শিরোনাম
আশ্রয়ণ প্রকল্প: সরিষাবাড়িতে পানিতে ভাসছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ঘর (পর্ব-৮)
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২১, ১৫:৪৫
আশ্রয়ণ প্রকল্প: সরিষাবাড়িতে পানিতে ভাসছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ঘর (পর্ব-৮)
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঘরহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের অধিকাংশ ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি অল্প বৃষ্টির পানিতেই ভেসে যাচ্ছে গৃহহীনদের ঘর। গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য এসব ঘর দেয়া হলেও এখন উল্টো মাদরাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে হচ্ছে প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ঘরে ওঠার ছয় মাস না পেরোতেই এ অবস্থা দাঁড়ানোয় আতঙ্ক আর অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা।


আবাসন স্থান বিবেচনায় না নিয়ে এবং অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে গৃহহীনদের আবাসন প্রকল্প শেষ করায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে ভেস্তে যেতে বসেছে আশ্রয়হীনদের জন্য দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। তবে প্রশাসনের দাবি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বড় ধরনের কোনো ফাটলের দেখা পাওয়া যায়নি।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: কলাপাড়ায় আড়াই কোটি টাকা লোপাট (পর্ব-১)
বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: নির্মাণ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে গেল ঘর (পর্ব- ২)


সরিষাবাড়ি উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দি রেল স্টেশন থেকে পশ্চিমে আধা কিলোমিটার সামনে তৈরি করা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সারি সারি ঘরগুলো। দূর হতে মনোরম এবং সুদৃশ্য মনে হলেও এসব ঘরের ভেতরে রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের দুর্ভোগের নানা চিত্র।


প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি ঘরেই দেখা দিয়েছে ফাটল। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় ঘরে এমন ফাটল দেখা দেয়ায় আশ্রিতরা যেকোন সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন।


আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আলো বেগম জানান, অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘরে উঠেছি। কিন্তু আজ আমাদের এ অসহায়ত্ব দেখার কেউ নেই।



উপজেলার ৮নং মহাদান ইউনিয়নের করগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২১টি ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরের ব্যয় বাবদ বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। গত জুন মাসে করগ্রাম এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। নলকূপ, টয়লেট ও রান্না ঘরের চুলাসহ প্রায় সব কিছুই ডুবে যায়। এ কারণে বাসিন্দাদের স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সরিয়ে নেয় প্রশাসন। বিলের মাঝখানে অপরিকল্পিত ভাবে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহহীনদের জন্য সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।


জানা গেছে, যাতায়াতের রাস্তা ছাড়া ‘ছাইতানি’ বিলের মাঝে নির্মাণ করা হয়েছে গৃহহীনদের এ আবাসন প্রকল্প। অল্প বৃষ্টিতেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের চারদিকেই থৈ থৈ করে পানি। মৌসুমে ঘরের অর্ধেক পর্যন্ত পানি ওঠার আশংকায় আতঙ্কিত উপকারভোগীরা। বন্যার পানিতে এ দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করতে পারে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপকারভোগী জানান, প্রকল্পের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের খামখেয়ালীপনা ও একটি প্রভাবশালী দালালচক্রের হাত রয়েছে। তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ঘর ধসে পড়ার আশঙ্কা নিয়ে রাতে ঘুমাতে যেতে হয়।


উপকারভোগীরা জানান, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি তাদের কাছে জমির কাগজপত্রসহ ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হলেও বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, নিরাপত্তা, যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা করা হয়নি। নিম্নমানের কাজ করায় ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরে উঠতে না উঠতেই এমন ফাটল দেখা দেয়ায় স্বপ্নের ঘরে থাকা নিয়ে শঙ্কিত তারা। এসব ঘটনার দায়ভার প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে জড়িতদের নিতে হবে বলে জানান আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>> আশ্রয়ণ প্রকল্প: মেহেন্দিগঞ্জেও ভেঙে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সেই ঘরগুলো (পর্ব-৩)
বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: মির্জাপুরেও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভেঙে তছনছ! (পর্ব- ৪)


উপকারভোগী বিধবা সুফিয়া বেগম জানান, বড় শখ করে এসেছিলাম এখানে। সরকার আমাদের ভালোর জন্য ঘর দিলো। আর এখানের মানুষ আমাদের পানি খাওয়াচ্ছে। এখন অজানা আতঙ্কে রাত কাটাতে হচ্ছে।


আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ি উপজেলায় ২৯৫ টি ঘর নিমাণের জন্য ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর ও জমির কবুলিয়ত দলিল হস্তান্তর করা হয়।


এ বিষয়ে জানতে সরিষাবাড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ও প্রকল্পের সদস্য সচিব হুমায়ুন কবীরের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।



এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শিহাব উদ্দিন আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, এ উপজেলার অধিকাংশ খাসজমি নীচু। প্রকল্প কমিটি উপযুক্ত খাস জমি পাওয়ায় জায়গাটি নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু টানা ভারি বর্ষণ হওয়ায় এখানে পানি জমে যায়। তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।


উপকারভোগীদের এখনো প্রকল্প এলাকায় ফেরানো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের যারা পানিবন্দি হয়েছিলেন তাদের ঘরগুলো আমরা পাশের একটি গ্রামে সরিয়ে নিচ্ছি। সেখানে তাদেরকে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: লক্ষ্মীপুরেও ভেঙে পড়ছে ঘর, কয়েকটিতে ফাটল (পর্ব-৫)
বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প : ৬ মাস না যেতেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল (পর্ব-৬)


আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিভিন্ন ঘরে ফাটল দেখা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে শিহাব উদ্দিন বিবার্তাকে বলেন, শুরুর দিকে ছোট ছোট কিছু সমস্যা ছিলো। সেসব আগেই সমাধান করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ওইভাবে কোনো ফাটল নেই। আমরা প্রতিদিনই এসব এলাকায় যাচ্ছি। যাতে বাসিন্দাদের কোনো ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় এসব বিষয়ে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি।


জামালপুর জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ কবির উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে সরিষাবাড়ি উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই। তথ্য জানতে চাইলে ইউএনও’র কাছে ফোন দেন।


বিবার্তায় আরো পুড়ন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: স্বপ্নের ঠিকানা পেয়েও আশ্রয়হীন সুবিধাভোগীরা, শাল্লায় নজিরবিহীন দুর্নীতি (পর্ব-৭)


আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্ববৃহৎ মানবিক প্রকল্প হলো আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রত্যেকটি বাড়ির সঙ্গে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন জড়িত। মহামারি পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিদর্শনে করছি। দেশের অনেক জায়গায় অতিবৃষ্টি, বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু কিছু জায়গায় বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা সেসব জায়গায় পুনরায় বাড়ি নির্মাণ অথবা সংস্কার করে দিচ্ছি। প্রকল্পের অনিয়ম বা গাফিলতি নিয়ে আমাদের অবস্থান শুরু থেকেই জিরো টলারেন্স। কোনো এলাকায় দুর্নীতি ও অনিয়ম পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/সোহেল/গমেজ/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com