ফরিদপুরে 'টেন্ডারবাজির' বিরুদ্ধে কর্মসূচিতে বাধা, প্রতিবাদে মানববন্ধন-স্মারকলিপি
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ২২:১৫
ফরিদপুরে 'টেন্ডারবাজির' বিরুদ্ধে কর্মসূচিতে বাধা, প্রতিবাদে মানববন্ধন-স্মারকলিপি
ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ফরিদপুরে একটি সরকারি অফিসের 'লাগামহীন টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির' বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে সংঘাত এড়াতে স্থান পরিবর্তন করে ডিসি অফিসের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করেন তারা।


এর আগে গত ২১ এপ্রিল ফরিদপুরে এলজিইডি, বিএডিসিসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের 'অব্যাহত টেন্ডারবাজির' বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পর সরব হন ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেদিন ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ক্ষমতাসীন দলের টেন্ডারবাজ নেতাদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় বিএডিসি (সেচ) অফিসের সামনে বুধবার মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি দেয় পৌর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ।


সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে বুধবার সকাল ১১টা দিকে শহরের হারোকান্দিতে ফরিদপুর বিএডিসি (সেচ) অফিসের সামনে মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি করতে গিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের নেতারা বাধার মুখে পড়েন। স্থানীয় একজন পৌর কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একদল যুবক তাদের বাধা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কর্মসূচির মাইক বহনকারী রিকশাটি সেখানে গেলে যুবকরা রিকশাটি ফেরত পাঠিয়ে দেয়। সেখানে একজন শ্রমিক নেতার সমর্থক একদল লোক গেটের সামনে পাহারা বসিয়ে অবস্থান নেয়।


বিএডিসি (সেচ) অফিসের সামনে বাধা পেয়ে ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনির ও সদস্য মো. জামালউদ্দিন কানু। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান বাবলু, সাইদুর রহমান, আবুল হোসেন, ইকবাল চৌধুরী, এস এম কামাল, শরীফ ইমরান, যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার সোহাগ প্রমুখ।


মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।


পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনির স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, 'বিএডিসির ফরিদপুর সেচ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পংকজ কর্মকার ফরিদপুর হারোকান্দি সেচ ভবনে অফিস করেন। তিনি ইচ্ছামত, বেশিরভাগ সময়ে ঢাকায় থাকেন। প্রতিটি টেন্ডার আহ্বান করেই তিনি গা ঢাকা দেন। তার মনোনীত কিছু ঠিকাদার ও অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার মাধ্যমে ৫% টাকা নিয়ে আইডি বিক্রি করে রেট দিয়ে দেন। দরপত্র ওপেন করে তদন্ত করে দেখেন ওনার মনোনীত ঠিকাদার ছাড়া কেউ কাজ পান না, কারণ সঠিক রেট উনার মনোনীত ঠিকাদার ছাড়া কারো কাছে নেই। সর্বশেষ টেন্ডারে আইডি ৮০৮৮৭৯ থেকে ৮০৮৯৪১ পর্যন্ত ৬২ গ্রুপ কাজ প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজে ১ কোটি টাকা ভাগ করে নিয়েছেন ফরিদপুরের আলোচিত রাজনৈতিক গডফাদাররা ও পিডি পংকজ কর্মকার। পিডি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিজস্ব মনোনীত ঠিকাদারদের মাঝে কাজ বণ্টন করেছেন। তার সাথে জড়িত ফরিদপুরের একজন আলোচিত শ্রমিক নেতা, তার পার্টনার বিএডিসির সিন্ডিকেটের সদস্য, স্থানীয় একজন বিএনপি নেতা আর তাদের পেছনের শক্তি বর্তমান ক্ষমতাধর দলীয় গডফাদাররা।'


স্মারকলিপিতে বলা হয়, 'পিডি এমনে সময় অফিস করেন না, কিন্তু ঠিকাদারি বিল নেয়ার সময় ঠিকই ব্যাগ নিয়ে হাজির হন। পিডি পংকজ এর আগে পাইপ সাপ্লাইয়ের টেন্ডার করে তার আত্মীয়কে কাজ পাইয়ে দিয়ে নিম্নমানের পাইপ সাপ্লাই দিয়েছেন। বিএডিসির গোডাউন চেক করলে এবং যারা বারিড পাইপের কাজ করেছেন এমন ঠিকাদারদের কাছে খোঁজ নিলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। অধিকাংশ পাইপ সাইটে নেয়ার সময় সামান্য ঝাঁকিতে ভেঙে যায়। আবার গোডাউনে অনেক পাইপ ফাটা অবস্থায় আছে।'


জেলা প্রশাসককে দেওয়া স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, 'বিএডিসির মত এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ অফিস যেখানে সরাসরি প্রান্তিক কৃষকদের কৃষিকাজের সুবিধার্থে সেচের পানির সুব্যবস্থা করার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ সম্পন্ন করার কথা, উল্টো সেখানে হয় ব্যাপক দুর্নীতি। শুনলে অবাক হবেন- এই প্রকল্প এরিয়া নির্ধারণে পিডি কৃষকদের মাঝ থেকে দালালদের মাধ্যমে প্রকল্প পাসের নামে ১০% টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। যারা টাকা দেন না তাদের প্রকল্প পাস হয় না।'


স্মারকলিপিতে বলা হয়, 'বিএডিসির অনেক নতুন লাইসেন্সধারী আছেন যারা বিগত ৫ বছর ধরে লাইসেন্স ফি দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এলটিএম টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না। এলটিএম করে টেন্ডার করলে লটারি হবে, লটারিতে বিএডিসির তালিকাভুক্ত সকল ঠিকাদার অংশগ্রহণ করতে পারবে। লটারিতে কাজ পেলে তো ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না পিডি। তাই সুকৌশলে পিডি রেট দিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য টেন্ডার ওটিএম করেন। আমাদের দাবি- টেন্ডার ওটিএম করলে রেট ওপেন করতে হবে, যার কাজ নেয়ার যোগ্যতা আছে তিনিই কাজ পাবেন। আর তা না হলে এলটিএম টেন্ডার আহ্বান করেন, সবাই লটারিতে অংশগ্রহণ করি। এই দুটি প্রক্রিয়াই স্বচ্ছ। অথচ এই প্রক্রিয়া পিডি অনুসরণ না করে শুধুমাত্র নিজের এবং কিছু অসাধু রাজনীতিকের সুবিধার জন্য রেট গোপনের টেন্ডার আহ্বান করেন। আপনাদের মাধ্যমে বিএডিসি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এই অনিয়মের টেন্ডার বাতিল করার এবং প্রকল্প পরিচালকের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি সুষ্ঠুভাবে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।'


তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকল্প পরিচালক পংকজ কর্মকার বলেন, যিনি বা যারা এসব অভিযোগ করছেন তারা কেউই বিএডিসির তালিকাভুক্ত ঠিকাদার নন। এ ধরনের অভিযোগ করারই কোনো এখতিয়ার তাদের নেই।


তিনি বলেন, 'আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে টেন্ডার আহ্বান করি। এই প্রক্রিয়ায় দেশের যেকোনো জায়গা থেকে বাড়িতে বসে যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ অংশ নিতে পারেন।'


গোপন রেট পছন্দের ঠিকাদারদের জানিয়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে পংকজ কর্মকার বলেন, মনগড়া ও ভিত্তিহীন যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা হাস্যকর।


বিবার্তা/এনএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com