চূড়ান্ত আন্দোলনের পূর্বে কঠোর বিএনপি
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ১২:৫৯
চূড়ান্ত আন্দোলনের পূর্বে কঠোর বিএনপি
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। চলমান আন্দোলন চাঙ্গা করার জন্য আপাতত ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে দলটি। আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ছক কষছে দলটির হাইকমান্ড। সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার পূর্বে দলের ভেতরে কঠোর হচ্ছে বিএনপি। এজন্য নিষ্ক্রিয়দের সরিয়ে পরীক্ষিতদের অগ্রভাগে আনা হচ্ছে।


চূড়ান্ত আন্দোলনে গতি ফেরাতে দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে দলটি। নিষ্ক্রিয় ও দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের কোন ধরনের ছাড় দিতে নারাজ বিএনপির হাই কমান্ড। এমন সিদ্ধান্তে পদ হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় বিএনপি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এদিন কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার পিছনে নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা এবং গাফিলতিকে দায়ী করা হচ্ছে। ২৯ জুলাই কর্মসূচি ব্যর্থতার পর এক দফার আন্দোলন যেকোনো মূল্যে সফল করার জন্য 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করে বিএনপি। পরে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে অসুস্থতা দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। এছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে বলেও জানা গেছে।



জানা গেছে, সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি ঘোষণার পূর্বে একটি রোড ম্যাপ তৈরি করে বিএনপির হাইকমান্ড। এ বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের দিকনির্দেশনাও দেন। কর্মসূচিতে রাজপথে থাকার প্রতিজ্ঞাও করেন তারা। এরপর ২৮ জুলাই মহাসমাবেশের পর ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল হতাশা জনক। অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ব্যতীত সিনিয়র নেতাদের তেমন দেখা যায়নি। এছাড়া দলটির মহানগরীর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অংশগ্রহণও ছিল হতাশা জনক।



বিএনপি সূত্র জানায়, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে গতি ফেরাতে কাজ করছে বিএনপি। আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে দলটি। সেপ্টেম্বরের কর্মসূচিকে সফল করার জন্য বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন গুলোকে আন্দোলন মুখী করা হচ্ছে। সেজন্য ওয়ার্ড থেকে থানা পর্যন্ত দায়িত্বে অবহেলা ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে কারণ দর্শানোর নোটি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেক নেতা কর্মীদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব ছাড়ার কথা বলছেন হাইকমান্ড।


বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, আন্দোলন কর্মসূচি দৃঢ় গতিতে চলছে না। আন্দোলনের একটি ব্যাকরণ থাকে। আন্দোলন এক এক সময় একেক রকম হয়। আমাদের প্রতি মুহূর্তে আন্দোলন হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষণে আন্দোলন হচ্ছে। আন্দোলন কর্মসূচি আসবে, তখন দেখতে পারবেন আন্দোলনের গতি কোন দিকে যায়। আমরা এক দফা যেদিন ঘোষণা করেছি সেদিন থেকে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।


ছাত্রদলের সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে প্রিন্স বলেন, ছাত্রদলের সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি। তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তারপরে যিনি জিনিস সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়েছেন তিনি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব রয়েছেন। এটা অসুস্থতার কারণে হয়েছে অন্য কোন বিষয় নয়। এখন এক দফার যে আন্দোলন হচ্ছে সেখানে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায় সেখানে ছাত্রদলের যে অংশগ্রহণ আধা গ্রস্থ হতে পারে সে কারণেই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে অন্যরকম কল্পনা বা গল্প বানানোর সঠিক কিছু নয়।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিবার্তাকে বলেন, নমনীয়তা এবং কঠোরতা এগুলো রাজনৈতিক ভাষা নয়। আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণকে আরো বেশি বেশি সম্পৃক্ত করে সাধারণ মানুষকে কিভাবে আগের প্রোগ্রামের থেকে পরবর্তী প্রোগ্রাম আরো সফলভাবে করা যায়। যেখানে ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকে সেখানে আক্রমণ আসলে সেই আক্রমণের আঘাত সয়ে উঠতেও কিছু সময় লাগে। যে হারে ২৯ জুলাই তারা যে তাণ্ডব চালিয়েছে; একদিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, অন্যদিকে সশস্ত্র দলীয় বাহিনী এদের আঘাতের পরে একটু তো আমাদের সময় লাগবেই। এটাকে নমনীয়তা বা কঠোরতা দিয়ে বিচার করলে ঠিক হবে না। আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। আন্দোলন কখন যে কোন দিকে যাবে সেটা সেটা ঘোষণা দিয়ে হয় না।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলেমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির আন্দোলন চলমান রয়েছে। আন্দোলন সব সময় এক রকম হয় না, আন্দোলন কখন যে কেমন হবে এটা বলে আসে না। আমারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চাই। এতে সরকার যদি পদত্যাগ না করে তাহলে সরকারের পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের কর্মসূচি আসবে। এ সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবেই। সময় বুঝেই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি পরিবর্তন করা হবে। সময় সেটা বলে দিবে কোন ধরনের আন্দোলন প্রয়োজন।


বিবার্তা/এমই/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com