শিরোনাম
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: কলাপাড়ায় আড়াই কোটি টাকা লোপাট (পর্ব-১)
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২১, ১৭:১৩
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: কলাপাড়ায় আড়াই কোটি টাকা লোপাট (পর্ব-১)
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বর্তমান সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যেই দেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল পেতে শুরু করেছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের পাত্তা দিচ্ছেন না সরকারি আমলারা। সম্প্রতি পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় আড়াই কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। তবে ওইসব অভিযোগ ধামাচাপা দিতে মরিয়া সংশ্লিষ্টরা।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, প্রতিটি ঘর আলোকিত হবে এবং চিকিৎসাসেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ।


এ লক্ষ্য সামনে রেখে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে গৃহীত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।


নীতিমালা অনুযায়ী ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র পরিবারকে উপকারভোগী নির্বাচন না করে ৩০/৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খাস জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, ষাটোর্ধ প্রবীণ ব্যক্তিদের বিবেচনায় নেয়নি টাস্কফোর্স কমিটি।


এমনকি একই নামে দু’টি ঘর বরাদ্দ দেয়ার তথ্য রয়েছে তালিকায়।এছাড়া নিম্নমানের উপকরণসামগ্রী ব্যবহারসহ রাজমিস্ত্রী, কাঠমিস্ত্রীর মজুরি এবং পরিবহন ও জ্বালানি খরচ উপকারভোগীদের প্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। এতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা লোপাটের তথ্য ফাঁস হয়েছে।


জানা গেছে, ৩৯৪ বর্গফুটের ২ কক্ষবিশিষ্ট পাকা/সেমিপাকা ঘরে ১টি টয়লেট, ১টি রান্নাঘর ও ইউটিলিটি স্পেস গুণগত মানসম্পন্ন উপকরণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়নি। তালিকাভুক্ত উপকারভোগী ‘ক’ শ্রেণি যার জমি ও ঘর কিছুই নেই, ‘খ’ শ্রেণি যার এক থেকে ১০ শতাংশ জমির সংস্থান আছে; কিন্তু ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ করার কথা। আর যাদের জমি নেই, তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্তপূর্বক ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>বৃষ্টিতেই ভেঙে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর, আতঙ্ক


অভিযোগ উঠেছে, নির্মাণ উপকরণসামগ্রীর গুণগতমান ও তৈরিকৃত ঘরের নকশা যাচাই করা হয়নি। ঘরের নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে প্রথম ধাপে ৪৫০টি ঘরের বিপরীতে পরিবহন ও জ্বালানি খরচের ১৮ লাখ ২৫ হাজার এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১০টি ঘরের বিপরীতে পরিবহন ও জ্বালানি খরচের ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ মোট ২৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।


এছাড়া ৫৬০টি বরাদ্দকৃত ঘরের জন্য উপকারভোগী প্রতি ৩০/৪০ হাজার টাকা হারে প্রায় ২ কোটি টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।


প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা কমিটি’র সভাপতি ইউএনও, সদস্য এসিল্যান্ড, এলজিইডির প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্য সচিব পিআইও। এ কমিটি গৃহনির্মাণ কাজের অগ্রগতি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় ও টাস্কফোর্স কমিটির সভায় অবহিত করবে, কিন্তু তা করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কমিটিতে জনপ্রতিনিধিদের রাখা হলেও কার্যত তারা অসহায়।


প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব পিআইও মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর সংক্রান্ত সব ফাইলপত্র ইউএনও স্যারের কাছে। স্যার এটির আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।


প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী মহর আলী বলেন, ঘর সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে কমিটির সদস্য হিসেবে রাখলেও কোনো মিটিংয়ে আমাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়নি। তাই এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।


সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, শুধুমাত্র খাস জমি বরাদ্দের আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আমি ছিলাম। অন্য কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা আমার এখতিয়ার বহির্ভূত।


এদিকে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আবেদন করেছেন ধূলাসার ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের বাদল খান নামের একজন ভুক্তভোগী।


ভুক্তভোগী বাদল খান তার লিখিত অভিযোগে বলেন, ধূলাসার ইউনিয়নে ইউএনও’র নামে ঘরপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা করে মোট ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। ঘর তৈরিতে নিম্নমানের ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করায় ইসমাইল হাওলাদার, বাদল, দুলাল ও রতন মোল্লার ঘর নির্মাণের পর পরই ভেঙে পড়ে, যা তড়িঘড়ি করে আবার কোনোরকমে মেরামত করা হয়।


তিনি বলেন, পশ্চিম ধূলাসার গ্রামের মৃত নাসির গাজীর ছেলে সুমন গাজীকে পশ্চিম চাপলি ও চরচাপলি গ্রামের বাসিন্দা দেখিয়ে একই নামে দু’টি ঘর বরাদ্দ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে, যা নামের তালিকার ২৭৮ ও ২৯৭ নম্বরে দৃশ্যমান।


এ সব অভিযোগের ব্যাপারে সোমবার (৫ জুলাই) বিকালে কলাপাড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি বিবার্তাকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে একটি তদন্ত কমটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে তদন্তে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।


তিনি আরো বলেন, সেখানে স্থানীয় দুটি গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণদ্বন্দ্ব ছিল। তাই এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। তবে বর্তমানে বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।


এ ব্যাপারে জানতেপটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।


আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন বিবার্তাকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের নীতিমালা বহির্ভূতভাবে ঘর বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ নীতিমালা বহির্ভূতভাবে ঘর বরাদ্দ দেয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/আবদাল/খলিল/উজ্জ্বল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com