
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে আকস্মিক সরিয়ে দেয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। তবে বিসিবি বা এনএসসি শুরুতে এ নিয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না দিলেও গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
শনিবার ৩৫তম জাতীয় হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টের ফাইনালের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ফারুক অপসারণের ইস্যু নিয়ে সজীব ভূঁইয়া জানান, ফারুক আহমেদের অপসারণ কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয় বরং পারফরম্যান্স-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত। গেল নয় মাসে ক্রিকেটে আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা দেখেছি গেল নয় মাসে বিসিবিতে নতুন নেতৃত্ব আসার পরে যে প্রত্যাশা ছিল, সে অনুযায়ী উন্নয়ন হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর থেকেই অবনতি চোখে পড়ছে। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিপিএলের সত্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে আমরা অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি। গণমাধ্যমেও এসব উঠে এসেছে। সেই রিপোর্টে ফারুক আহমেদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাই পরিবর্তন ছিল সময়ের দাবি।'
এর আগে বৃহস্পতিবার বিসিবির ফারুকসহ ১০ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ডের মধ্যে ৮ পরিচালক ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান। চিঠিতে ফারুককে 'স্বেচ্ছাচারী' ও 'আধিপত্যবাদী' আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'বিসিবির ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জন যখন অনাস্থা জানান, তখন বোঝা যায় বোর্ডে ঐক্য ছিল না। এমন পরিবেশে কাজ করা সম্ভব নয়। ক্রিকেটের ক্রমাগত অবনতি এবং বোর্ডে বিভাজন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।'
এ সময় তিনি স্পষ্ট করে দেন, 'ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমি কথা বলেছি। এটি দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নয়। নির্বাচকরা যদি দেখেন কোনো একজন খেলোয়াড় প্রতিনিয়ত খারাপ খেলেন, তাকে তো আর দলে রাখবে না। আমাদের দিক থেকেও ব্যাপারটি এমন ছিল। আমরা আবারও ক্রিকেট অংশীজন যারা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।'
বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পর ফারুক আহমেদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল মাঠে বিপিএল আয়োজন করা। ব্যতিক্রম ভাবে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। তবে তাতে ব্যর্থ হন তিনি। কথা ছিলো বিপিএল ফাইনালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস-সহ আরও দেশের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত হবেন। তবে ফারুক বোর্ডের ব্যর্থতার কারণেই এমন কিছু দেখা যায়নি। এমনটি জানিয়েছেন সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, 'বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীকে নেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও শঙ্কার কথা জানানো হয়েছিল। তারপরও এক ধরনের ব্যক্তি সিদ্ধান্তে সেই দল দেওয়া হয়েছিল। তারপরে খেলোয়াড়দের বেতন দেওয়া, হোটেলে টাকা দেওয়ার মতো বিষয় নিয়েও সরকারকে বিব্রত হতে হয়েছে। এই বিষয়টি আমরা কেউই চাইনি। আমাদের সরকার প্রধানের (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস) থাকার কথা ছিল বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচে। বিপিএল কেন্দ্রীক এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণে তাকে আমরা আনতে পারিনি, যেটা আমাদের জন্য ও বোর্ডের জন্য লজ্জাজনক পরিস্থিতি সে সময়ে তৈরি করেছিল।'
এক পর্যায়ে ফারুক আহমেদকে অপসারণ ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবির পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'দেখতে হবে প্রক্রিয়াটা কী (বিসিবির)। যে দুই জনকে মনোনয়ন দেওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে এনএসসির, সেই জায়গায় এনএসসি চাইলে মনোনয়ন দিতে পারে, চাইলে সরিয়েও নিতে পারে। এনএসসি তাকে (ফারুক আহমেদ) মনোনয়ন দিয়েছিল, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের মনে হয়েছে, এখন এই মনোনয়ন রাখার যৌক্তিকতা নেই। আমরা কিন্তু বিসিবি সভাপতিকে অপসারণ করিনি, আমরা তার পরিচালক মনোনয়ন সরিয়ে নিয়েছে। তার প্রক্রিয়া হিসেবে তার সভাপতিত্ব চলে গেছে। পরে আমরা একজন পরিচালককে মনোনয়ন দিয়েছি এবং বোর্ডের যারা রয়েছেন তারা আইসিসির নিয়ম অনুসরণ করে, ক্রিকেট বোর্ডের যে নীতিমালা রয়েছে, সেটি অনুযায়ী আরেকজনকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।'
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]