নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের শেষ গ্রাম ভবানীপুর। ওই গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা কাঠের সেতু। সেতুটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জোড়াতালি দিয়েই চলছে যাতায়াত। দীর্ঘদিন ধরে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয় জনগণের।
উপজেলার দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে মুসলিম, গারো, হাজংসহ কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ি ছড়া পারাপারে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। আগে এখানকার মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি পাকা সেতু নির্মাণ হয়েছিল। তবে সেটি কিছুদিন পরই ছড়ায় বিলীন হয়ে যায়। এরপর সোমেশ্বরী নদীর পারের পাহাড়ি ছড়ার ওপরে কাঠ-বাঁশ দিয়ে তৈরি সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, অনেক দিন আগেই একটি পাকা স্থায়ী সেতুর নির্মাণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে সীমান্ত জটিলতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, শহর, হাট-বাজার কিংবা স্কুল-কলেজে যাওয়ার একমাত্র ভরসা কাঠের সেতু। বর্ষা মৌসুমে একাধিকবার কাঠের সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ কাঠের সঙ্গে লোহার পিলার দিয়ে সেতু তৈরি করা হয়। তবে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে রয়েছে বিজিবি ক্যাম্প। স্থায়ী সেতু না থাকায় বিজিবির সদস্যরা তাদের নানান কাজ পরিচালনাও অসুবিধায় পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ায় এলাকাবাসী ও বিজিবি সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রমে জোড়াতালি দিয়েই চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। সার্বিক সহযোগিতা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জুরুল হক মঞ্জু। নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ভবানীপুর ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মো. হযরত, স্থানীয় বাসিন্দা রতন মোড়ল, মাসুদ মিয়া, জাহাঙ্গীর, ওয়াদুদ, সেলিম তুষার, মারকোষ কালাম, জালাল, নবী হোসেন, সুমন, বেলবন, শান্তুস, সুদেব হাজং, সুকুলসহ আরও অনেকে।
ভবানীপুর গ্রামের মারকোষ কালাম বিবার্তাকে বলেন, একটি স্থায়ী সেতু না থাকায় এ গ্রামের মানুষ নানান ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কাঠের সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। চলাচলসহ যেকোনো মালামাল পরিবহনে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
তুষার নামে আরেক বাসিন্দা বিবার্তাকে বলেন, হাট-বাজার, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালসহ যেকোনো কাজে এ সেতুর ওপর দিয়েই এ পারের মানুষকে নির্ভর করতে হয়। বর্ষার সময়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
গ্রামবাসী জালাল মিয়া বিবার্তাকে বলেন, একটি স্থায়ী সেতু খুবই জরুরি। সেতুটির কাঠ, খুঁটি অনেক সময় পুরোনো হয়ে ভেঙে যায়। আবার কখনো পানির স্রোতে খুঁটির নিচ থেকে মাটি সরে যায়, তখন তো এখান দিয়ে যাতায়াতই করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এখানে ব্রিজ হলে গ্রামের হাজারো মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
ভবানীপুর ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মো. হযরত বিবার্তাকে বলেন, ‘স্থায়ীভাবে পাকা একটি সেতু হলে এ গ্রামের মানুষের কষ্ট দূর হবে, পাশাপাশি আমাদেরও সুবিধা হয়। তাই অবিলম্বে স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।’
উপজেলা প্রকৌশলী মো. খোয়াজুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, ‘সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতরে স্থায়ী কিছু নির্মাণ করা যায় না। জিরো পয়েন্টের বটতলা এলাকায় আগের ভেঙে যাওয়া সেতুর নদীর পারে পানি উন্নয়ন বোর্ডে বাঁধাইয়ের কাজ করবে। তারপর জিরো পয়েন্টের ১৫০ গজ দূরত্বে রাস্তা হলে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ হবে বলে আশা করছি।’
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান বিবার্তাকে বলেন, ‘অনেক আগেই একটি স্থায়ী সেতুর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে সীমান্ত জটিলতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ইতোমধ্যে কাঠের সেতুটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এটি মেরামতের জন্য। অচিরেই মেরামত করা হবে।’
বিবার্তা/রোমেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]