সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে দুর্গাপুর ইউএনও’র ঈদ
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:৪৫
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে দুর্গাপুর ইউএনও’র ঈদ
এস এম রফিক, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে ঈদ মানে একটু ভালো খাবার, একটা নতুন পোশাক। কিন্ত ফান্দা আবাসনের চিত্র একেবারে উল্টো। ঈদের দিনেও কাজ করতে দেখা যায় অনেক শিশুকে। ওই আবাসনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঈদ কখনো আনন্দের আবার কখনো বেদনার। ভালো খাবার আর নতুন পোষাক তো দূরের কথা- আবাসনে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মনেই হয় না আজ ঈদ।


নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ২নং সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ফান্দা আবাসন। ওই গ্রামে মুজিববর্ষের ২৫টি ঘর ইতোমধ্যে উদ্ভোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘ গুলোতে নানা পেশার বেশকিছু হতদরিদ্র পরিবার বসবাস করছেন। এবার ঈদে ওই সকল পরিবারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মুজিববর্ষে পাওয়া নতুন ঘরগুলো। ওই ঘরে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এক অন্যরকম ঈদ আনন্দ উপহার দিলেন ইউএনও রাজীব-উল-আহসান।


গতকাল সোমবার বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে এমনটিই দেখা গেছে। এ সময় সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফুল ইসলাম, কৃষি অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান, একাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিনসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিগণ, অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।


সুবিধাবঞ্চিত শিশু ফাতেমা বিবার্তাকে জানায়, ঈদ কী আমরা জানি না, কবে ঈদ গেছে তাও জানি না, তয় মনে অইতাছে আইজ আমরার ঈদ। সার আমরার লাগি লাল বেলুন, মিষ্টি, চলকেট (চকলেট), চিপসু (চিপস্) দিছে, সবারে কাছে নিয়া খাওয়াইয়া দিছে, আইজই আমরা ঈদ, এ কথাগুলো বলে বেলুন নিয়ে দৌঁড়ে চলে গেলো আপন মনে।


মুজিবর্ষের ঘরপ্রাপ্ত রমিজা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বিবার্তাকে বলেন, ‘টেউনু সাইব আইজ আমরা হোলাহানের লাগিন মিষ্টি, লজেন, চিপস এইতা আইন্যা নিজ হাতে মুহে তুইল্যা দিতাছইন, মনডা কইতাছে আইজ আমরার ঈদ’’ সারাটা জীবনভর মাইনশের বাড়িত লাত্থি-গুতা খাইয়া এই বাড়ি হেই বাড়ির বারিন্দাত, ইস্কুল ঘরের বারিন্দাত রাইত কাডাইছি। এইবার নিজের ঘরেই আমরা ঈদ করতে হারছি। শেকের বেডি, শেখ হাসিনার লাগিন দোয়া করি হেইলা বাইচ্চা থাউক।


দিনমজুর আকবর হোসেন বিবার্তাকে বলেন, আমাদের মতো গরিবের আলাদা কোন ঈদ আয়োজন নাই। বাচ্চাদের ভালো খাবার, নতুন জামা দিতে পারি নাই, কাজেই আমাদের কাছে সব দিনই সমান। আজ ইউএনও সার আমাদের বাচ্চাদের নিয়া ঈদের আনন্দ দেয়ার আয়োজন করছে, তা দেখে ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা সুবিধাবঞ্চিত না, হয়তো আমরাও একদিন ঘুরে দাঁড়াব। জীবনের পুরো সময় কাটিয়েছি অন্যের ভিটায়। ইউএনও সার আমারে একটা পাকা ঘর দিয়া আমার মতো গরিব মানুষের উপকার করছেন। আজ এই ঘরে পোলাপান নিয়ে ঈদ করতে পেরে আমরা খুব খুশি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।


এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বিবার্তাকে বলেন, মুজিববর্ষের ঘরগুলোতে নিম্নআয়ের মানুষের বসবাস। ওখানে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা ভেবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের ঈদ আনন্দ দিতে আমি এ আয়োজন করেছি। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। ওই শিশুদের কথা মাথায় রেখে ওখানে শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের।


তিনি আরো বলেন, এক ইঞ্চি জমি যেন খালি পড়ে না থাকে। প্রত্যেকেই যেন ওই জমিতে কাজ করেন। যেখানেই খালি জায়গা, সেখানেই উৎপাদনমুখী কাজ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশকে মাথায় রেখে এ উপজেলার ৫টি আবাসনের খালি জায়গা নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা শুরু করেছি। এতে একদিকে যেমন আবাসনে বসবাসরত সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটবে, অন্যদিকে সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাদের।


বিবার্তা/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com