শিরোনাম
‘স্মৃতির চিলেকোঠায় গণজাগরণের ঐতিহাসিক মুভমেন্ট’
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:১৩
‘স্মৃতির চিলেকোঠায় গণজাগরণের ঐতিহাসিক মুভমেন্ট’
ভূঁইয়া মো: ফয়েজউল্লাহ মানিক
প্রিন্ট অ-অ+

গত ৪ সেপ্টেম্বর,২০১৬ তারিখের সকাল ছিল স্বস্তির আর তৃপ্তির । সেদিনের সূর্যোদয় বাংলাদেশে এক স্বস্তিকর আবহ তৈরি করেছে । ৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৩ সালে কাদের মোল্লার ফাসির রায়কে কেন্দ্র করে যে গণ-জাগরণের সূচনা হয়েছিল কিংবা শাহবাগ মুভমেন্ট হিসেবে যে ঘটনাটি সমগ্র বিশ্বের নজর কেড়েছিল, তা মোটামুটিভাবে ইতি টেনেছে বলা যাবে। স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর পর বাংলাদেশের ইতিহাসে গুটিকয়েক কলঙ্কিত ইতিহাসের মধ্যে অন্যতম ইস্যু যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বিশ্বের বুকে আবারো প্রিয় এই বাংলাদেশকে নতুন আঙ্গিকে প্রচন্ড আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন জাতির এক অনুকরণীয় রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করিয়েছে ।


যুদ্ধাপরাধীদের ভ্যানগার্ড জামাতের মানিম্যান খ্যাত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে প্রায় সমাপ্তির পথে এগিয়েছে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক ইস্যুতে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের এই কলঙ্কিত অধ্যায়ের । ইতোমধ্যেই বিচার সম্পন্ন হয়েছে অধিকাংশের এবং রায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রায় সকল শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ।


বাঙ্গালী জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমান যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন সময়ের পরিক্রমায় একটি গোষ্ঠী সেই বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল করে দিয়ে ইতিহাসের যে দুর্বিত্তায়ন করেছিল,মুজিব তনয়া শেখ হাসিনা সেই 'জাতীয় বেঈমান গোষ্ঠীকে' বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুনরায় পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজকে পূর্ণতা দিতে এই বিচার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করেছেন এবং আমরা দেখিছি অস্বাভাবিক রকম প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তার সরকার এই বিচার প্রক্রিয়াকে সমাপ্তির দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন ।


জাতির জনক প্রিয় বাংলাদেশকে যেমন জন্ম দিয়েছিলেন এবং বজ্রসম প্রত্যয় নিয়ে দেশগড়তে গিয়ে পথভ্রষ্ট কিছু বাঙ্গালী জাতির নষ্ট সন্তানের হাতে প্রাণ দিয়েছেন অসীম সাহসিকতায়,ঠিক তেমনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুজিব তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনাও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে পিতার অসমাপ্ত কাজ করছেন পিতার মতোই অসীম সাহসিকতায় । উনিশ বার প্রাণঘাতী হামলাও তাকে দমাতে পারে নি । জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুদা-দারিদ্র‍্য মুক্ত অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ সোনার বাংলার । পিতার স্বপ্নকে শেখ হাসিনা প্রায় পূর্ণ বাস্তবায়নের পথে নিয়ে এসেছেন আবার এখন তিনি আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন ২০২১ সালের মধ্যে এক নতুন রাষ্ট্র ডিজিটাল বাংলাদেশের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ভিশন-২০৪১ ঘোষণা করেছেন । তাই মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী একজন বাংলাদেশী হিসেবে কৃতজ্ঞচিত্তে মাননীয় নেত্রী যিনি ইতোমধ্যেই নিজ দক্ষতা আর যোগ্যতা দিয়ে বিশ্বনেতা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন, এই বাংলাদেশের গর্ব দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানাই ।



