আধিপত্য ধরে রাখতে রক্তাক্ত পাহাড়!
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩০
আধিপত্য ধরে রাখতে রক্তাক্ত পাহাড়!
খাগড়াছড়ি থেকে আল মামুন
প্রিন্ট অ-অ+

আধিপত্য আর চাঁদাবাজিতে বিভোর আঞ্চলিক সংগঠনগুলো মেতে উঠছে খুনোখুনিতে। ঝরছে একের পর এক তাজা প্রাণ, রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়! আধিপত্যে অনড় সংগঠনগুলোর জুম্ম জাতির আন্দোলনের আড়ালে চাঁদাবাজির লক্ষ্য নিয়ে আয়েশি জীবনের স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবে সেই স্বপ্ন ধরা দেয় মৃত্যুতে। এসব খুনোখুনি, অস্ত্রবাজি, আধিপত্য- সবই একই সূত্রে গাঁথা। সবকিছুর মূলে অর্থ। পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানে বছরে হাজার কোটি টাকার চাঁদাই হচ্ছে সকল অশান্তির মূল।


পার্বত্য চট্টগ্রামে নীরবে সাধারণ মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে বাঁধা সৃষ্টির মাধ্যমে সবুজ পাহাড়ে ভাঁজে ভাঁজে চলে চাঁদাবাজি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ, আনসার, ব্যাটালিয়নের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের নানা উদ্যোগ, অভিযান চলমান থাকলেও তারা এখনো অনিয়ন্ত্রিতই রয়ে গেছে। সবুজ বেষ্টনীর নীরব পাহাড়ে কতটা নিরাপদ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীরা, এমনটাই প্রশ্ন স্থানীয় ও সচেতন মহলের।


যেখানে চাঁদা না দিয়ে চলে না গাড়ি, হাটে বিক্রি হয় না সবুজ ফসল। উন্নয়ন কর্মযজ্ঞেও চাঁদা মাফ নেই কারোরই। কোনো ঠিকাদার নিদিষ্ট চাঁদা না দিলে বন্ধ হয়ে যায় তাদের উন্নয়ন কাজ। পাহাড়ে প্রতিটি কাজে, প্রতিটি সেক্টরে চাঁদা অনিবার্য। সব মিলিয়ে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।


বর্তমান পার্বত্য চট্রগ্রামে অস্ত্রের ঝনঝনানি, জেলায় জেলায় ভিন্ন সংগঠনের আধিপত্য আর নিয়ন্ত্রণে এখানে চলে ভারী অস্ত্রের প্রদর্শন ও মহড়া। আর অস্ত্রধারী চাঁদাবাজদের হুংকারে ঘুম ভাঙে নিরীহ সাধারণের। এখানে সাধারণ মানুষ যেন অসহায় বোবা প্রাণী। এই মোটা অঙ্কের চাঁদার টাকা জন্যই চলে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আধিপত্যের লড়াই।


অন্যদিকে হানাহানি, দ্বন্দ্ব, আধিপত্য ও এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে স্বার্থের লড়াইয়ে পাহাড়ে বহে রক্তগঙ্গা!। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো অর্থের বিনিময়ে জোগান দেয় এসব মারণাস্ত্র। প্রাণঘাতী সেইসব অস্ত্র পাহাড়কে করে তুলছে ভয়ানক ভয়াবহ। ফলে পার্বত্য অঞ্চল হয়ে উঠছে সন্ত্রাসের স্বর্গ।


স্থানীয় ঠিকাদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বাগানি, কাঁচামাল ব্যবসায়ী, পরিবহণ সেক্টর, জমির মালিক, কৃষিকাজে নিয়োজিত চাষিরাও এখন জিম্মি পাহাড়ি সংগঠনের চাঁদাবাজদের কাছে। এরপরও তাদের অকথ্য গালাগাল, মারধরের শিকার হচ্ছে পাহাড়ে নিজ দেশে পরবাসী মানুষগুলো। স্থানীয়দের প্রশ্ন এ দিনের শেষ হবে কবে? পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজক পরিস্থিতি, হত্যাকাণ্ড, বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তি চুক্তি)’ হলেও সে কাঙ্খিত শান্তি ফেরেনি বলে দাবি জানিয়ে আসছে পাহাড়ে বাঙালিদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠনের নেতারা।


পার্বত্যাঞ্চলে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এক সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পাহাড়ে দিনে দুপুরে অপহরণ, অত্যাচার, খুনাখুনি চলে। পরে সে অরাজকতা থামাতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তি চুক্তি) করে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর সাথে। অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করে গড়ে ওঠে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।


