিত দেহকে আরো ছোট করার জন্য হাঁড় থেকে মাংস আলাদা করে ছেলে রকি। দেহের অন্য অংশগুলো থেকে মাংস আলাদা করতে গিয়ে মায়ের চেহারার দিকে নজর পড়ে ছেলের। তখন মায়ের প্রতি মায়া লেগে থেমে যায় সে। ঘরের বাহির থেকে বড় ভাই বাপ্পীর কথার শব্দ শুনে পালিয়ে যায় রকি।


এসপি বলেন, রকি খুব সাবলীলভাবে মাকে হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেছে। মায়ের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা থেকে মানষিক বিকারগস্ত হয়ে খুব ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।


বিবার্তা/ সুমন/ মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com