ডিজিটাল বাংলাদেশে এনালগ আওয়ামী লীগ
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১৯:২৯
ডিজিটাল বাংলাদেশে এনালগ আওয়ামী লীগ
জুয়েল রাজ
প্রিন্ট অ-অ+

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কথাটি প্রথম সামনে আসে ২০০৮ সালে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে।


ডিজিটাল বাংলাদেশ! আজ ২০২৩ সালে এসে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর ডিজিটাল বাংলাদেশেই হয়েছে। শুরুর দিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি এক ধরনের হাস্যরসের বিষয় ছিল। পত্রিকায় তখন নানা রকম ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু আজ সেসব আর গল্প নয়, সব ইতিহাস। শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন বাস্তবেই করে দেখিয়েছেন।


ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার চারটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছিল। মানব সম্পদ উন্নয়ন, জনগণের সম্পৃক্ততা, সিভিল সার্ভিস এবং দৈনন্দিন জীবনের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। প্রথম তিনটি বিষয়ে সরকারের জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ শতভাগ সফল। সরকারি পরিষেবায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে দল হিসেবে পিছিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। সেখানে রাজত্ব করছে আওয়ামী বিরোধী শক্তি।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব ডিজিটাল মাধ্যম তাদের দখলে। কিছু গণমাধ্যমের মালিকানায় সরকার সমর্থিত মানুষজন থাকলে ও কর্মীদের অধিকাংশই মূলত আওয়ামী বিরোধী শিবিরের লোকজন। সেটি সংবাদ প্রকাশের ধরণসমূহ দেখলেই ধারণা পাওয়া যায়। এর সর্বশেষ উদাহরণ যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর বিবিসি বাংলা থেকে শুরু করে বহু মূলধারার গণমাধ্যম তার অপরাধের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কোথাও রাজাকার, মানবতাবিরোধী অপরাধী, কিংবা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি- এই জাতীয় কোন শব্দই ব্যবহার করেনি। একজন স্বাভাবিক ধর্মীয় নেতা হিসাবেই প্রচার করেছে। সাংবাদিক হিসাবে বেশ কিছু গ্রুপে যুক্ত থাকার সুবাদে দেখছি, সাঈদীর মৃত্যুর পর সেই সব গ্রুপগুলোতে প্রবাসী, দেশি সাংবাদিকদের শোকের মাতম আর হাহাকার। আমি অবাক হয়ে শুধু দেখে গেছি, সেই প্রেম এবং মাতম। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ, সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই স্মার্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।


ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনায় বা পথচলায় সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন CRI আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আর আছে সরকারি ভাবে অ্যাসপায়ার টু ইনোভেশন A2i আইসিটি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইউএনডিপির সংযুক্তিতে তৈরি একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এজেন্ডার একটি বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবিক কার্যক্রম গ্রহণে কাজ করছে। এটুআই পাবলিক সেক্টরের ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করতে পাবলিক সার্ভিস উদ্ভাবনের সুবিধা দেয়।


অন্যদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিনটিকে স্মরণ করে বিগত কয়েক বছর ধরে আয়োজিত হয়ে আসছে ‘জয় বাংলা কনসার্ট’। একদিনের কনসার্টে নগরকেন্দ্রিক তরুণ প্রজন্ম গান-বাজনা উপভোগ করেন। শুধু মাত্র ৭ই মার্চের ভাষণের জন্য তারা সেখানে সমবেত হয় না। তারা সমবেত হয় সেখানে উল্লাস করতে। কিন্তু যে কোটি কোটি তরুণ-তরুণী এর বাইরে রয়ে গেছে- তাদের কাছে পৌঁছানোর কোন মাধ্যম কি তৈরি হয়েছে? শুধু ৭ মার্চের ভাষণ নয়, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী হতে পারত সেই বিশাল ক্যানভাস, তরুণ প্রজন্মকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশ পরবর্তী সময়ে খুব প্রচার প্রচারণা হয়েছিল। কিন্তু এর পর আর কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।


অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান আছে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন, এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মূলত কিছু সেমিনারেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে উল্লেখ করার মত কিছু আসলেই নাই। এর মাঝেই সীমাবদ্ধ আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন মন্ত্রী আছেন যারা সরব- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন। বাকিরা এসবের ধারে কাছেও নাই।


এসব বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠনের নামও হয়তো সাধারণ মানুষ জানে না। কিংবা তারা কি কাজ করে তাও জানে না। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচিত না। তাদের কাছে এর চেয়ে বেশি পরিচিত পিনাকী, ইলিয়াস ও কনক গং।


কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা কী? সরকারি তথ্যমতে, ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ইন্টারনেট ব্যবহার করত মাত্র ০.২৩ শতাংশ, ২০২৩ সালে আজকে বাংলাদেশের ৭৭.৫৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী এর সুবিধা গ্রহণ করছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ মিলিয়ন, সেখানে ২০২৩ সালে মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮৩.৫৩ মিলিয়ন। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ আমলে ডিজিটাল সকল সুবিধা পেলেও ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সব থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে এই আওয়ামী লীগই।


শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী কিংবা শিশুদের ও নিত্যসঙ্গী এখন মোবাইল, ট্যাব, আইপ্যাড। আর সেখানে ইউটিউব এবং ফেইসবুক সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। আর এই দুই জায়গায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি খুবই সামান্য। বরং আওয়ামী বিরোধী প্রচারকগণ একেকটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।


এইসব গুজব, মিথ্যা প্রচারণা অনেকেই আমলে নেন না। আমরা হেসে উড়িয়ে দেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষের মনোজগতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে এইসব আলোচনা। নানারকম সত্য-মিথ্যার মিশেলে তাদের নাটকীয় উপস্থাপনা কিংবা চটকদার শিরোনাম সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে ব্যাপকভাবে। এর বাইরে মোবাইল টিভি বা অনলাইন টিভিগুলোর দৌরাত্ম্য আরও ভয়ানক। এইসব মাধ্যমে আওয়ামী সমর্থক খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। আর যদিওবা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো কিছু মানুষ কাজ করছে, তাদের ক্ষেত্রেও কোন ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি আওয়ামী লীগ। বরং ফুলে-ফেঁপে উঠে সাহেদ, সাবরিনা ও পাপিয়ারা।


মানবতাবিরোধী অপরাধে আজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর সেই দৃশ্যপট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। অনেকেই বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখে মাঠের রাজনীতি যাচাই করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেয়ার বহু উদাহরণ আমরা বিশ্বের বহু দেশেই দেখেছি। কেউ যদি এই সময়ে এসে এসব উপেক্ষা করে, তাহলে বোকামিই করবেন।


অনলাইনে বাহাস-বিতর্ক করে সমাধান আসে না। সমাধান হয় তো রাজনৈতিক ভাবে রাজপথেই আসে। কিন্তু সেই সমাধানে জন মানুষের ভাবনা, মানসিক সমর্থন একটি বড় বিষয়। উদাহরণ হিসাবে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা ছিল সীমিত কিন্তু রাজাকার আলবদর ছাড়া সারাদেশের সাধারণ মানুষ তাদের সাথে ছিল। এই সাথে থাকাটা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। সাধারণ মানুষ সাথে না থাকলে বিজয় লাভ করতে কত ৯ মাস লাগত, তা আমরা জানি না। ঠিক তেমনি জনমনে বা এই ডিজিটাল প্রজন্মের বিশ্বাস এবং মতামত গ্রহণ করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো।


ব্রিটেনে ব্রেক্সিটের সময় দেখেছি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করেছে পক্ষ অবলম্বন করতে। আজ ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে যারা ব্রেক্সিট এর পক্ষে ছিল তারা অনুধাবন করছে এবং স্বীকার করছে তারা ভুল করেছিল। নিকট অতীতে বাংলাদেশে গণজাগরণ মঞ্চ, আরব বসন্তসহ বহু ঘটনা আছে।


দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর তার অপরাধের রেফারেন্স হিসাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত সাংবাদিক ফজলুল বারীর দুইটা লেখা অনেকেই শেয়ার করছেন, এবং ব্যাপক ভাবে আলোচিতও হচ্ছে। এর বাইরে সাঈদীর অপরাধ নিয়ে অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করলে খুব বেশি কিছু পাওয়া যায় না। আমি নিজেই গুগলে বহুভাবে চেষ্টা করেছি। খুব বেশি তথ্য নেই। কেউ যদি অনলাইন থেকে তথ্য নিতে চায়, সেখানে সাঈদীকে ইসলামী নেতা হিসাবে পাবে। একসময় বিভিন্ন ব্লগে সাঈদীর কুকর্ম নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি ছিল। ব্লগারদের খুনের পর ব্লগগুলোই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। তাই অনলাইনে কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না।


অনেকেই সাঈদীকে ইসলামী চিন্তাবিদ মনে করে। অন্যদিকে জামাত-শিবির ধর্মীয় বিষয়ে এমনভাবে তাদের শক্তি প্রদর্শন করেছে বাংলাদেশে- সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না। নিজেদেরকে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। তারা মূলত নেতাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা কিংবা নেতার দেয়া ছবিতে সহমত ভাই দিতেই বেশি ব্যস্ত। হাজার হাজার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক সাঈদীর মৃত্যুতে শোকাভিভূত হয়েছেন।


এর কারণ খুব পরিকল্পিত ভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সূক্ষ্মভাবে ধর্মের সাথে রাজনীতি মিশিয়ে বিগত ১০ বছর প্রচার প্রচারণা চালিয়ে মানুষের মনোজগতে এক ধরনের দোদুল্যতা তৈরি করেছে। তাই ছাত্রলীগ করা ছেলেটিও ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর ছবি শেয়ার করে, রাজাকার দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ও শোক প্রকাশ করে।


অনলাইনের এই যুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রচণ্ডভাবে পিছিয়ে আছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অনেক কমিটি উপকমিটি আছে। বড় বড় এমপি-মন্ত্রী নেতারা সেসব কমিটির সদস্য- যাদের হয়তো একটি ফেসবুক আইডিও নাই। কিংবা থাকলে ও বেতনধারী কেউ সেই আইডিতে নেতার ছবি আপলোড করা ছাড়া আর কিছুই করে না।


