শিরোনাম
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: বদরগঞ্জের ‘ইউএনও’ হিরো না ভিলেন? (পর্ব-৯)
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২১, ১৫:৪২
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: বদরগঞ্জের ‘ইউএনও’ হিরো না ভিলেন? (পর্ব-৯)
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রংপুরের বদরগঞ্জে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি, গৃহহীন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ১৪ হাজার টাকার বরাদ্দ দিয়েছিলো সরকার। বাড়িগুলো নির্মাণের পর উদ্বৃত্ত থাকা ২৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেন ইউএনও মেহেদী হাসান।


অন্যদিকে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) ও কাবিটা (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে ১২৪ ঘর নির্মাণ করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ লাখ ৫৮ হাজার থেকে ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। সেসময় সংশ্লিষ্ট মেম্বার, চেয়ারম্যানদের না জানিয়ে তাদের নামে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে ইউএনও’র বিরুদ্ধে। ঘরের তালিকা তৈরি ও গৃহনির্মাণ করে দেন রাজীবপুরের তৎকালীন ইউএনও মেহেদী হাসান।


তাই স্বভাবতই এখন প্রশ্ন উঠেছে রাজিবপুরে গৃহনির্মাণ বাস্তবায়ন দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য করে ভিলেন হওয়া ইউএনও মেহেদী হাসান সরকারি কোষাগারে ২৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে কিভাবে হিরো হয়ে গেলেন? সমালোচকরা বলছেন, আগের উপজেলার কয়েক কোটি টাকা থেকে মাত্র ২৫ লাখ টাকা সদকা দিয়ে তিনি তার গত বছরের পাপ ঢাকার চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হলে ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: কলাপাড়ায় আড়াই কোটি টাকা লোপাট (পর্ব-১)


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: নির্মাণ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে গেল ঘর (পর্ব- ২)


প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ করে দেয়া। এরই ধারাবাহিকতায় রাজিবপুরে ১২৪টি গৃহনির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। বাড়ি নির্মাণ ও নির্মাণকাজ তদারকির জন্য ইউএনওকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। সদস্য ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তবে ইউপি চেয়ারম্যানদের দাবি তাদেরকে নামকাওয়াস্তে কমিটিতে রেখে ইউএনও কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন।


রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাবিটা (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) ও টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ করে দেয়ার জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫৫টি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৯টি বরাদ্দ দেয়া হয়।


কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন রয়েছে।চেয়ারম্যান-মেম্বাররা জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সবগুলো গৃহনির্মাণ বাস্তবায়ন দেখিয়ে গৃহহীনদের টাকা তিনি ভুয়া বিল-ভাউচারে তুলে নিয়েছেন।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: মেহেন্দিগঞ্জেও ভেঙে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সেই ঘরগুলো (পর্ব-৩)


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: মির্জাপুরেও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভেঙে তছনছ! (পর্ব- ৪)


সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ মে তাকে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর থেকে অবমুক্ত করা হয়। এরপর তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ইউএনও হিসেবে যোগ দেন। ৩০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান সম্প্রতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেসময়ে ইউএনওর দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজীবপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এলাকাবাসী। উপজেলা ভূমিহীন সংগঠনের উদ্যোগে ওই মানববন্ধন কর্মসূচিতে ইউএনওর নানা অনিয়ম, দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন বক্তারা।


ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও গৃহনির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। যার কারণে এসব ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। তাদের অভিযোগ রাজীবপুরের ইউএনও গৃহহীনের টাকা দিয়ে তার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁয়ে কোটি টাকা খরচ করে জমি কিনেছেন।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: লক্ষ্মীপুরেও ভেঙে পড়ছে ঘর, কয়েকটিতে ফাটল (পর্ব-৫)


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প : ৬ মাস না যেতেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল (পর্ব-৬)


সদর ইউনিয়নের মেম্বার ইসমাইল হোসেন, বাদশা মিয়া, আবু বকর সিদ্দিক অভিযোগ করেন, আমাদের নামে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে অথচ আমরা কিছুই জানি না।


তারা অভিযোগ করে জানান, তাদের নামে থাকা ৬ লাখ থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা লোক দিয়ে তুলে নিয়েছেন ইউএনও মেহেদী হাসান।


কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু বিবার্তাকে বলেন, নির্মাণ করে দেয়া ঘরগুলো মাস পেরোতেই ফাটল দেখা দেয়। ঘর নির্মাণে খুবই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদেরকে নামমাত্র কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ইউএনও টাকা তুলে নিয়েছেন।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: স্বপ্নের ঠিকানা পেয়েও আশ্রয়হীন সুবিধাভোগীরা, শাল্লায় নজিরবিহীন দুর্নীতি (পর্ব-৭)


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: সরিষাবাড়িতে পানিতে ভাসছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ঘর (পর্ব-৮)


গৃহনির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ইউএনও মেহেদী হাসান বিবার্তাকে বলেন, এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে।


এ বিষয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্ববৃহৎ মানবিক প্রকল্প হলো আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রত্যেকটি বাড়ির সঙ্গে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন জড়িত। মহামারি পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিদর্শনে করছি। দেশের অনেক জায়গায় অতিবৃষ্টি, বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু কিছু জায়গায় বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা সেসব জায়গায় পুনরায় বাড়ি নির্মাণ অথবা সংস্কার করে দিচ্ছি। প্রকল্পের অনিয়ম বা গাফিলতি নিয়ে আমাদের অবস্থান শুরু থেকেই জিরো টলারেন্স। কোনো এলাকায় দুর্নীতি কিংবা অনিয়ম পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/সোহেল/গমেজ/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com