দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে হাটিকুমরুল ভূমি অফিস!
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৯:২৪
দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে হাটিকুমরুল ভূমি অফিস!
সিরাজগঞ্জ থেকে কাইয়ুম মাহমুদ
প্রিন্ট অ-অ+

অতিরিক্ত টাকা না দিলে খাজনা, খারিজ বা নামজারি কোনো কাজই হয় না। হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভেতর ও বাইরে বছরের পর বছর দালাল চক্রের একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।


সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারী নন। তারপরও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভেতরেই চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে কাগজপত্র খারিজের কাজ করছেন নায়েবের আপন শ্যালক ‘কনক’সহ অনেকেই।


সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়ন অফিসে শুধু নায়েবের শ্যালকই নন, চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসেছেন দালাল মালিক মিয়া, বাবলুসহ আরও অনেকে। যাদের কেউই অফিস স্টাফ নন।


ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জমির খাজনা, খারিজ, নামজারিসহ যে কোনো কাজেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে করতে হয়।


হাটিকুমরুল ভূমি অফিসে নায়েব ও তার শ্যালক কনক, নাজমুলসহ দালালদের রাজত্বে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।


ভুক্তভোগীরা বলছেন, খাজনা খারিজ করতে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত ফি থাকলেও ওই কাজ করতে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। কাজ ও কাজের ধরন বুঝে যার পরিমাণ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বাড়তি টাকা লেনদেন ছাড়া কাজ করেন না। আমরা দালালমুক্ত ভূমি অফিস চাই।


তবে, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই সরকারি অফিসে কাজ করছেন বলে জানান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।


অভিযুক্তরা বলছেন ‘আমরা সার্ভেয়ার হিসেবে অফিসের কাগজপত্র তৈরি করে দেই। আমাদের নিয়োগ নেই, এসিল্যান্ড স্যারের অনুমতি নিয়ে এখানে কাজ করছি।’


ঘুষ ছাড়া কাজ না হওয়া প্রসঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অনিয়ম বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার। যাতে এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা ভূমি অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার না হন।


হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন আহামেদ বিবার্তাকে বলেন, খাজনা খারিজ করতে কোন ঘুষ লেনদেন করি না। আমি হাদিয়া নিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করি।


হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিওন নাজমুল হোসেন। তিনি ৪ বছর ধরে এখানে চাকরি করছেন। কোথাও বদলি না হওয়ার তিনি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন। আর এই চার বছরে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। ফলে বিলাস বহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন তিনি।


নাজমুল হোসেনের নামে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই নাজমুল হোসেন প্রতিনিয়তই গ্রাহক হয়রানি করছে। একবার বলছে আজ নেট নেই, আবার বলছে সার্ভারে সমস্যা, আবার বলছে অফিসে কাগজ পাঠিয়েছি পরে আসবেন। আপনার আবেদন বাতিল হয়েছেসহ এরকম হাজারো অজুহাত আছে অফিস পিওনের কাছে। আবার টাকা দিলেই অতি দ্রুত কাজ করে দিচ্ছেন নাজমুল হোসেন।


এ বিষয়ে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন আহামেদ বিবার্তাকে বলেন, আমার শালা ছিল এখানে। তাকে আমি পাঠিয়ে দিয়েছি, সে আর আসবে না। দালাল চক্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতদিন ছিল কিন্তু তাদেরকেও আমি বের করে দিছি।


উল্লাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাদিজা খাতুন বিবার্তাকে বলেন, আমার জানামতে বহিরাগত লোক নেই। অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যদি এরকম কোনো কিছু থাকে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।


এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বিবার্তাকে বলেন, গ্রাহক হয়রানির বিষয়ে আমি অবহিত হলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।


বিবার্তা/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com