টাঙ্গাইলে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে শিল্পীরা
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:২৯
টাঙ্গাইলে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে শিল্পীরা
টাঙ্গাইল থেকে ইমরুল হাসান বাবু
প্রিন্ট অ-অ+

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১৩ অক্টোবর, রবিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুগোৎসব।


২ অক্টোবর, বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্রে করে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীরা। শিল্পীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়া ও রং-তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরীতে গড়ছেন দেবী দুর্গাকে। এছাড়া কার্তিক, গণেশ ও সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পীরা।


সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাণিজ্যিক এলাকা করটিয়া ইউনিয়নের তারটিয়া পাল পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমাশিল্পীদের কেউ প্রতিমা তৈরিতে আবার কেউবা সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। দিনরাত প্রতিমার পেছনে সময় ব্যয় করছেন। কথা হয় প্রতিমাশিল্পীদের সাথে। তারা বলেন, আগের চেয়ে কাজ বেড়েছে, তবে সেই তুলনায় পারিশ্রমিক বাড়েনি। এছাড়া প্রতিমা তৈরির উপকরণের দামও চড়া। উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ- যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।


প্রতিমা শিল্পী সুমন পাল বিবার্তাকে জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবার ভিন্ন রকম পরিবেশ। এ কারণে আমরা সেভাবে কাজ করতে পারছি না। প্রথমে কাজ ছিল না। এখন কিছু কাজ আসছে। গতবছর ১০টা মণ্ডপের কাজ করেছি। এবার ছয়টি বানিয়েছি। মজুরি অর্ধেকে নেমেছে। বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতেই এ কাজ করে যাচ্ছি।


শিল্পী গোবিন্দ পাল বিবার্তাকে বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। মাটির অংশের কাজ শেষ করেছি। রঙের কাজও শেষ পর্যায়ে। এখন প্রতিমাগুলোকে অলংকার দিয়ে সাজিয়ে পূজারিদের বুঝিয়ে দিব। তিনি আরও বলেন, আমরা আগে যে বাঁশ ২শ টাকায় কিনতাম, এখন তা ৫০-৬০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আগে তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডপের প্রতিমা হয়ে যেত। এখন সেই মণ্ডপ তৈরি করতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার খড় লাগে। খড়ের পরিমাণ একই লাগলেও দাম দ্বিগুণ। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হতো ৪০-৫০ হাজার টাকা। এখন সেই প্রতিমা তৈরিতেই খরচ হয় লাখ টাকার উপরে।


মৃৎশিল্পী সন্তোষ পাল বিবার্তাকে বলেন, বংশপরম্পরায় আমি মৃৎশিল্পের কারিগর। আমার বাপ-দাদারা এই কাজ করে গেছেন। এই কাজ ছাড়া অন্য কোনও কাজও তেমন পারি না। দুর্গাপূজার সময় আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আর বাকি সময়টুকু টুকটাক কাজ করি। তিনি আরও বলেন, গতবছর দুর্গাপুজায় ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। এবার পরিস্থিতি তেমন ভালো না দেখে ছয়টি প্রতিমা তৈরি করেছি।


ভয়ে ছিলাম এবার পূজা হবে কি না। যে উপকরণ গত বছর ১২ হাজার টাকায় কিনেছি, সেটা এবার ২৫ হাজার। যে রং ১৫০ টাকায় কিনতাম, সেটা এখন ২০০-২৫০ টাকা। সেই হারে পারিশ্রমিক যদি বাড়ত, তাহলে পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করতে হত না।


কারিগর সজীব পাল বিবার্তাকে বলেন, প্রতিমার কাজ শেষ করেছি চারদিন হলো। এখন চলছে রং ও সাজসজ্জার কাজ। অনেকে তাদের পছন্দের শাড়ি দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে নামিদামি রং-বেরঙের শাড়ি, অলংকার ও মাথার মুকুট দিয়ে গেছে। এখন আস্তে-আস্তে সেগুলোর কাজ করতেছি।


তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ৫০ কেজির এক বস্তা মাটির দাম দুই হাজার টাকা, সাথে পরিবহণ খরচ। কিন্তু আমাদের পারিশ্রমিক বাড়েনি।



করটিয়া পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মলয় চন্দ্র পাল বিবার্তাকে বলেন, জেলায় সর্বোচ্চ মণ্ডপ তৈরি হয় করটিয়াতে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমরা জাঁকজমকপূর্ণ পূজা মণ্ডপ তৈরি করব। ইতোমধ্যে আমাদের মণ্ডপের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশাকরি কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্‌যাপন করব।


জাতীয় হিন্দু মহাজোট টাঙ্গাইল জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক অলক কুমার বিবার্তাকে বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি বিএনপি, জামায়েত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত ইসলামসহ সমস্ত দল আমাদের পাশে আছে। এছাড়াও মন্দির কমিটি থেকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। আশা করি কোনো ঝামেলা ছাড়াই এ জেলায় সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে।


টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গুণ ঝন্টু বিবার্তাকে বলেন, ইতিমধ্যে পূজা উদ্‌যাপন কমিটি ও সর্বদলীয় লোকদের সাথে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। আশা করি প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমাদের দুর্গা উৎসব সুন্দর ও সার্থক হবে। তবে এর মধ্যে সারাদেশে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য। কতিপয় দুষ্কৃতকারী আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আমরা সমাজের সকল শ্রেণির মানুষদের নিয়ে সঙ্ঘবদ্ধভাবে পাহারার মাধ্যমে দুর্গা পূজা যাতে সুন্দর ও সার্থক হয় সেটা করব।


টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বিবার্তাকে জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। পুলিশ সুপারের অফিসে কন্ট্রোল রুম করতে যাচ্ছি। ১২৫ জনের মতো স্ট্রাইকিং দায়িত্ব পালন করবে। মোটর সাইকেলে প্রায় ৪শ ৬৩ জন পুলিশ ডিউটিতে থাকবে। পুলিশের ২৮টি পিকআপ গাড়িতে ১১২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও একটি টিম সাদা পোশাকে নজরদারি করবে।


তিনি আরও বলেন, জেলার মণ্ডপে মণ্ডপে আমরা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করব। ড্রোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা জায়গায় ছোট ছোট কন্ট্রোল রুম থাকবে। ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আশা করি, জেলায় শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে পূজা উদ্‌যাপন করতে পারব।


বিবার্তা/রোমেল/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com