রংপুরে একুশে পদকপ্রাপ্ত মজিবর মাস্টারের স্বরণে স্মৃতি নেই!
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১:২৭
রংপুরে একুশে পদকপ্রাপ্ত মজিবর মাস্টারের স্বরণে স্মৃতি নেই!
রংপুর প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও ২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠাকে এ বছর একুশে পদক দেয়া হয়েছে। এই বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনে পদক পেয়েছেন তিনজন। তার মধ্যে গুণী শিক্ষক বীরমুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক মজিবর রহমান মাস্টার একজন।


তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতবপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামের সেরাজ উদ্দিনের ছেলে। ১৯৩৭ সালে তার জন্ম।
গত রবিবার ১২ ফেব্রুয়ারী এ পদক ঘোষণা করা হয়।
এই সময়ে বয়সের ভাড়ে নতজানু হওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখনও চলছেন বীরের বেসে। পায়ে হেটে চলাচল করতে না পারলেও স্মৃতিশক্তি ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ মজিবর মাস্টার। বদরগঞ্জে বাড়ি হলে ও যুবক সমাজ জানে না এই ভাষাসৈনিক সম্পর্কে। নেই কোন স্মৃতিচিহ্ন। মজিবর মাস্টার কে স্বরণ রাখার মতো কোন স্মৃতি নেই নিজ উপজেলা বদরগঞ্জ তথা রংপুর জেলায়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই ভাষাসৈনিক।
এলাকাবাসীর দাবি মজিবর মাস্টারের মৃত্যু হলে এমন কোন স্মৃতি বদরগঞ্জ তথা রংপুরে নাই যে স্বরণ রাখবে। মজিবর রহমানের মতো মানুষরা মারা গিয়ে ও অমর। তাই যাতে তাকে স্বরণে রাখা যায় এমন স্মৃতি এই স্বাধীনতা দিবসেই উদ্যোগ নেওয়া হোক।


যুব সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন আমরা যেমন মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি সেরকম তারা যেন ১৯৪১ সালে দেশকে বিশ্বের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করে।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, দেশকে উন্নত করার জন্য শহর কেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা করলে হবে না, সমস্ত গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে হবে।
মজিবর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন শহর ও গ্রামে স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইন করি। যাতে ছাত্ররা আন্দোলনমুখী হয়ে ওঠে। বুড়িপুকুর, লালদিঘিরহাট, সয়ার খোড়াগাছ, শ্যামপুরে ক্যাম্পেইন করি। এমনকি সাধারণ মানুষও আমাদের আন্দোলনের পক্ষে ছিল। সবাই মাতৃভাষা বাংলা চাই। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করায় জেলখানায় বন্দি ছিলেন। ওখান থেকে উনি চিরকুট পাঠিয়ে দেন বাংলা ভাষার জন্য আমরা যেন আন্দোলন করি। আমি ১৯৫২ সালে মেট্রিক পরিক্ষার্থী । ভাষার দাবিতে আন্দোলন করায় আমার নামে ওয়ারেন্ট হয়।


ভাষা আন্দোলনের বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন "বদরগঞ্জ হাই স্কুল অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি ১৯৪৮সালে ঢাকা গিয়েছিলাম কায়েজ আজম আসছিলেন। উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র ভাষা তখন আমরা নো নো বলে স্লোগান দিয়েছি। রামনাথপুরের ডাক্তার নাসিম আমার স্যার ছিলেন তার সাথে আমরা পোস্টার লিখি রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ওই ভাসনের প্রেক্ষিতে বাড়িতে এসে ইদ্রিস লোহানি ও ইউনুস লোহানি বাড়িতে এসে অবস্থান করি। সেখান থেকে আমরা বিভিন্ন স্কুল কলেজে ক্যাম্পেইন করি যাতে করে ছাত্ররা আন্দোলন মুখি হয়। বুড়ি পুকুর,লালদিঘির হাট, সয়ার খোড়াগাছ, শ্যামপুরে ক্যাম্পেইন করি। এমনকি সাধারণ মানুষকেও বোঝাই যাতে সবাই মাতৃভাষা বাংলা চায়। তখন শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করায় জেলখানায়। ওখান থেকে উনি চিরকুট পাঠিয়ে দেয় তখন আমরা আন্দোলন করি বাংলা ভাষার জন্য। আমি ১৯৫২ সালে মেট্রিক পরীক্ষার্থী।১৯৫২ সালে ডাক বাংলায় ভাষার দাবিতে আন্দোলন করবো বলে মিটিং করছিলাম সে সময় আমার নামে ওয়ারেন্ট হয়। তিনি আরো বলেন, রংপুর মহকুমায় সব জায়গায় আন্দোলন করেছিলাম। তখন মতিউর রহমান মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭০ সালে ভোট ক্যাম্পেইনে আসে বঙ্গবন্ধু কালেক্টরেট ময়দানে। তখন আমি শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক। বঙ্গবন্ধুর ওই সভায় ছাত্র শিক্ষক অনেককে নিয়ে গিয়েছিলাম। সভায় ছয়টা রুপার চান্দি নিয়ে গিয়েছিলাম তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে মঞ্চে ডেকে নেয়। বঙ্গবন্ধু তখন জিজ্ঞাস করে' তুমি এটা করলে কেন' তখন আমি বললাম ৬ দফাকে স্বরণ রাখার জন্য এটা করছি। তখন পিঠে থাপড় দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন "সাবাস সাবাস। ১৯৭১ সালে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করি। ৭ই মে বদরগঞ্জ শ্যামপুর থেকে লোকজন নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করি।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি খুবই খুশি দেশ জাতির জন্য কাজ করে প্রধানমন্ত্রী আমাকে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহর কাছে তার দীর্ঘায়ু কামনা করি যেন প্রধানমন্ত্রী উনি দীর্ঘদিন থাকতে পারেন।
মজিবর মাস্টার বলেন, 'আমার স্মৃতি দেওয়ার মালিক আমি না বিবেকবান ও চেতনাসম্পন্ন মানুষ, ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছি। সেই চেতনা এখন আর নাই চেতনা থাকলে আমার স্মৃতি হইত। মানুষ শান্তিতে থাক এটাই চাওয়া। আমি চাইব না যদি কেউ করে আমার স্মৃতি আমি খুশি হব।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাসুম রেজা বলেন, এত বড় একজন মানুষের নামফলক নাই বা কোন স্মৃতি নাই উপজেলা জেলায় তাই উপজেলাবাসীর দাবি মজিবর স্যারের নামে কোন স্মৃতি বা ফলক হোক।'
কুতুবপুর খিয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদরুল ইসলাম বলেন, মজিবর স্যার অনেক বড় মাপের মানুষ তার নামে কোন স্মৃতি রংপুরে হোক জোড় দাবি জানাই।


বদরগঞ্জ ইউএনও আবু সাইদ বলেন, এটি আমাদের সকলের গর্বের বিষয় যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরুস্কার বদরগঞ্জের মানুষ পেয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করছি তার নামে হতে পারে কি না উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে সভায় বিষয়টি আলোচনা করে দেখা যাক কি হয়।
জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, " এটি আমরা ভাবতেই পারি না তিনি একুশে পদক পেয়েছেন, আমরা তাকে সংবর্ধনা দিয়েছি। সরকারের কোন নির্দেশনা থাকলে অবশ্যই দেখবো। তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। আমি আমার উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলি এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না।


বিবার্তা/সেলিম /মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com