তারপর জেএসএস-ইউপিডিএফ দ্বন্দ্বে পাহাড়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এদিকে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তু লারমার ক্ষোভের মধ্যে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যেও দেখা দেয় বিভাজন। জেএসএস টুকরো হয়ে গড়ে ওঠে জেএসএস (এমএন লারমা গ্রুপ) জেএসএস সংস্কার। প্রসিত বিকাশ খীসার দল ভেঙে ২০১৭ সালে ১৫ নভেম্বর গড়ে ওঠে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আরেকটি সংগঠন। যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তপন জ্যোতি বর্মা। পরে পাহাড়ে একের পর এক কয়েক বছরেই বাড়তে থাকে আঞ্চলিক সংগঠনের। সে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রক্তক্ষরণ আর অশান্তি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবীণ এক রাজনীতিবিদ বিবার্তাকে বলেন, পাহাড়ে হানাহানি ও রক্তপাতের মূলে আধিপত্য। চাঁদাবাজিকে টার্গেট করে এখানে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি ব্যবসায়ী, ঠিকাদার শ্রেণি থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, খাগড়াছড়ি জেলাসহ প্রতিটি উপজেলাগুলোর হাট-বাজারের ব্যবসায়ীরাও চাঁদা থেকে বাদ পরছে না বলে মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


সচেতন নাগরিকদের দাবি, চুক্তির দীর্ঘ ২৭ বছর পরও এখনো অপহরণ, খুন থামেনি। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম রাসেল অপহরণের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনো। এছাড়াও মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়তই অপহরণ, গুম, বেপরোয়া চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ড ঘটলেও যেন দেখার কেউ নেই।


এত হত্যাকাণ্ডের পরও সুষ্ঠু কোন সমাধান না হওয়ায় ভারী অস্ত্রের বুলেট কেড়ে নিচ্ছে তরতাজা প্রাণ। পরিবারের পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরও এসকল হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার নেই । কারণ এ সব ঘটনার মূল হোতারা থাকেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে আর কলকাঠি নাড়ে অদৃশ্যে- যা সকলের জানা থাকলেও দৃশ্যত অজানা।


পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব হত্যাযজ্ঞ অনিশ্চিত করে তুলছে পাহাড়বাসীর শান্তি এবং সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এতে পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ আরো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতারা।


নতুন সংগঠন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যেভাবে পথ শুরু সংঘাতের: ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা’র নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার পর প্রসীত খীসা নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর জেলা সংগঠক মিঠুন চাকমা হত্যার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হয় নতুন সংঘাত। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি (বুধবার) বেলা ১২টায় খাগড়াছড়ি সদরে গুলি করে হত্যা করা হয় মিঠুন চাকমাকে। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করে প্রসীতপন্থি ইউপিডিএফ। এরপর থেকে পাল্টাপাল্টি হত্যা-সংঘাত ঘটতে থাকে। এ ঘটনায় পার্বত্য জেলায় নানা কর্মসূচি-আন্দোলন করে ইউপিডিএফ।



পাহাড়ের শক্তিমান চাকমা ও তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে (বর্মা) হত্যাকাণ্ড:


হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় ২০১৮ সালের ৩ মে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতি- জেএসএসের (এমএন লারমা) সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করা হয়। তার একদিন পরই শক্তিমানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের বেতছড়ি এলাকায় তাদের গাড়িতে অতর্কিতে ‘ব্রাশফায়ার’ করলে খালিয়াজুড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা, জেএসএসের সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির (এমএন লারমা) মহালছড়ি শাখার সভাপতি সুজন চাকমা, সদস্য তনয় চাকমা, রবিন চাকমা এবং তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসচালক মো. সজীব এর নির্মম মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জন্য প্রসীত খীসা নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ-কে দায়ী করা হয়।


পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে এটির নেতৃত্বে আছেন প্রসীত বিকাশ খীসা। তারা একাধিক সাধারণ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর দলটি প্রথমবারের মতো বিভক্ত হয়। দলত্যাগ করা নেতারা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলে। ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। এতে নেতৃত্ব দেন আহ্বায়ক তপন জ্যোতি বর্মা। সূত্র জানায়, শুরু থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে (বর্মা) ইউপিডিএফ এ যুক্ত ছিলেন।


ইউপিডিএফ এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের হত্যা: ১৮ আগস্ট ২০১৮ সালে (শনিবার সকালে) খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করা হয়। পরে আরো একজনসহ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ জনে। এ ঘটনায় নিহত হয় ইউপিডিএফ-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ-সম্পাদক এলটন চাকমা, ইউপিডিএফ-সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য পলাশ চাকমা। বাকি তিনজনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা, রূপম চাকমা ও প্রকৌশলী জিরাত চাকমা। এছাড়াও এক বৃদ্ধ সে সময় মারা যায়। এ ঘটনার জন্য জেএসএস (এমএন লারমা) এবং মুখোশ বাহিনী আখ্যায়িত করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে’ দায়ী করে প্রসীত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপ।



