চাঁদা না দেয়ায় বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের এক বহিষ্কৃত সদস্যের নেতৃত্বে স্যানমার ওশান সিটি নামের একটি কোম্পানির বাগান থেকে ২০০টি রাবার গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই বাগানে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও প্রাণনাশসহ নানা ধরণের হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত নামা ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর)দুপুরে উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন কোম্পানির সিনিয়র ম্যানেজার মোহাম্মদ মাইনুল হক।

মামলায় উল্লেখিত অভিযুক্তরা হলো- বহিষ্কৃত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কুতুব উদ্দিন (৩২), হোছাইন (৪৫), ইমাম হোসেন (৩৪), আবদুল হামিদ (৩৬), বাবুল হোসেন (২৮), জসিম উদ্দিন (২২), রহমত উল্লাহ (৫৫), আহম্মদ হোসেন (৪৫), টুনু (২০) ও সাদ্দাম হোসেন ড্রাইভার (৩৫)। এরা সবাই পাগলীর আগা এলাকার বাসিন্দা।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ১৯৮৩-৮৪ সালে ৩ (আর) নং রাবার বন্দোবস্তি মোকাদ্দমা মূলে চট্টগ্রামস্থ স্যানমার ওশান সিটির নামে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের পাগলীর আগা এলাকায় ২৮৬নং ফাঁসিয়াখালী মৌজার সিটি নং ১৮, রাবার প্লট নং ১০৫৭৬, রাবার হোল্ডিং নং ৬২ মূলে ২৫ একর জমি রয়েছে। এ জমিতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে রাবার বাগান করে ভোগ করে আসছে স্যানমার ওশান সিটি কর্তৃপক্ষ।

এতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত সদস্য কুতুব উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি বাহিনী বাগানের মালিক স্যানমার ওশান সিটির কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদাদাবিকরেন। দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় ১ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে মামলায় উল্লেখিত অভিযুক্তরা অস্ত্র নিয়ে রাবার বাগানে ঢুকে পাঁচ দিনের মধ্যে চাঁদার ১০ লাখ টাকা না দিলে বাগানের গাছ কেটে বিক্রি করে টাকা আদায় করবেন বলে হুমকি দেন। বাধা দিলে খুন করে লাশ গুম করে ফেলবে বলেও হুমকি দেন তারা। এতেও বাগানের মালিক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে কুতুব উদ্দিনসহ অন্যরা বাগানের কেয়ারটেকার রুবেল, নুরুন্নবী, নুরুল কবির ও বাবু মিয়াকে মারধর করে কার্যালয় থেকে বের করে দেয়। পরে তারা বাগানে সৃজিত ২৫ বছর বয়সী ২০০টি রাবার গাছ কেটে গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে যায় এবং ১০০টি রাবার গাছ নষ্ট করে আট লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেন।

মামলার বাদী স্যানমার ওশান সিটির সিনিয়র ম্যানেজার মাইনুল হক বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত সদস্য কুতুব উদ্দিনের সন্ত্রাসী আগ্রাসনে এলাকায় বাগান সৃজন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে প্রায় ৪০ বছরের সৃজিত বাগান দখলের জন্য চেষ্টা করছেন কুতুব উদ্দিন।

তিনি বলেন, বর্তমানে এলাকায় বাগান মালিক ও স্থানীয় লোকজনের মাঝে আতঙ্কের অপর নাম কুতুব উদ্দিন গং। তাছাড়া কুতুব উদ্দিন ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা প্রতিনিয়ত ১০-১৫টি গরু ছেড়ে দিয়ে বাগানের চারা গাছ গুলো নষ্ট করে ফেলছে। এক পর্যায়ে ২০০টি রাবার গাছ কেটে নিয়ে যায়। বাধা দিলে বাগান কর্মচারীদের গায়ের দিকে তেড়ে আসে এবং নারী নির্যাতন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার হুমকি দেয় তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে জানায়, কুতুব উদ্দিন খারাপ প্রকৃতির মানুষ। তিনি পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। তার মাছের প্রজেক্টে ১০-১৫ জন মহেশখালী-কুতুবদিয়া এলাকার সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোককে চাকরি দিয়ে রেখেছেন। প্রশাসন গেলে তাদের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দিলেও মূলত তাদেরকে লাঠিয়াল ও সন্ত্রাসী হিসেবে ব্যবহার করছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত কুতুব উদ্দিন বলেন, আমি কারো বাগানের গাছ কাটিনি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

লামা উপজেলা সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কৌশলী ইব্রাহিম বলেন, স্যানমার ওশান সিটির অভিযোগটি এফ.আই.আর হিসেবে নেয়ার জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় কুতুব উদ্দিনকে পরিষদের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে লামা থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, স্যানমার ওশান সিটি কর্তৃক আদালতে দায়েরকৃত মামলার কপি হাতে পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিবার্তা/আরমান/তাওহীদ