চট্টগ্রামের মিরসরাই ভ্রমণে বাড়তি সতর্কতা
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০৯:০৮
চট্টগ্রামের মিরসরাই ভ্রমণে বাড়তি সতর্কতা
পর্যটন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মোহনা, পূর্বে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থান চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা। এই জনপদে রয়েছে প্রকৃতির নান্দনিকতা। উত্তরের মুহুরি নদীতে অতিথি পাখির আগমন প্রকৃতির পালাবদল। তাই অবসর কাটাতে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের ভ্রমণ হোক প্রকৃতির হাতছানি সৌন্দর্যের জনপদ মিরসরাইয়ে। 


এখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও সেচ প্রকল্প। দেশের ষষ্ঠ সেচ ও প্রথম বিদ্যুৎ প্রকল্প মুহুরি প্রজেক্ট আট স্তর বিশিষ্ট জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝরনা ও বাওয়াছড়া প্রকল্প।


লেক, পাহাড় ও ঝরনা যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য মিরসরাই পর্যটন স্পটগুলো যথার্থ। কোলাহল ছেড়ে একদিনের জন্য ঘুরে আসুন পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে।


মহামায়া কৃত্রিম লেক। এটি একটি সেচ প্রকল্প। রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের পরে বাংলাদেশের অন্যতম লেক মহামায়া। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রবেশদ্বার মিরসরাই উপজেলার আট নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। মহামায়া প্রকল্পে রয়েছে লেক, পাহাড়, ঝরনা ও রাবার ড্যাম। মহামায়া লেকের আয়তন প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার।


পাহাড়ের কোলে লেকটির আঁকাবাঁকা অবয়ব অপরূপ সুন্দর। ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই লেক। লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি ঝরনা ও স্বচ্ছ পানি। মহামায়া লেকের নীল জলরাশিতে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা দেখতে পাবেন। সে নৌকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঘোরা যায়। এছাড়াও এডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের জন্য রয়েছে কায়াকিং। নৌকাতে বসে মহামায়া লেকের চারপাশের পাহাড় ও বিশাল জলরাশি আপনাদের মুগ্ধ করে তুলবে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে তখন লেকের পরিবেশটি খুবই চমৎকার লাগে। তাঁবু টানিয়ে লেকের উপর অবস্থান করতে পারবেন রাতে। আপনাকে মুগ্ধ করবে রাতের পরিবেশ।


মিরসরাই উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর বাওয়াছড়া পাহাড়িয়া এলাকায় যুগ যুগ ধরে এ ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ স্থানে ছুটে আসেন শত শত পর্যটক।


প্রকৃতির আরেক নিদর্শন মুহুরি নদী। যেখানে আছে আলো-আঁধারির খেলা। এখানে এলে দেখবেন জীবন-জীবিকার বিভিন্ন চিত্র। এর আশেপাশে রয়েছে ছোট ছোট অনেক প্রকল্প। নদীর এপারে মিরসরাই, ওপারে ফেনী। ৪০ দরজার রেগুলেটরের শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে। পশ্চিমে মৎস্য আহরণের খেলা, আর পূর্বে মন কাড়া প্রকৃতি। নৌকায় ভর করে কিছু দূর যেতেই দেখা মিলবে সাদা বক।


ভ্রমণপিপাসু মানুষদের জন্য অন্যতম স্থান হলো খৈয়াছড়া ঝরনা। ইতোমধ্যে এটি বাংলাদেশ জুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। সবুজের চাদরে ঢাকা, প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুমঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তোলে।


সতর্কতা


মনোরম পাহাড়ি ঝরনা ও গিরিখাতের জন্য দেশের পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের মিরসরাই। তবে ঝরনা ও গিরিখাত দেখতে এসে পর্যটকদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।


গত দেড় মাসে মিরসরাইয়ের দুটি পর্যটন এলাকার গহিন জঙ্গলে ৩টি দলের ১৫ জন পর্যটক হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের সবাইকে উদ্ধার করা গেলেও এসব ঘটনায় চিন্তিত বন বিভাগ, ইজারাদার ও পুলিশ।


মিরসরাইয়ে পর্যটক হারিয়ে যাওয়ার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ২৭ এপ্রিল খৈয়াছড়া ঝরনায়। ঢাকা থেকে আসা পাঁচ পর্যটক ঝরনার ওপরে উঠে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দিক ভুল করে হারিয়ে যান বনের গভীরে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) খবর পেয়ে রাত সাড়ে নয়টায় তাদের উদ্ধার করে মিরসরাই থানার পুলিশ।


ঘুরতে এসে কেন বারবার পর্যটকেরা হারিয়ে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, পর্যটকদের অজ্ঞতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে যত বিপদ ঘটছে। ঝরনাগুলোয় ইজাদারদের মাধ্যমে গাইড সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকেরা গাইড ছাড়াই অচেনা জায়গাগুলোয় ঘুরতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন।


মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ এলাকার খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, সহস্রধারা, লবণাক্ষ, সোনাইছড়ি, বাওয়াছড়া ও রূপসী ঝরনা—এ সাত পর্যটনস্থান ইজারা দেওয়া আছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়। সম্প্রতি জোরারগঞ্জ রেঞ্জের আওতায় মেলখুম গিরিখাতটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এখনো সেটি সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়নি। ফলে, এ স্থানে নেই বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থাপনা।


বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের সব কটি ঝরনা ও গিরিখাতের ইজারা পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএইচ এন্টারপ্রাইজ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হাসান বলেন, ‘ঝরনা এলাকাগুলোয় সতর্কবার্তা–সংবলিত ব্যানার ও সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। কিন্তু পর্যটকেরা কোনো নিয়ম মানেন না। আমরা সবাইকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে ঝরনা এলাকা ত্যাগ করতে বললেও অনেকে সন্ধ্যা করে ফিরতে গিয়ে বিপদে পড়েন। এলাকাগুলোয় ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো।’


এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন  বলেন, মেলকুম ট্রেইলের ব্যবস্থাপনায় কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এটিকে যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। আর যত দিন এ ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, তত দিন ট্রেইলে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখা হবে।


কীভাবে যাবেন


ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার অনেক বাস আছে। ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল, আরামবাগ, সায়েদাবাদ থেকে এসি, ননএসি যে কোনও বাসে সরাসরি ঠাকুরদীঘি বাজার অথবা মিরসরাই বাজারে নামবেন। মিরসরাই বাজার থেকে লেগুনা অথবা বাসে উত্তর দিকে এসে ঠাকুরদীঘি বাজারে নামবেন। সেখান থেকে সিএনজি-অটোরিকশায় পূর্ব দিকে মহামায়া লেকে যেতে পারবেন। চট্টগ্রামের একে খান থেকে মিরসরাই আসার চয়েস বাস, উত্তরা অথবা ফেনীর বাসে এসে সরাসরি ঠাকুরদীঘি বাজারে নামবেন। লেকের পানিতে অপচনশীল বা বোতলজাত দ্রব্য ফেলবেন না।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com