কুম্ভলগড়ে, দুর্গ ও প্রাসাদে ইতিহাসের খোঁজ
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২০
কুম্ভলগড়ে, দুর্গ ও প্রাসাদে ইতিহাসের খোঁজ
পর্যটন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের রাজস্থান ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেন কমবেশি সবাই। রাজস্থানের নিজস্ব একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে, যা পর্যটককে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এখানকার দুর্গ ও প্রাসাদ পর্যটকদের অনেক আকর্ষণ করে।


জয়পুর থেকে জয়সলমীর পর্যন্ত আমের দুর্গ মানুষের কাছে খুব বিখ্যাত হলেও তার মধ্যে কুম্ভলগড় দুর্গের আলাদা গুরুত্ব আছে। এই দুর্গের বিশেষত্ব হলো এর ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীর।


এটি রাজস্থানের পাহাড়ি ঝরনার অন্তর্ভুক্ত একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। ১৫ শতকে রানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত এই দুর্গ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীরের মর্যাদা পেয়েছে।


বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই প্রাচীরকে। চীনের মহাপ্রাচীরের কথা তো কমবেশি সবাই শুনেছেন, ঠিক তেমনই কুম্ভলগড়কে বলা হয় ভারতের গ্রেট ওয়াল।


উদয়পুর বন থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত, কুম্ভলগড় ফোর্ট হলো রাজস্থানের চিত্তোরগড় ফোর্টের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্গ।


আরাবল্লী রেঞ্জে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০ মিটার (৩,৬০০ ফুট) উপরে একটি পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত, কুম্ভলগড় দুর্গের ঘের দেওয়াল আছে, যা ৩৬ কিলোমিটার (২২ মাইল) বিস্তৃত ও ১৫ ফুট চওড়া, যা এটিকে বিশ্বের দীর্ঘতমগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে।


২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৩৭ তম অধিবেশনে দুর্গটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়।


কুম্ভলগড় দুর্গের কাঠামো


৭টি বিশাল দরজা দিয়ে দুর্গটি নির্মিত। এই বিশাল দুর্গের ভিতরের প্রধান ভবনগুলো হলো বাদল মহল, শিব মন্দির, বেদি মন্দির, নীলকান্ত মহাদেব মন্দির ও মমদেব মন্দির। কুম্ভলগড় দুর্গ কমপ্লেক্সে প্রায় ৩৬০টি মন্দির আছে, যার মধ্যে ৩০০টি জৈন মন্দির ও বাকিগুলো হিন্দু।


এই দুর্গে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে একটি খাড়া র্যাম্পের মতো পথ (১ কিলোমিটারের একটু বেশি) আরোহণ করতে হবে। দুর্গের ভেতরে নির্মিত কক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগ আছে, যার বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে।


প্রতি সন্ধ্যায় একটি লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয় এই দুর্গে। যা শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে। ৪৫ মিনিটের এই লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে দর্শনার্থীদের।


যা দুর্গের ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে। এই শো উপভোগ করতে চাইলে প্রাপ্তবয়স্কদের ১০০ টাকা ও শিশুদের ৫০ টাকা গুনতে হবে।


কেল্লাকে আলোকিত করতে সন্ধ্যায় বিশাল বাতি জ্বালানো হয়। এতে প্রায় ১০০ কেজি তুলা ও ৫০ লিটার ঘি ব্যবহার করা হয়। প্রতি রাতে কেল্লার উঠানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়।


কুম্ভলগড় দুর্গের প্রাচীর নির্মাণের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অত্যন্ত রহস্যময় গল্প আছে। কথিত আছে, ১৪৪৩ সালে যখন মহারানা কুম্ভের নির্মাণ শুরু হয়েছিল, তখন অনেক বাধা আসতে শুরু করে। এতে চিন্তিত হয়ে রানা কুম্ভ একজন সাধুকে ডেকে তার সমস্ত কষ্টের কথা জানালেন।


সাধক বলেছিলেন, প্রাচীর নির্মাণ তখনই এগিয়ে যাবে যখন একজন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আত্মত্যাগ করবেন। এ কথা শুনে রানা কুম্ভ আবার চিন্তিত হয়ে পড়লেন, তবে তখন আর একজন সাধু বললেন যে তিনি এর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।


তিনি বলেন, পাহাড়ে হেঁটে যাবেন ও যেখানে তিনি থাকবেন সেখানে তাকে বলি দিতে হবে। সাধু পাহাড়ের একটি জায়গায় থামলেন, যেখানে তাকে হত্যা করা হয়েছিল ও এইভাবে প্রাচীরের নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছিল।


নীলকান্ত মহাদেব নামে পরিচিত দুর্গের ভেতরে শিব মন্দিরে প্রায় ৫ ফুট উচ্চতার একটি বিশাল শিবলিঙ্গ আছে। কথিত আছে, মহারানা কুম্ভের শরীর এতোটাই বিশাল ছিল যে, তিনি যখন শিবলিঙ্গের ‘অভিষেক’ করতেন, তখন শিবলিঙ্গের উচ্চতা পর্যন্ত বসে দুধ নিবেদন করতেন।


কুম্ভলগড় দুর্গ হলো মেওয়ারের মহান যোদ্ধা বাহাদুর মহারানা প্রতাপের জন্মস্থান, যিনি কখনো পরাক্রমশালী মুঘলদের সামনে মাথা নত করেননি। দুর্গের চূড়া থেকে কুম্ভলগড় দুর্গের সামনে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড়ের স্তর দেখতে পাবেন।


কীভাবে পৌঁছাবেন?


কুম্বলগড় সড়কপথে উদয়পুর থেকে ৮২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ক্যাবে করে সেখানে পৌঁছাতে প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে, এছাড়া আপনি ভাড়ায় একটি গাড়িও নিতে পারেন।


গাড়ি ভাড়া পড়বে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা। উদয়পুর থেকে কুম্ভলগড় পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লাগে।


দুর্গে প্রবেশের টিকিটের মূল্য ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ৪০ রুপি ও বিদেশিদের ৬০০ রুপি। পার্কিংয়ের জন্য কোনো খরচ লাগবে না।


বিবার্তা/এসবি


 

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com