বসন্তের শেষে সৈকতে লাখো পর্যটকের ঢল
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ১২:৫১
বসন্তের শেষে সৈকতে লাখো পর্যটকের ঢল
তাফহীমুল আনাম
প্রিন্ট অ-অ+

পবিত্র শবেবরাত ও দোলপূর্ণিমা সহ পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো পর্যটকের ঢল।


কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পাশ্ববর্তী পর্যটন স্পটগুলোতে কিলোমিটার জুড়ে মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা যায়। এই পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণ। শহর এখন পর্যটকদের দখলে। রমজানের আগে হয়তো আর ছুটি হবে না তাই এত পর্যটকের সংখ্যা লক্ষ্য করা যায়। 


গত ৭ মার্চ মঙ্গলবার পবিত্র শবেবরাত ও দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অফিস আদালত বন্ধ টানা তিন দিন। এর'ই মধ্যে যোগ হয়েছে শুক্র-শনিবারের ছুটি। তবে মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বার অফিস আদালত খোলা থাকলে ও ছিল ঢিলেঢালা ভাব। 


শুক্রবার,১০ মার্চ সকাল থেকেই ভিয় বাড়তে শুরু করেছে সৈকতে। সমুদ্রের মতোই জোয়ার উঠেছে এখন কক্সবাজার পুরো এলাকায়।


তাই ব্যবসায়ী চাকুরীজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাই ছুটে এসেছেন কক্সবাজারের তীরে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে সরকারী বেসরকারী কর্মচারীদের মধ্যে কেউ কেউ (৯ মার্চ বৃহস্পতিবার) অফিস আদালত খোলা থাকলেও ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। কারণ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটিতে অনেকে ছুটে আসেন কক্সবাজারে। 


এবার স্বাধীনতা দিবস পড়ে গেছে রমজানে তাই সিয়াম সাধনার এ সময় মানুষ খুববেশী ভ্রমণ করেন না।হয়তো সে কারণে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করেছেন। তাদের অনেকেই আগাম বুকিং নিয়েছেন হোটেল, মোটেল ও কটেজগুলোতে। ব্যয়বহুল জেনেও অনেকে আগাম টিকিট কেটেছেন। সেন্ট মার্টিনেও এবার আগাম কিছু বুকিং পেয়েছেন সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।


শুক্রবার, ১০ মার্চ কক্সবাজার কলাতলী শহরের সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা বা বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত কয়েক'শ পর্যটক। সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও তারা রুম পেলেও ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেকে।আবির হোসেন বক্কর ও মদিনা আহমেদ অপ্সরী নামের দুই পর্যটক বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরা থেকে বাসে করে কক্সবাজার এসেছি। আসার সময়ও রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছি। আবার এখানে এসে দেখি কোনো হোটেলে রুম নেই। অনেক খুঁজাখুজির পরে রুম পেলাম।


খুলনা থেকে আসা শামীম সওয়ার বলেন, সকালে বাস থেকে কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে নেমেছি। এরপর কলাতলী নামক একটি রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা করতে গিয়ে দেখি সেখানেও পা রাখার জায়গা নেই। পরে পাশের একটি রেস্তোরাঁয় ব্রেকফাস্ট করেছি। এরপর রুম খুঁজতে যে হোটেলেই যাই সবার একটি কথা—রুম খালি নেই। শেষমেষ টমটম চালকের সহায়তায় কলাতলীর ভেতরে আমারী রিসোর্টে পেয়ে গেলাম রুম।তবে ভাড়া একটু বেশী তবুও রুম পেয়ে আমরা খুশি।


সেন্ট মার্টিনেও পর্যটকদের ভিড় রয়েছে বলে জানা যায়। পরের দিন যাব সেন্টমার্টিন সেখানে রুমের ক্রাইসিস। তারপর কর্ণফুলী জাহাজের পরিচালক আমাদের যাতায়াতের টিকেটের ব্যবস্থা করে দিলেন, আর সেন্টমার্টিনে একটি রিসোর্ট বুকিং করে দিলেন।তিনি হোটেল ও জাহাজে আমাদের ১৫ শতাংশ হারে ডিসকাউন্ট ও দিলেন।


খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, কয়েকদিন ধরেই দ্বীপে পর্যটক বেড়েছে। এ দিকে সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন শিক্ষা সফরে অধ্যাপক আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল রুম না পেয়ে ঘুরতে ঘুরতে অভিজাত হোটেল সী প্যালেসে।


হোটেল সী প্যালেসের ম্যানেজার আশরাফ জামান বলেন, আমার হোটেলে ৫০টি রুম আছে। সব এক সপ্তাহ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য আসছেন। অনেককে না করতে হয়েছে।তিনি তাদের কে পার্শ্বের হোটেল ইউনি রিসোর্টে রুমের ব্যবস্থা করে দেন।


কক্সবাজার কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের সভাপতি মুকিমখাঁন বলেন, শেষ মৌসুমে প্রচুর পর্যটক পেয়ে তারা খুবই আনন্দিত।পর্যটকদের কোথাও কোন অসুবিধা হলে হেল্পডেস্কে এসে জানানোর সাথে সাথে প্রশাসন ও হোটেল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভি ক্তিতে তা ব্যবস্থা গ্রহন করতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারী ও রয়েছে সব পর্যটন স্পটে।


সাপ্তাহিক ছুটিসহ অঘোষিত ৫ দিনের ছুটি ঘিরে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন প্রায় ৩ লাখের ও অধিক পর্যটক। শহরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। এ সম্পর্কে ট্যুর অপারেটর সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ছুটিতে কক্সবাজারের ৫৫০টি হোটেলের সব বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অনলাইনে রুম চাইলেও তাদের দিতে পারছি না।


গতকাল কক্সবাজারের লাবণী, সী-গাল, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্ট পাটোয়ারটেক থেকে দেড় কিলোমিটার সৈকতজুড়ে পর্যটকের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। পর্যটকরা দল বেঁধে সাগরের নীল জলরাশি উপভোগ করছেন। অনেকে আবার সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরছেন । সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকদের দায়িত্বে নিয়োজিত লাইফগার্ড কর্মী আব্দুর রহমান বলেন, কাল থেকে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের চাপ বেশি, যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এত মানুষ সমুদ্রসৈকতে নেমে যায় আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন কষ্ট হয়ে পড়ে।


কক্সবাজারে বর্তমানে তিন লাখের বেশি পর্যটক রয়েছে। কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার পর্যটক গতকাল সেন্ট মার্টিন গেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোয় তাদের সদস্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেন টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম


কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টা মাঠে আছি। যেখানে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অভিযান চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।


বসন্তের শেষ মৌসুমে পর্যটকরা কক্সবাজারে ছুটে আসছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে মাঠে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মুহম্মদ শাহিন ইমরান।


বিবার্তা/তাফহীমুল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com