মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে সীমান্তে সংকট : কী করবে বাংলাদেশ?
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:৩৩
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে সীমান্তে সংকট : কী করবে বাংলাদেশ?
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

দীর্ঘ সাত দশক ধরে অ্যাকশন বা থ্রিলার মুভির মতোই নাটকীয়ভাবে চলমান মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সামরিক বাহিনীর সংঘাত। আন্তর্জাতিক খবর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেও টান টান উত্তেজনা নিয়ে মিয়ানমারের দিকেই ঘুরে আসে চোখ। চরম মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস যেন পিছুই ছাড়ছে না দেশটির। সাম্প্রতিক সময়ে এই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে ভয়ানক অশনিসংকেত নিয়ে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা মিয়ানমারের এই অভ্যন্তরীণ সংকট সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশটির জান্তা বা সামরিক শাসকরা। এদিকে, যেটি অধিকতর চিন্তার বিষয়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের প্রভাব সীমান্ত পেরিয়ে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে।



মিয়ানমারের সংঘাত দীর্ঘ সময়ের হলেও চলতি বছরের মধ্য জানুয়ারিতে পরিস্থিতি যেন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। ফলে, এই সংঘাতে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিরোধের মুখে বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের প্রায় ৩৫০ জান্তা সদস্য। যার অধিকাংশই দেশটির বর্ডারগার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশের পর তাদের নিরস্ত্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। চলছে তাদের নিজ দেশে পাঠানোর তোড়জোড়ও। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ফেরত নিতে জাহাজও পাঠানো হচ্ছে।



এদিকে, ২০১৭ সালে দেশটির অভ্যন্তরে সামরিক জান্তার নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটে রোহিঙ্গাদের। সেই জান্তা বাহিনীতে ছিল সেদেশের বর্ডারগার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরাও। তাই রোহিঙ্গা নিধনে জড়িতদের এত সহজে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া, সামরিক বাহিনীর এসব চৌকস সদস্যকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে কি না সেটি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই সুযোগে দেশটির বাংলাদেশবিরোধী কোনো গুপ্তচরও প্রবেশ করেছে কি না? ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ আসলে কতটা ঝুঁকির মুখে? ঝুঁকি থাকলে উত্তরণের কী উপায় এবং এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের করণীয় কী?


মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যারা আসছে তারা ছাড়াও প্রতিনিয়ত সংঘর্ষে গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তে, ফলে সেসব এলাকা ক্রমেই ভীতিকর হয়ে উঠছে। অজানা আশঙ্কায় সীমান্ত বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। প্রশাসনের খোলা আশ্রয়কেন্দ্রসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন।


মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে প্রতিদিনই চলছে থেমে থেমে গোলাগুলি। স্থল ও আকাশপথে সমানতালে চলছে গোলাগুলি। হেলিকপ্টার থেকে করা হচ্ছে গুলি, আবার হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে করা হচ্ছে গুলি। একই সঙ্গে মর্টারশেলের বিকট শব্দে কাঁপছে ঘুমধুম, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত এলাকা। এ পরিস্থিতিতে সময়ে-সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জনবসতিও এসে পড়ছে গুলি ও মর্টার শেল। গত সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে আকস্মিকভাবে মিয়ানমার দিক থেকে একটি মর্টারশেল জলপাইতলী গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার বাড়ির চালের উপর এসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মৃত বাদশা মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৫৫) ও দিনমজুর রোহিঙ্গা নবী হোসেনের মৃত্যু ঘটে।



তবে দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে দুটি পথ খোলা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সামনে। এর মধ্যে সহজ পথটি হলো- মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে সমঝোতা করে তাদের সবাইকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া। অন্যটি হলো- বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের জান্তা সদস্যদের পরিচয় নিশ্চিত করে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা। প্রয়োজনে এই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আনারও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।



