
উত্তরের জেলা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বাসিন্দা কায়দুজ্জামান আজাদ, বয়স ৩৫-এর ঘরে। এর মধ্যেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।
উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বাসুলীতে নিজস্ব জায়গায় গড়ে তুলেছেন কারুপন্য কারখানা রংজুট বিডি। পাট আর হোগলা পাতা দিয়ে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরী হয় এই কারখানায়।
স্থানীয় নারী-পুরুষদের কাজে লাগিয়ে হোগলা বাস্কেট, রাক্স, ফ্লোর ম্যাট, পাপশ, ডোর ম্যাটসহ বিভিন্ন কারুপন্য তৈরি করে তা রফতানি করছেন বিদেশের বাজারে। পাটের তৈরি পণ্যের চাহিদা বিশ্ব বাজারে বেশ ভালো থাকায় দামও পাচ্ছেন আশানুরূপ।
অন্যদিকে তার এই কারখানায় কাজ করে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষের। বাসার কাজের পাশাপাশি এসব পণ্য তৈরি করে মাসে সর্বনিম্ন পাঁচ থেকে ১৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পেরে শ্রমিকরাও আনন্দিত।
সরেজমিনে রংজুট বিডি’তে গিয়ে দেখা যায়, টিনের শেড দেয়া লম্বা একটি ঘরেই মেশিনে চলছে পাট আর হোগলা পাতা দিয়ে কারুপণ্য তৈরির কাজ। বিপরীত পাশে কয়েকজন সুই আর সুতা দিয়ে করছেন ডিজাইন। এরপরই এসব পণ্য প্রস্তুত হচ্ছে ডেলিভারির জন্য।
উদ্যোক্তা কায়দুজ্জামান আজাদ জানান, বর্তমানে ৫০০-৬০০ শ্রমিক কাজ করছে তার কারখানায়। প্রতিমাসে প্রায় ৪০-৫০ লক্ষ টাকার কারুপন্য তৈরি করছেন শ্রমিকরা। তৈরিকৃত এসব কারুপণ্য দেশে ও দেশের বাইরে রফতানি করে গড়ে প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন তিনি। সফল এই উদ্যোক্তার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় বিবার্তা প্রতিবেদকের সাথে। শুনেছেন তার এই অভাবনীয় সফলতার খুঁটিনাটি।
শুরুটা এখন থেকে আরও আট বছর পূর্বে ২০১৬ সালে ৷ রাজধানীর ঢাকায় চাকরিরত অবস্থায় কারুপণ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পান আজাদ। কারুপন্য তৈরির কাজে নিজে সফল হওয়ার পাশাপাশি বেকার মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা তাকে আরও আগ্রহী করে তোলে। পরে নিজে চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন গ্রামে। নিজ এলাকার ৮-১০ জন শ্রমিক নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংকট পার করে এখন তিনি সফল একজন উদ্যোক্তা।
রংজুট বিডিতে কাজ করতে আসা শ্রমিক শান্তিবালা (৬০) নামের এক বৃদ্ধা বলেন, শেষ বয়সে আর কেউ কাজে নিতে চায় না। এখানে কাজ করে যা পাই তা দিয়েই সংসার চলে।
আরেক শ্রমিক আনারুল ইসলাম (৪৫) বলেন, বাড়ির পাশে এই কারখানা হওয়ায় আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ির পাশেই কাজ করে ভালো টাকা আয় করে সুন্দর দিনযাপন করছি।
উদ্যোক্তা কায়দুজ্জামান আজাদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার পড়াশোনার পাশাপাশি নিজ এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিলো। সেই ভাবনা থেকেই চাকরি ছেড়ে এই কারখানা তৈরি করেছি। এখানে ৫০০-৬০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনও সরকারিভাবে কোনো অনুদান পাইনি। ভবিষ্যতে সহযোগিতা পেলে কাজের পরিধি বাড়বে ও আরও কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবো বলে আশাবাদী।
বিবার্তা/জামান/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]