শিরোনাম
বাল্যবিয়ে রোধে আইন আছে, কঠোরতা নেই!
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৩৪
বাল্যবিয়ে রোধে আইন আছে, কঠোরতা নেই!
মো: নয়ন সরকার
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দিনে দিনে দেশে আগের থেকে বাল্যবিয়ে অধিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামীন পরিবার গুলোর মাঝে সন্তানদের নিয়ে এক ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। ঠিক একই সময় প্রবাসে থাকা ( বিভিন্ন দেশে কর্মরত অধিবাসী ) যুবকের বাড়িতে ফেরার চাপ বৃদ্ধি পায় । করোনা পরিস্থিতে বাড়িতে থেকে এই ছুটির সময়টা বেঁছে নেয় নতুন জীবন শুরু করার। অপরদিকে গ্রামের অভিভাবকরা প্রবাসে থাকা ছেলে বা যুবককে জামাই করতে বেশি পছন্দ। ঠিকই তারই সূত্র ধরে প্রবাসে থাকা ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছেন অপ্রাপ্ত বয়স্কের কন্যাকে। অন্যদিকে প্রশাসনের নজরদারিও একদম কম যা চোখে পড়ার মতো নয়। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের মেয়েদের বাল্যবিয়ে বেশি হয় বলেও জানা যায় । আবার বাল্যবিয়েতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সহযোগীতাও থাকে বলে অভিযোগ আছে ।


যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা মাখনবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বালিকা বিদ্যালয়ের একই শ্রেণির ৯ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে । যাদের মধ্যে একজনের ও বিয়ের বয়স হয়নি বলে জানা যায় ।


অন্যদিকে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ৯জন শিক্ষার্থী ছিলেন । তার মধ্যে ৮জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে । এদের সবারই বাল্যবিয়ের স্বীকার বলে জানা যায় । করোনা পরিস্থিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সহপাঠিদের বিয়ে হয়ে গেছে বলে মনে করে শিক্ষার্থী নার্গিস নাহার। যার এখন কথা বলার কোনো সঙ্গী নেই। বান্ধবীদের ছাড়া মন খারাপের মধ্য দিয়েই স্কুলে সময় কাটছে তার। যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলো। এদিকে বিভিন্ন সংগঠণের গবেষণায় বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওযার প্রমাণ স্পষ্ট থাকলে সরকারি পর্যায়ে তা স্বীকার করা হচ্ছে না ।


আন্তর্জাতিক সংগঠণ প্লান ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলছে , চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে জেলায় বাল্যবিবাহের সংখ্যা ছিল ৮ শতাংশ । এপ্রিলে বৃদ্ধি পায় ১ শতাংশ । মে মাসে মোট বিয়ের প্রায় ১১ শতাংশ বাল্যবিয়ে হয়। এই চার মাসে নিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা কমে বেড়েছে অনিবন্ধিত বিয়ে। অপরদিকে যেখানে ফেব্রুয়ারিতে ১৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয় পরবর্তী মে মাসে সংখ্যা মাত্র দুটি । ধীরে ধীরে বাল্য বিয়ে ঠেকানোর ঘটনাও কমছে ।


অপরদিকে আইন ও শাস্তি বলছে ভিন্ন কথা


আইন ও শাস্তি: ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুসারে বাল্যবিবাহ বলতে বোঝায় শিশু বা নাবালক বয়সে ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিয়ে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন অনুযায়ী ছেলে-মেয়ে উভয়েরই বা একজনের বয়স (ছেলের ক্ষেত্রে ২১ বছর এবং মেয়ের ক্ষেত্রে ১৮ বছর) বয়সের চেয়ে কম হলে তা আইনত বাল্যবিবাহ বলে চিহ্নিত হবে। বাল্যবিবাহ তিন ধরনের হয়ে থাকে- প্রাপ্ত বয়স্কের সঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়স্কের বিবাহ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের বিবাহ এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কের মাতা-পিতা, অভিভাবক কর্তৃক বিবাহ নির্ধারণ অথবা এ রকম বিবাহে সম্মতি দান। যারা এ অপরাধে অপরাধী, তাদের মধ্যে ছেলে-মেয়ের অভিভাবক, ছেলে-মেয়ে (যদি ২১ বছরের নিচে হয় অথবা মেয়ে যদি ১৮ বছরের নিচে হয়), কাজী যিনি বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন, মৌলভী যিনি বিবাহ পড়াবেন, তাদের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।


তবে, এ আইনে শাস্তির যে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে তা বেশ কম। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো ছেলে অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো মেয়ে শিশুর সঙ্গে বিয়ের চুক্তি সম্পাদন করলে এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ১ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় প্রকারের শাস্তি হতে পারে। যে ব্যক্তি নাবালকের বিয়ে দেবে, তার এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ১ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় প্রকারের শাস্তি হতে পারে। যেসব অভিভাবক নাবালকের বিয়ে দেবে, তাদের এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ১ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় প্রকারের সাজা হতে পারে। বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত নতুন আইন করার প্রাক্কালে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর একটি প্রস্তাব করা হচ্ছিল। যা নিয়ে যথেষ্ট তোলপাড় হয়। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরই থাকছে। তাই বর্তমান আইনে বিয়ের বয়সের কোনো হেরফের হচ্ছে না।


আবার সরকারি কর্মকর্তা ও সমাজের সচেতন মহল দাবি বলছে বাল্যবিয়ে রোধের ক্ষেত্রে শুধু আইনের প্রয়োগই যথেষ্ট নয়, আইনের সাথে সমাজের সকলকে (স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক - শিক্ষিকা, এলাকাবাসী) এগিয়ে আসতে হবে এবং সচেতন সৃষ্টি করে অভিভাবকদের কাছে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে ক্ষতিও সন্তানের ভবিষ্যৎ দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।


লেখক: গণমাধ্যমকর্মী


বিবার্তা/ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com