পতন থামার লক্ষণ নেই, দুই শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ অব্যাহত
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪, ২০:৫৪
পতন থামার লক্ষণ নেই, দুই শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ অব্যাহত
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের দুই শেয়ারবাজারে আজ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে লেনদেন শেষে সূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে দাম পড়তির মুখেও বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বাজেটের পর বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই কেনার মতো ক্রেতা মিলছে না। ক্রেতাশূন্য বাজারে এখন বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও হু-হু করে কমছে। পতনের ধাক্কায় সিংহভাগ পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস তৈরি হয়েছে।


ফলে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ । নগদ অর্থ বিনিয়োগ করে কেউ পথে বসছেন, বিশেষ করে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা আম-ছালা উভয়ই হারাচ্ছেন। কেউ আবার দাম বাড়বে আশায় দীর্ঘকাল অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।


বিনিয়োগকারীদের অভিমত এটা ২০১০ সালের পরিস্থিতিকে হার মানিয়েছেন। দরপতন ঠেকাতে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।


কয়েকদিন পরই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। পুঁজিবাজারের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর জন্য এবারের ঈদ মাটি হয়ে যাবে। কারণ বাজারে যে হারে দরপতন হয়েছে, তাতে অনেকেই বিনিয়োগ করা পুঁজির ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মতো হারিয়ে ফেলেছেন। । মুনাফা দূরের কথা, ঈদের আগে শেয়ার বিক্রি করে মূল পুঁজি উত্তোলন করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিনিয়োগকারীরা এখন চোখে সরিষার ফুল দেখছেন। সবারই দিশেহারা অবস্থা। বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষার কোনো উপায়ের দেখা মিলছে না।


বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই মাসের বেশি সময় যাবত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গেইন ট্যাক্স আরোপ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর সুবিধা কর্তনের বিষয়ে গণমাধ্যমে নানা রকম নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছিল। এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজাওে চলছে টানা দরপতন। এই সময়ে ডিএসইর সূচক গায়েব হয়ে গেছে ২ হাজারের বেশি। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি যেখানে ডিএসইর সূচক ছিল ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্ট। ১৭ মাস ১০ দিন পর গতকাল ১০ জুন ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০৫ পয়েন্টে। এই সময়ে ডিএসইর সূচক কমেছে পুরো ২ হাজার পয়েন্ট। আর ক্যাপিট্যাল গেইন ট্যাক্সকে কেন্দ্র করে সূচক খোয়া গেছে ৭৫০ পয়েন্টের কাছাকাছি।


বাজার আজও ছিল লাগামহীন। তবে আগের দুই দিনের চেয়ে তান্ডব কমেছে। আগামী কাল থেকে বাজারঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


১১ জুন, মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৩৫.৮৭ পয়েন্ট, লেনদেন হয়েছে ৪৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।


অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে(সিএসই) সিএএসপিআই সূচকের পতন হয়েছে ১০৭.৭৪ পয়েন্ট আর লেনদেন হয়েছে ১০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বাজেট ঘোষণার পর চলতি সপ্তাহে টানা তিন কার্যদিবসেই পতনে রয়েছে বাজার।


ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


ডিএসইর বাজার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মঙ্গলবার লেনদেন শুরুর প্রথম ৫ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮২ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর আবার বাজারটি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে আসে। লেনদেনের পৌনে এক ঘণ্টায় সূচকটি ৫ হাজার ১২২ পয়েন্টে উঠে যায়। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের শেয়ার বিক্রির চাপে বাজারটি ধীরে ধীরে পতনের দিকে ধাবিত হয়। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচক প্রায় ৫০ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ৫৬.৮৬ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর আবার শেয়ার কেনার চাপ বেড়ে গেলে মূল্যসূচকের পতন কিছুটা কমে আসে। তবে শেষ পর্যন্ত পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক ৩৫.৮৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭০.০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৯.৮৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৩.৭৮ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ সূচক ৮.৭২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮০৩.০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।


এদিন ডিএসইতে ১০ কোটি ৯৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭০১টি শেয়ার ও ইউনিট ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ার ও ইউনিটের বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা আগের দিন সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৩১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ আজ লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১১৩ কোটি টাকা।


এদিকে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৪টি কোম্পানি ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ৩০৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫ কোম্পানির শেয়ার দর।


আজ ডিএসইতে লেনদেনের দিক দিয়ে শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় প্রথমে উঠেছে বিকর ফার্মার শেয়ার। কোম্পানির মোট ৫০ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৪টি শেয়ারের লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় শীর্ষ লেনদেন হয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের। কোম্পানির ৩২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ছিল ১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে সী পার্ল বিচ। কোম্পানিটির ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এরপরে শীর্ষ ১০ কোম্পানি তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে- তৌফিকিয়া ফুড এন্ড লাভেলো আইসক্রিম লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেড, ব্রাক ব্যাংক পিএলসি, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার কোম্পানি লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেড ও ওরিয়ন ফার্মসিউটিকেলস লিমিটেড।


অপর বাজার সিএসইতে আজ শেষে সিএএসপিআই ১০৭.৭৪ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৫৭০.৩৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এক্সচেঞ্জটিতে মোট লেনদেন হয়েছে ১০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যা আগের দিন (সোমবার) লেনদেন হয়েছিল ২৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।


এছাড়া এক্সচেঞ্জটিতে ২১১টি কোম্পানি ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টি কোম্পানির শেয়ার দর।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com