এই যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের দাবীতে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে অবস্থান ছিল অনেক আগ থেকেই ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির । জনতার আদালত করে এর প্রতিকী বিচারও হয়েছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের তত্ত্বাবধানে । সময়ের পরিক্রমায় অনেক প্রতিবন্ধকতার স্বীকারও হয়েছিলেন তারা । এই একই দাবীতে বাংলাদেশের সকল আন্দোলন -সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু প্রিয় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০০৯ সাল থেকে একটি সংগঠন কাজ করেছে প্রতিনিয়ত,ক্যাম্পাস অঙ্গনের রাজপথে তাদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম আর যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান ছিল সদা দৃশ্যমান । সেই সংগঠনটির নাম "স্লোগান'৭১"( https://www.facebook.com/slogan71.du/ )। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন । ২০১৩ সালে কাদের মোল্লার রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাস তথা আমার জানামতে স্লোগান'৭১ এর প্রতিবাদী মিছিলটিই ছিল সারাদেশের মধ্যেই প্রথম সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ। সেই মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করেছিল ।


একজন সক্রিয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ছাত্রকর্মী হবার সুবাদে আমিও ছিলাম সেই মিছিলে । যখনি মনে পড়ে সেই মিছিলের মূল স্লোগান ধরেছিলাম আমি তখন আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করি এবং স্লোগানের মধ্য দিয়ে মনে জমে থাকা মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই নরপশুদের প্রতি তীব্র ঘৃনা আর দেশের জন্য আত্মদানকারী সূর্যসন্তানদের প্রতি ভক্তি প্রকাশিত হয়েছে সেই স্লোগানের কথায় । ইতোমধ্যে শেষ বিকেল থেকে এই রায়ের প্রতিবাদে শাহাবাগে বিক্ষুব্দ জনতা জড় হচ্ছিল । স্লোগান'৭১ এর সেই মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে শাহাবাগে গিয়ে সেখানে উপস্থিত ছাত্র-জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনকে বেগবান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল যে আন্দোলন পরবর্তীতে 'শাহাবাগ মুভমেন্ট' নামে আত্মপ্রকাশ করে গণ আন্দোলনে রুপ নিয়েছিল এবং শাহাবাগে গড়ে উঠেছিল 'গণজাগরণ মঞ্চ' । এরপরেরটুকু প্রায় সকলেরই জানা ।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অন্যতম সংগঠন স্লোগান'৭১ । প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই গঠনটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করতে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । টিএসসির অন্যতম এই সংগঠনটি অন্যান্য সকল সংগঠনের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্কের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত সাংস্কৃতিক আন্দোলন তথা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনির্মানের এই মূল কেন্দ্রটির ভূমিকা সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে সম্মিলিতভাবে এবং প্রয়োজনে নেতৃত্বের ভূমিকাতে অবতীর্ণ হচ্ছে ।প্রতিষ্ঠাককালীন দাবীগুলোর অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে আর কিছু হবার পথে ৷ সফলতার সাথে এক দশকে উপনীত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুপরিচিত এই সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম বাঙ্গালী জাতির কলঙ্ক মোচনের প্রয়াসে জন্ম নেয়া জাতীয় গণজাগরণের সেই শাহাবাগ মুভমেন্টের সময়।



সময়ের প্রয়োজনে কালের পরিক্রমায় আরও নতুন নতুন অনেক সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ মুভমেন্টের জন্ম হবে হয়তো।এভাবেই আরও সমৃদ্ধ হবে বাঙ্গালীর গৌরবময় ইতিহাসের নানা অধ্যায়। আর এই ধারাবাহিকতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরও সুসংহত করবে এবং নতুন প্রত্যয়ী পথচলাকে অব্যাহত রাখবে । পরিশেষে যারাই এই বিচার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ভাবে যুক্ত ছিলেন কিংবা এই বিচারকে ত্বরান্বিত করতে সোচ্চার ছিলেন, সংগঠন স্লোগান'৭১ এর মতো সবাই আসলে এই অভূতপূর্ব অর্জনের ভাগীদার । বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিচক্ষণ আর বিস্ময়কর সব সাহসী পদক্ষেপে যখন নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বিরাট বাজেটের প্রকল্প প্রায় বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে কিংবা এরকম আরও গোটা দশেকের মতো বিগ বাজেটের প্রকল্পসমূহের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সর্বোপরি মুজিববর্ষ উদযাপনের এই সময়টিতে তাই প্রত্যাশা কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ।
জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু ।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবি হোন।


লেখক: বিএসসি(সম্মান),এমএস, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মী , উপ-প্রচার সম্পাদক- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সাবেক সহ-সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, সাবেক সভাপতি


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com