জামায়াত ইসলাম কিংবা তাদের সমর্থকগণ এত ব্যাপক পরিমাণে সরব যে, তাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, কিংবা তাদের বিরুদ্ধে যায় এমন সত্য প্রকাশ করলেও তারা সেখানে জঘণ্যভাবে গালি-গালাজ শুরু করে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আজেবাজে অশ্লীল মন্তব্য করে। নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারে বাধ্য করে। অথবা একযোগে তার আইডিতে রিপোর্ট করে, ফেসবুক থেকেই তাকে হারিয়ে যেতে বাধ্য করে।


সামনে নির্বাচন, তাই ধর্মের মোড়কে মিথ্যাচার নিয়ে নামে-বেনামে সেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে এই গোষ্ঠী। সাধারণ মানুষের ভিতরে আবেগ তৈরি করে সেই আবেগ দিয়েই প্রভাবিত করবে তাদের। সেই আন্তর্জালিক যুদ্ধে আওয়ামী লীগ এর চেয়ে হাজার গুণ বেশি সুবিধা নিবে তারা। ২০১৩ সাল থেকেই সেটা প্রমাণ হয়ে আসছে।


লন্ডনে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষায় আছি। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার কারণে বেশিরভাগ অপেক্ষমাণ রোগীও বাঙালি।


এককোনায় ৪/৫ জন মহিলা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। একজন বয়স্ক মহিলা মোটামুটি ভাষণের মতই দিয়ে যাচ্ছেন বলা যায়। লন্ডনে যারা মিথ্যা বলে সরকারের ভাতা খায়, তারাই আবার হালাল-হারাম খোঁজে? আমি আলাপ শুনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। তাই আগ্রহ নিয়ে শুনছিলাম। ভদ্রমহিলার কথাবার্তা।


প্রসঙ্গক্রমে তাদের আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ চলে আসে। তিনি এক পর্যায়ে বলেন তারেক জিয়া বসে আছে লন্ডনে, এইখানে বসে নির্দেশ দেয়, দেশের মানুষ বেকুবের মত মিছিল মিটিং করে মারামারি কাটাকাটি করে, আবার শেখ হাসিনার ছেলে বসে আছে দুবাইয়ে- আমেরিকা নাকি তাকে থাকতে দিচ্ছে না সরকার। তো আমি অনেকক্ষণ শুনে বললাম চাচি এইটা কোথায় পেলেন- শেখ হাসিনার ছেলেকে আমেরিকা ঢুকতে দিচ্ছে না? তিনি জানালেন ফেসবুক-ইউটিউবে নাকি দিয়েছে এই সব। এই ঘটনাটি হয়তো খুবই ছোট, কিন্তু এর প্রভাব ব্যাপক। সেখানে তারেক রহমান এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে একই ভাবে চিন্তা করছে যে, দুইজনই দুর্নীতির সাথে জড়িত।


ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশের নামে একদল ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠী তৈরি করে চলছে রাষ্ট্র। এবং সেটি কোনোভাবেই তাদের দোষ নয়। যেখানে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা মুক্তিযুদ্ধ গৌণ হয়- ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণা মুখ্য হয়, রাজাকার, আলবদর ধর্মীয় নেতার খেতাব পায় সেই দেশে, এই প্রজন্মই গড়ে উঠবে।


আমি অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশ্ন করেছি, যুদ্ধ করে, জীবন বাজি রেখে একটি দেশ স্বাধীন করলেন- সেই দেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা এত শক্তিশালী ভাবে ফিরে আসল কেমন করে? তাঁদের প্রায় সবার উত্তরই ছিল, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা ভেবেছি আমাদের কাজ শেষ। আমরা ঘরে ফিরে গিয়েছি। বাকী কাজ দেশ করবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শাসকগণ সেই কাজটি ভিন্নভাবে করেছেন। তখন আর আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি-সামর্থ্য ছিল না। আমার মনে হয় ঠিক একই অবস্থা হবে এই ডিজিটাল এর ক্ষেত্রেও। শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে দিচ্ছেন, আর সেখানে রাজত্ব করছে সেই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী।


দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এর চেয়ে অন্যান্য সংগঠন বরং বেশি ডিজিটাল। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একটা ডেটাবেইজ পর্যন্ত এখনো তৈরি হয়নি। কর্মী সমর্থক না হোক, শুধুমাত্র মূল সংগঠন ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের পদ পদবিতে আছেন তাদের একটি তথ্যভাণ্ডরও আওয়ামী লীগের নেই। মিছিল দিলে, সভা হলে হাজার হাজার মানুষ যে আসে এরা কারা? যারা বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর জন্য শোক করে এরা কারা? এদের সাথে নিয়ে কি সেই যুদ্ধে জিততে পারবে আওয়ামী লীগ?


লেখক- সাংবাদিক, কলামিস্ট


বিবার্তা/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com