শিরোনাম
আশ্রয়ণ প্রকল্প : ৬ মাস না যেতেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল (পর্ব-৬)
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২১, ১৫:১৬
আশ্রয়ণ প্রকল্প : ৬ মাস না যেতেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল (পর্ব-৬)
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ছয় মাস না যেতেই শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এমন অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘরগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিষখালী মৌজায় ২১টি পরিবারের জন্য নির্মিত অধিকাংশ ঘরের মেঝে, দেয়াল ও পিলারে ফাটল ধরেছে। স্থানীয় সূত্রে বিবার্তাকে এমন তথ্য জানিয়েছে।


জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২) ক তালিকার গৃহহীন-ভূমিহীন অসহায় পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গত অর্থবছর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি মৌজায় ৬৭ শতাংশ জমির ওপর ২১ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য সেমি-পাকা ঘর তৈরি করা হয়। প্রতিটি ঘর তৈরিতে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা।



পরে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত এসব ঘর গত ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। সেমি-পাকা দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব ঘরে সংযুক্ত একটি রান্নাঘর ও টয়লেট রয়েছে। ছয় মাস না পেরোতেই ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দেয়। বৃষ্টি হলে টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ছে। ঘর তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন বাসিন্দারা। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বর্ষা মৌসুম শেষে ঘরগুলো মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।


বিবার্তায় আরো পড়ুন >>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: কলাপাড়ায় আড়াই কোটি টাকা লোপাট (পর্ব-১)


জানা গেছে, গোসাইরহাট উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হুসাইন। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা আক্তার চৌধুরী।



উপকারভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দেয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু ঘরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে ঠিকাদাররা। বৃষ্টি নামলেই অনেক ঘর দিয়ে পানি পড়ে। চালের কাঠ ভালো নয়। স্ক্রু ঢিলে হয়ে পানি পড়ছে পুরো ঘরে। এই কয়দিনেই ফ্লোর ফেটে গেছে। পিলারও ফাটা। কয়দিন টিকে থাকে জানি না।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বিবার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে আমরা অনেক খুশি হইছি। এখন সামনের পিলার ফেটে গেছে, ফ্লোরও ফেটে গেছে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: নির্মাণ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে গেল ঘর (পর্ব- ২)


আরেক বাসিন্দা বলেন, ঘরের মেঝে ও বারান্দার মেঝেতে ফাটল ধরেছে। সব ঘরের একই অবস্থা। কোনো কোনো পিলারও ফেটে গেছে। এ নিয়ে এখন আমরা দুঃশ্চিন্তায় আছি।



আশ্রয়ণ প্রকল্পের লুৎফা বেগম নামের আরেকজন বলেন, আমার রান্নাঘর ও টয়লেট ভেঙে গেছে, সেখান থাকার মতো অবস্থা নেই। চেয়ারম্যান সাহেব ও পিআইও ম্যাডাম এসে আমাকে অন্য ঘরে থাকতে দিয়ে গেছেন। পরে আমার ঘর মেরামত করে দেবে বলেছেন। এ ঘরে সিমেন্ট কম দিছে, নাহলে এভাবে বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরতে পারে না। কদিন হলো আমরা আসছি এখনই এই অবস্থা। এই ঘরে কীভাবে থাকব, প্রশ্ন করেন তিনি।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: মেহেন্দিগঞ্জেও ভেঙে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সেই ঘরগুলো (পর্ব-৩)


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা আক্তার চৌধুরীর সাথে যোগাযেগা করা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ওই জায়গার সিলেকশনটা ভুল ছিল। এবার অতিবর্ষণের কারণে অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এরপরও আশ্রয়ণটি টিকিয়ে রাখতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।বর্ষা মৌসুম শেষে সমস্যাগুলো সমাধান করে দেয়া হবে।



গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর হুসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। পরে উপজেলা অফিসে ফোন দিয়ে জানা যায় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: মির্জাপুরেও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভেঙে তছনছ! (পর্ব- ৪)


বিষয়টি জানতে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসমাউল হুসনা লিজার সাথে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি বিবার্তাকে বলেন, এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে ঘরগুলো ভেঙে গেছে। তবে ভেঙে যাওয়ার ঘরগুলোর তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ঘরগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।



আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ভেঙে যাওয়া ঘরগুলো ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কি না তা যাচাই করতে মাঠে পরিদর্শনকারী দলগুলো। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে কোনো এলাকায় দুর্নীতি ও অনিয়ম পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: লক্ষ্মীপুরেও ভেঙে পড়ছে ঘর, কয়েকটিতে ফাটল (পর্ব-৫)


বিবার্তা/খলিল/গমেজ/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com