১১ নভেম্বর ২০২৩ (সোমবার) রাতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে প্রসীতপন্থি ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা, পিসিপির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফের সদস্য রুহিনসা ত্রিপুরাসহ ৪ জনকে হত্যা করা হয়। পানছড়ি অনিলপাড়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-জেএসএস সংস্কারসহ দু’গ্রুপকে দায়ী করলেও তা অস্বীকার করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি জেলার সাজেকের মাচালং ব্রিজপাড়ায় সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর গুলিতে আশিষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমা নামের দুজন সক্রিয় সদস্যকে হত্যা করা হয় বলে জানান সংগঠনটি।


ইউপিডিএফ এর সংগঠক অংগ্য মারমা বিবার্তাকে বলেন, পাহাড়কে মেধাশূন্য করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হত্যাযজ্ঞ চলছে। নব্য মুখোশদের পার্বত্যাঞ্চলে বর্তমানে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রক্তের হোলিখেলা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের পর থেকে আজকে পর্যন্ত ৩৬০ জন প্রতিপক্ষের হামলায় হত্যার শিকার হয়েছে বলে জানান তিনি।


তার মধ্যে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর হাতে ৩০২ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। এছাড়া এমএন লারমা সমর্থিত জেএসএস এবং মুখোশ বাহিনী সৃষ্টির পর সর্বমোট দু’সংগঠনের যৌথ হামলায় আরো ৫৮ জন নেতাকর্মী শহিদ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় তিনি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে বলে দাবি করেন।


এদিকে, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর সাধারণ সম্পাদক মিটন চাকমা বিবার্তাকে বলেন, পাহাড়ে প্রসীত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ জুম্ম জনগণকে অধিকার আদায়ের নামে প্রতারণা করে পাহাড়ে সন্ত্রাসী সংঘাতকে ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর পার্টি প্রতিষ্ঠার পর ইউপিডিএফের অস্ত্রধারীদের হাতে ৮ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।


পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে শফিকুল ইসলাম রাসেল অপহরণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবার্তাকে বলেন, বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন নিজ দেশে পরবাসী। শতকোটি টাকার চাঁদায় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজিতে অসহায় পার্বত্যবাসী। প্রতিনিয়তই অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজির পরও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব সন্ত্রাসীরা। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান।


এদিকে গুইমারা থানার ওসি মুহাম্মদ আরিফুল আমিন বিবার্তাকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নয়। সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। যে সকল স্থানে আঞ্চলিক সংগঠনের তৎপরতা রয়েছে সেখানে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধিসহ যৌথ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।


এভাবে পাহাড়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। আধিপত্যের লড়াইয়ে ঝড়ছে তাজা প্রাণ, বাড়ছে সংঘাত আর প্রাণঘাতি হানাহানি। গোলাগুলি, ব্রাশফায়ারে রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে নীরব সবুজ উপত্যকা। পাহাড়ের সচেতন মহলের দাবি, একের পর হত্যাকাণ্ড, গোলাগুলি, খুনোখনি, সংঘাত আর দ্বন্দ্বে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এদিকে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।


এ সকল ঘটনায় পার্বত্য এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড পাহাড়ে আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও আরো একাধিক সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে- তারাও সশস্ত্র সংঘাতের পথে হাঁটছে। তারা সামাজিক মাধ্যমে ভারী অস্ত্র প্রদর্শন করে পাহাড়ে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছে প্রতিনিয়তই। মূলত আধিপত্য ধরে রাখতে পরপর আরো বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড পাহাড়ের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডকে অনেকে বলছে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত।


প্রাণ হারানো পরিবার কী পাবে তাদের স্বজনদের? না পাবে বিচার- এসব প্রশ্নের মধ্যেও সবুজে বেষ্টিত শান্তির পাহাড়ে অশান্তির বিষবাষ্প ছড়ানো হত্যাকাণ্ড-হানাহানি সংঘাত বন্ধে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীরা। যেখানে থাকবে না তাজা রক্তের গন্ধ, অস্ত্র, গুলির শব্দ, হানাহানি আর দ্বন্দ্ব। যে পার্বত্য চট্টগ্রাম হবে এক খণ্ড শান্তি-সম্প্রীতির আবাসভূমি।



বিবার্তা/আল-মামুন/এসবি/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com