এদিকে, মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি। এদিকে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে ৬০ কিলোমিটার জলসীমা রয়েছে তা দিয়ে যাতে কোনো মিয়ানমার নাগরিক আসতে না পারে সেজন্য টহল বাড়িয়েছে কোস্ট গার্ড। নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় শতাধিক মিয়ানমার নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে তারা।


সীমান্তে বসবাসকারীরা জানিয়েছেন, সেসব গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও। বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে এসব গুলি কেন করা হচ্ছে, তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।


মিয়ানমারের জাতিগত দ্বন্দ্বের কারণে আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে এরই মধ্যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। বারবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। এ অবস্থায় আবারও যদি রোহিঙ্গাদের ঢল নামে কিংবা সেখানকার অন্য জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে।


মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীদের বক্তব্য জানতে দোভাষী হিসেবে কাজ করা সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আসার সীমান্ত রক্ষীরা স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন তাদের সব ঘাঁটিগুলো দখল হয়ে গেছে। প্রাণভয়ে তারা যে যেভাবে পেরেছে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।


মিয়ানমারের সংঘাত প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বিরোধী এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জয় পায়। তবে দলটি নিজেদের মতো দেশ পরিচালনা করতে পারেনি। তার কারণ সেনা সরকার প্রণীত ২০০৮ সালের সংবিধান। এই সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সংসদের অন্তত ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ থাকবে। সামরিক বাহিনীর সদস্যের সম্মতি ছাড়া সংবিধানের ধারা ও আইন পরিবর্তনের উপায় নেই।এরপরও ২০২০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এনএলডি পুনরায় জয়ী হয়। ভরাডুবি হয় সেনা-সমর্থিত দলের। এরপর দেশটির সামরিক বাহিনী নির্বাচনে ‘কারচুপি’র অভিযোগ এনে পরের বছর ২০২১ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি পুনরায় সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয়। অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সারা দেশে দমন অভিযান চালায়। হাজার হাজার গণতন্ত্রকামী মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়।


মিয়ানমারের একটি ক্রাইসিস গ্রুপের অ্যাডভাইজার রিচার্ড হরসি বলেন, “মিয়ানমার সেনাবাহিনী বা জান্তা সরকারের জন্য পরাজয় অনিবার্য নয়। তবে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা জানে যে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার একমাত্র পথ হচ্ছে লড়াই চালিয়ে যাওয়া। আর তারা সেটাই করবে। তাই পরাজয় অবশ্যম্ভাবী নয়। তবে এটি গত বেশ কয়েক দশকের তুলনায় এখন কিছুটা বেশি সম্ভাবনাময় বলে মনে হচ্ছে।”



মিয়ানমারের চলমান সংঘাত প্রসঙ্গে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার বিবার্তাকে বলেন, অং সান সুচির ক্ষমতায় ছিল নামে মাত্র, সবকিছুই সেনাবাহিনীর দখলে। তা না হলে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়ে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইতেন না, বলতেন না এখানে কোনো গণহত্যা হয়নি, কোনো জ্বালাও-পোড়াও হয়নি, ধর্ষণ, কোনো অপরাধ হয়নি। এরকম ডাহা মিথ্যা কথা তিনি বলতেন না, যদি তার ক্ষমতা থাকত। ১৯৫২ সাল থেকে এই পর্যন্ত সেনাবাহিনী কখনো প্রত্যক্ষভাবে, কখনো পরোক্ষভাবে ক্ষমতায় আছে। শুধু সুচির শাসনামলে আর তার আগে পাঁচ বছর অন্য সরকার দ্বারা শাসিত ছিল মিয়ানমার, বাদবাকি সময়ে সেনাবাহিনীই মিয়ানমারের ক্ষমতায়।


২০০৮ সালে সেনাবাহিনী পার্লামেন্টে এমন এক সংবিধান প্রণয়ন করে যাতে এমনভাবে আইন পাশ করা হয় যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সব গুরুত্বপূর্ণ পদে সেনাবাহিনীর লোকই আসীন করতে হবে। এদের পার্লামেন্টে মিয়ানমারের যত বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠী আছে, এরা সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়, চাঁদাবাজি করে নিজেদের খরচ চালায়।



সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, প্রশাসনের খোলা উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০টি পরিবারের ২৪৩ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা আত্ময়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে। তবে ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো কেউ যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।


একটি দেশের নাগরিক বিনা অনুমতিতে অন্য আরেকটি দেশের সীমানায় ঢুকে পড়লে সেটিকে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে আশ্রয়দাতা দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আশ্রয় গ্রহীতার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনা জানানো হয়। এরপর দু’দেশের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ফেরত পাঠানো হয়।


মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কয়েকশ সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে মানবিক দিক বিবেচনা করে। শিগগিরই তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। কিন্তু তাদেরকে ফেরত পাঠাতে ঠিক কতদিন লাগতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে এখনো কিছু জানানো হয়নি।



সীমান্ত সুরক্ষা ও এবং সীমান্তবর্তী মানুষের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের করণীয় প্রসঙ্গে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার বিবার্তাকে বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ সেখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। যেহেতু যুদ্ধটা সীমান্ত ঘেঁষে হচ্ছে, আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় হচ্ছে সেক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের যা করণীয় সেটা আমাদের করতে হবে। যুদ্ধের কনভেনশন অনুযায়ী তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। যুদ্ধের তীব্রতা কয়েকদিন বেড়েছিল। আবার হয়ত কমবে, আবার বাড়বে। মিয়ানমার সরকারের প্রতি আমাদের কঠোরভাবে একইসাথে কূটনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করে আলাপ-আলোচনা করে এই সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে।




মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটে বাংলাদেশের উপর প্রভাব নিয়ে গ্লোবাল টেলিভিশন-এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বিবার্তাকে বলেন, একটা নিরাপত্তার সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। বিশেষত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকের মানুষ যারা রাখাইন সীমান্তবর্তী এলাকায় আছে টেকনাফে আছে তাদের জন্য সংকট তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের সংঘাত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, বাংলাদেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের ভিকটিম। রোহিঙ্গা সমস্যাও মিয়ানমারের জন্য আমাদের সংকট, আবার এখনকার সমস্যাও মিয়ানমারের কারণে আমাদের সংকট। বাংলাদেশ একটা ক্রাইসিস টিম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের করণীয় হলো, সেখান সীমান্তের মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা, আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে সর্তক রাখা। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা, যেকোনো পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা। বাংলাদেশ সরকারের করণীয় সম্পর্কে এমনটাই বলেন সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।



তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান খুবই পরিষ্কার, বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিটি বাংলাদেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিনতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করে না, বাংলাদেশের গণমাধ্যমেরও উচিত এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রচার করা।




প্রসঙ্গত, সীমান্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে আমরা ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক দিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে বিজিবি সদস্যদের তিনি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।


আশ্রয় নেওয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠাতে সরকার ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের সাথে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে বলে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।


শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, শুধু আমাদের দেশে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের আসার ঘটনা ঘটেছে তা নয়। ভারতেও কয়েকশ লোক ঢুকেছে। তাদেরকেও তারা ফেরত নিয়ে গেছে। মিয়ানমার থেকে তাদের সীমান্ত বাহিনী ও সেনাবাহিনীসহ তাদের পরিবারের বেশ কিছু সদস্য আমাদের দেশেও পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়েছে, মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। তাদেরকে ফেরত নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, আলোচনা চলছে।


মিয়ানমারের সংঘাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দেশটির বিভিন্ন বাহিনীর ৩৩০ জন সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ পাঠাচ্ছে দেশটির জান্তা সরকার। সবকিছু ঠিক থাকলে বর্তমানে সমুদ্রপথে অবস্থানকারী জাহাজটি শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার উপকূলে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে শনিবার জাহাজ এসে পৌঁছাবে বলে মিয়ানমার আমাদের জানিয়েছে।


বিবার্তা/এমজে/এসবি/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com