'২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরোচিত ও বীভৎস হত্যাযজ্ঞের দিন'
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ১১:১১
'২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরোচিত ও বীভৎস হত্যাযজ্ঞের দিন'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, শনিবার। বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে চলছিল আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। ওই সমাবেশ শেষে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হওয়ার কথা ছিল। আর তাই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিকেল ৫টার একটু আগে সমাবেশস্থলে পৌঁছান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।


বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষের মুহূর্তেই শুরু হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। সেদিনের হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান। মারা যান আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ দলের ২৪ জন নেতা-কর্মী, আহত হন আরো অন্তত পাঁচ শতাধিক।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরোচিত ও বীভৎস হত্যাযজ্ঞের দিন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নজিরবিহীন ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সেদিন ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড ট্রাকে বিস্ফোরিত হলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কোন সিনিয়র নেতাই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশুন্য করার উদ্দেশ্যেই বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্টপোষকতায় ওই বিভৎস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।



আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারেক রহমান হাওয়া ভবনে বসে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও জঙ্গিদের নিয়ে এ হামলার পরিকল্পনা করেছে। হামলার দায় এড়াতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। দোষীদের বিচারের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।



আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিবার্তাকে বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি পৈশাচিক ঘটনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর এ ধরণের হামলা বিশ্বের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার জন্য গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই কাজটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বিএনপি সরকার। খুনিদের স্টেটমেন্ট থেকেই আজ তা প্রমাণিত হয়েছে।


তিনি বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। তারা এঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিল। নৃশংস এ ঘটনা ঘটার পরে হত্যাকারী যাতে পালিয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থাও তারা করেছে।


আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের পাঁচশর অধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। তাদেরকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল- বিএনপি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। আমি সংসদে ছিলাম- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন।


বিএনপি এ ঘটনার জন্য মাফ চেয়ে রাজনীতি করবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আগামীতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না হয় এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এখনো যেসব হামলাকারী বিদেশে পালিয়ে আছে সরকার তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।


এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বিবার্তাকে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল পৃথিবীর ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে বিরোধী দলের নেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সামরিক বাহিনীর গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। প্রশাসনকে ব্যবহার করে এ হামলা করা হয়েছিল। এর চেয়ে বড় জঘন্য কাজ আর হতে পারে না।


তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান হাওয়া ভবনে বসে মন্ত্রী পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও জঙ্গিদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা করেছে। উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সহায়তা দিয়ে হামলাটি সংঘটিত করা হয়েছিল। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পুরো বিশ্বের রাজনীতির অঙ্গণে এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা।


গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি সরকার মামলা করতে দেয়নি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, পরবর্তীতে এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গ্রেনেড হামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। সমস্ত আলামত ধ্বংস করেছিল। হতাহতদের চিকিৎসার করার ক্ষেত্রেও তারা অপারগতা প্রকাশ করেছে। এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে বক্তব্য দিয়ে আড়ালের চেষ্টা করেছিল।


তিনি বলেন, দেশবাসী চায় দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। যাতে করে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরণের ধৃষ্টতার সাহস না করতে পারে।


আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বিবার্তাকে বলেন, বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বোরচিত ঘটনা ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। যারা বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছিল, তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করে। পনের আগস্টের কুশীলবরা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই নারকীয় এ হামলা করা হয়েছিল।


তিনি বলেন, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মূল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। গ্রেনেড হামলার সেই ঘটনার ভয়াবহতা আমাদের হতবাক করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল।


আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সেদিন গ্রেনেড হামলা থেকে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। কিন্তু ঘাতকদের নিক্ষেপ করা গ্রেনেডে নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী। শেখ হাসিনা বেঁচে গিয়েছিলেন বলেই আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, আজকে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। তিনি আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যার এভাবে এগিয়ে যাওয়াকে এখনো মেনে নিতে পারছে না স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও একাত্তরের ঘাতকরা। ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে আবার মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com