বিশ্বের বৃহৎ শিল্পকর্ম নির্ভর জাদুঘরের মধ্যে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত দ্য লুভর অন্যতম।
জাদুঘর বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সারি সারি চিত্রকর্ম, প্রাচীন নিদর্শনের বিশাল সংগ্রহ, যা থেকে আন্দাজ করা যায় আমাদের বিশাল এই সভ্যতার ধাপে ধাপে হয়ে আসা বিবর্তনগুলো। জাদুঘরের কথা বললেই সবার আগে নাম আসবে যুক্তরাজ্য তথা ইংল্যান্ডের। জাদুঘরের শহর বলা হয়ে থাকে লন্ডনকে।
কিন্তু শিল্পকর্মের ক্বদর এর কথা উঠলে সেখানে ফ্রান্সের ধারে কাছে কেউ নেই। ফরাসীরা শিল্প প্রেমিক জাতি, তাদের রাস্তা ঘাট, অবকাঠামো, দৈনন্দিন জীবনের সব খানেই শৈল্পিক ছোয়া আছে। ইউরোপের শহরগুলোর কথা চিন্তা করলেই যেই ধরণের শৈল্পিক নান্দনিকতার ছবিগুলো ভেসে ওঠে, সেগুলোর সুতিকাগার কিন্তু ফ্রান্সই। দ্য লুভর।
খ্রিষ্টীয় ১২ শতকে প্যারিসের ফিলিপ অগাস্টিস দুর্গের ডান দিকে, এক বিশাল প্রাসাদে এই জাদুঘরের গোড়াপত্তন হয়। শুরুতে এটি একটি ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা ছিলো। ১৫৪৬ সালে ফ্রান্সিস প্রথম পুরোনো প্রাসাদটি নতুন করে তৈরী করার সময় ল্যুভ তথা তার সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়। এই কাজে তিনি ফরাসী আর্কিটেক্ট পিয়ের্যে লেসক কে নিয়োগ দেন। বর্তমান লুভ্যর দক্ষিণ পশ্চিম অংশটিই সেই প্রাচীন অংশ। এরপরবর্তীতে যারাই ক্ষমতায় এসেছেন তারাই এই সংগ্রহশালা সমৃদ্ধ করেছেন। ১৭’শ শতকে লুইস ত্রয়োদশ এবং লুইস চতুর্দশ বেশ বড় একটি সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করেন এতে এর আয়তন আরো বেড়ে যায়। লুইস ত্রয়োদশ এবং লুইস চতুর্দশের কার্ডিনাল তথা প্রধানমন্ত্রীগণ বিশাল শিল্পকর্মের ভান্ডার এতে যোগ করেন। এই সময়েই ল্যুভর প্রধান অংশ যেটার নাম “দ্য কলোনেড” সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৬৮২ সালে লুইস চতুর্দশ তার কোর্ট ভার্সাই নগরে সরিয়ে নিয়ে গেলে, ল্যুভ আর রাজপ্রাসাদ থাকে না। এর একশতক পরে গিয়ে ল্যুভ পাবলিক জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়। তার মাঝের সময়ে ল্যভর গ্রান্ড গ্যালারী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আরো শিল্পকর্ম তার ভান্ডারে যুক্ত হয়। ১৭৯৩ সালে গ্রান্ড গ্যালারী জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। এরপর বিশ্বজয়ী নেপোলিয়ন সাহেব ক্ষমতায় আসেন। তার সময়েই “ক্যুয়র ক্যারি” এবং দক্ষিণ দিকে “রুই ডী রিভ্যয়” অংশটির কাজ শুরু হয়। ১৯ শতকে পশ্চিম দিকের গ্যালারী এবং প্যাভিলয়ন বর্ধিত হয়। “নেপোলিয়ন তৃতীয়” সেটিকে সম্পূর্ণ জন সাধারণেরর জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
অর্থাৎ, জাদুঘর হিসেবে এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ১৭৯৩ সালের ৮ নভেম্বর। লুভরে ১ লাখ ৯৫ হাজার বর্গমিটার জায়গা আছে। এর মধ্যে প্রদর্শনীর জন্য বরাদ্দ ৬০ হাজার ৬০০ বর্গমিটার।
মোট সংগৃহীত নিদর্শনের পরিমাণ ৪ কোটি ৮০ লাখ! সেগুলো বয়ে বেড়াচ্ছে মানব সভ্যতার ১১ হাজার বছরের চিহ্ন। মেসোপটেমীয় আর্ট থেকে, মুঘল তথা মুসলিম সাম্রাজ্য এর নিদর্শন। অনিন্দ্য সুন্দরী মোনালিসা থেকে ব্রিটেনের রাজার চিত্রকর্ম। ফার্নিচার, ফসিল কি নেই সেখানে!
২০১৭ সালে সেখানে গিয়েছিলেন ৮৬ লাখ দর্শনার্থী। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। একসময় এটি ছিল ফরাসি রাজাদের প্রাচীন দুর্গ। ১১৯০ খ্রিস্টাব্দে রাজা ফিলিপ অগাস্টাস এই ভবন গড়ে তোলুভর।
প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু ইসলামি শিল্প, সবই আছে সেখানে। বিশ্বের খ্যাতিমান বেশিরভাগ চিত্রকরের আঁকা হাজারেরও বেশি সৃষ্টিকর্ম আছে লুভরে। সেখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত হলো লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’।
বর্তমানে লুভ্র জাদুঘরের সংগ্রহটি ৮টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলি হল প্রাচীন মিশরীয় শিল্পবস্তুসমূহ, নিকট প্রাচ্যের শিল্পবস্তুসমূহ, গ্রিক শিল্পকলা, এত্রুস্কান শিল্পকলা, রোমান শিল্পবস্তুসমূহ, ইসলামী শিল্পকলা, ভাস্কর্য, আলঙ্কারিক শিল্পকলা, চিত্রকর্মসমূহ, ছাপশিল্প ও অঙ্কন।
এই জাদুঘর সভ্যতার ইতিহাস জানানোর পাশাপাশি নির্মাণশৈলীতেমুগ্ধ করে ভ্রমণপ্রেমীদের। তাহলে, ঘুরে আসতেই পারেন 'দ্য লুভর' মিউজিয়ামে।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]