এবার রাজধানীতে 'হার্ডমুভমেন্ট' নিয়ে বিএনপি
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৭
এবার রাজধানীতে 'হার্ডমুভমেন্ট' নিয়ে বিএনপি
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনকে ঘিরে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এঁটেছে বিএনপি। কিছুটা ভিন্নভাবে ভেবে ভিন্ন পথেই আন্দোলন সফল করতে এবার প্রতিজ্ঞ দলটি। সারাদেশে পদযাত্রা, সমাবেশ, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, রোডমার্চসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পর এবার ঢাকাকেই আন্দোলনের কেন্দ্রে পরিণত করতে চায় বিএনপি।



সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সাংগঠনিকভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে জনসমাবেশ থেকে এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হতে পারে। দাবি মেনে না নিলে রাজধানী কেন্দ্রিক কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে বিএনপির দলীয় সূত্রে।



সূত্র জানায়, সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচির জন্য জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দল ও জোট। অতীতের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই রাজধানীকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ আশপাশের জেলাগুলোকেও প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এজন্য নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব জেলায় আন্তঃদলীয় কোন্দল, দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং থাকলেও তা ইতোমধ্যে মীমাংসা করা হয়েছে।


শেষ ধাপের সব কর্মসূচি ঢাকাকেন্দ্রিক হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে ৯ থেকে ১৮ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৮ অক্টোবর রাজধানীতে জনসমাবেশ ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেছেন, 'এর মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে ওই জনসমাবেশ থেকে শেষ কর্মসূচি দেওয়া হবে। শেখ হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পরিষ্কার বলতে চাই অনেক রোডমার্চ করেছি, সমাবেশ করেছি। এরপর রোডমার্চ নেই, সমাবেশও নেই। সব কর্মসূচি হবে রাজধানী ঢাকায়। এবার রাজধানীর পতন ঘটাতে হবে।'


জানা গেছে, সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সকল ডান এবং বাম রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে আলোচনা করেছে বিএনপি। আগামী ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক দল তাদের মুভমেন্ট জানান দিবে। এদিন জনসমাবেশ থেকে একদফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হতে পারে। আল্টিমেটামে কাজ না হলে ঢাকামুখী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।


সূত্র বলছে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।



বিএনপি চাইছে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের শেষ ১০ দিন বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে তাদের।



প্রথমে রাজধানী ঘেরাও, পরে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে। এছাড়া হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে দলটি।


বিএনপি নেতারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে শেষ ধাপের কর্মসূচি হবে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। সরকার কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাইবে দলটি।


বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, দেশের মানুষ এই সরকারকে না বলে দিয়েছে। এই সরকারকে মানুষ আর দেখতে চায় না। বিএনপির চলমান আন্দোলনে মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ১৪ এবং ১৮ সালের মতো ২৪ সাল হবে এটা ভাবার সময় নেই। বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটবে। সরকারের যদি বোধোদয় না হয়, তাহলে সময়ই বলে দেবে আন্দোলনের গতিধারা কোন পথে যাবে।



বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বিবার্তাকে বলেন, আমরা আশা করেছিলাম সরকার জনগণের ভাষা বুঝবে। আমরা চাইনি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে কোন সহিংসতা হোক রক্তপাত হোক। সরকারের আচরণে বোঝা যায় শেষ পর্যন্ত তারা সেদিকে নিয়ে যাবে। যদি ওদিকে নিয়ে যায় সেটার দায়-দায়িত্ব সরকারের। আমরা যে আন্দোলনের নেমেছি এই আন্দোলন জনগণের, এটা আমাদের দলের নয়। এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপার, এর সাথে জড়িত রয়েছে আমাদের ভোটাধিকার। এ আন্দোলন বিএনপির নয় জনগণের। এ আন্দোলন অবশ্যই সফলতার মুখ দেখবে এবং সফল হবেই। অতীতের সবসময় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন অনেক চড়াই উত্রাই হয়েছে কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয় হয়েছে। এই আন্দোলনেও চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ী হবে।



মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জনগণের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হবে না, সফল হবেই হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে চাই, কিন্তু সরকার যদি সেই পথে না হাটে তাহলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না। আন্দোলন যদি তার গতিতে চলতে না দেয় তখন সময়ই বলে দেবে আন্দোলনের গতিধারা কোন পথে যাবে। আর সেটা দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনে রয়েছি। জনগণ রাজপথে নেমেছে, এই সরকারের পতন অনিবার্য; আমাদের বিজয় সন্নিকটে। আমাদের চলমান আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। আন্দোলন আরো বেগবান হবে। সরকারের আচরণের ওপর আন্দোলনের ধরন নির্ধারণ হবে।


বিবার্তা/এমই/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com